প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের খোলা চিঠি

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী.
আসসালামু আলাইকুম।

আপনি শুধু দেশের প্রধানমন্ত্রীই নন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের আস্থা ও বিশ্বাসের স্থান। আপনি চাইলেই একজন অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার সন্ত্রাসি কায়দায় জমি জবর দখলকারি চক্রের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বকর ছিদ্দিক বিডিআরে চাকুরিরত থাকা অবস্থায় কিছু জমি ক্রয় করেন। চাকুরিকালীন সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকতেন, খুব বেশি বাড়ি আসতে পারতেন না। এই সুযোগে নিজের নামে ক্রয় করা জায়গায় ভাইয়েরা গৃহনির্মাণ করে থাকতে থাকেন। উনি ছুটিতে আসলে ওনার জমিতে কেন গৃহনির্মাণ করেছে- জি্েজ্ঞস করা হলে তারা জানাতেন ‘সময় হলে উঠে যাবেন’। তাতে আমার বাবা কোন আপত্তি করেননি।

২০০৪ সালে তিনি সীমান্তরক্ষী বাহিনী থেকে অবসরে আসেন। অবসরে আসার পর জমির হিসাব চাইলে শুরু হয় সমস্যা! ওনার অন্যান্য তফশিলভূক্ত জমিতে যেতেও বাধা দিতে শুরু করেন তারা। এসব নিয়ে বিভিন্ন ঝামেলা চলতেই থাকে। আমার বাবা ও আমাদের পরিবারের উপরও সন্ত্রাসী হামলা চালায়।

এসব সমস্যা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও কেউ কোন সাহায্য তো করেইনি, বরং হামলাকারিদেরই আরো ক্ষিপ্ত করে তুলেন!

এভাবে দিনের পর দিন আমার চাচার ছেলেরা পথে ঘাটে রাস্তায় বাজারে আমার বাবাকে প্রচন্ড রকম অপমান করে। এভাবে চলতেই থাকে।

এদিকে আমার বাবা কিছু জমি মেয়েদের নামে লিখে দিলে পড়ে ওনার ভাইয়েরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন। তারা আমার বাবার কেনা সম্পত্তি থেকে তাদের ‘পৈতৃক সম্পত্তি পাবে’ মর্মে আমাদের জমি জবর দখলে নামে। আমার বাবা কোন উপায় না দেখে মামলা করেন। এ জন্যও আমার বাবা ও আমার বোনদের চরম অসম্মান ও অপমান করে। মেয়েরাও প্রশাসনের দ্বারস্থ হলে কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।

২০২১ সালের ৬ জুন হঠাৎ আমার বাবার মৃত্যু হলে আমরা মেয়েরা বাবার পৈত্রিক ও বাবার কেনা জমিতে গেলে আমার চাচা ও তাদের ছেলেরা মারামারি করার জন্য আমাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। তারা প্রচন্ড রকম গালিগালাজ করে। আমরা বাধ্য হয়ে ওই জমি থেকে সরে আসি।

তারা আমাদের জমিতে যাওয়ার তফসিলি পথও আটকে রেখেছে। কেউ কেউ আমাদের জমিতে ঝুপড়ি ঘর তুলে জবর দখল করে রেখেছে। সম্প্রতি তারা সবাই মিলে আরেক ভাইকে জোর করে বাউন্ডারি দেয়াল করে দিচ্ছে, যদিও ওই জমি নিয়ে আদালতে আপীল চলমান রয়েছে।

আমার মা ও আমার বোনেরা নিরূপায় হয়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে সহযোগিতার জন্য যাই। কিন্তু কেউ সাহায্য তো করেইনি, এমনকি সরেজমিন দেখার জন্যও কেউ আসেনি।

কীভাবে আসবে! আমার বাবার এক ভাইয়ের ছেলে যে নব্য কোটিপতি! সে-ই সবকিছু মেনেজ করবেন বলে হম্বিতম্বি করছে।

এখন তারা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে অসম্মান করছে। প্রতিনিয়ত অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। পথে-ঘাটে আমার বিধবা মাকে টিককারি মারছে। স্থানীয় মুরব্বিরাও কেউ তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলে না।

এবার পুলিশের কথায় আসি। পুলিশের সহযোগিতাও আমরা চেয়েছি। কিন্তু পুলিশ কী সহযোগিতা করবে- যেখানে পুলিশের এসআই নুরুল আমিন কাগজপত্র না দেখেই বলে দিয়েছেন- এই জমি আমাদের নয়! আরেক এসআই বিকাশ চন্দ্র সিং এসে বলেন- ‘আপনাদের নিচে যাওয়ার দরকার কী! আপনাদের রাস্তার প্রয়োজন নাই’!

বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানালে তিনিও দেখবেন বলে আর কোন খবর নেননি।

আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কর ছিদ্দিকের সন্তানরা এখন চরম উদ্বিগ্ন, ভীত-সন্ত্রস্ত। কখন না জানি আমাদের বাবার দলিল ও খতিয়ানভূক্ত সব জমি কেড়ে নেয় তারা।

আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। একজন তালিকাভূক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার হয়েও আমরা কোন সাহায্য পাচ্ছি না। যেন অদৃশ্য এক শক্তির বেড়াজালে আচ্ছন্ন হয়ে আছে সাহায্যের দ্বার।

আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফরিয়াদ জানাই, কেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে অসহায় ও নিরাপত্তাহীনতায় থাকবে।

আমাদের একমাত্র ভাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিলেও থানায় জিডি করতে গিয়েও তারা জিজি নেয়নি। এভাবেই কী নিগ্রহের শিকার হবে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার।

আপনার পরম বিশ্বস্থ
হোসনে আরা হিদ্দিকা মুন
মালভিটা, রাজাপালং, উখিয়া, কক্সবাজার।


শেয়ার করুন