প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় রোহিঙ্গারা

কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে অপেক্ষমাণ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা।

নিউজ ডেস্ক :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি একবারে খালি হাতে আসবেন? নিশ্চয়ই কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শোনাবেন তিনি—এ আশায় আছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা হাজারো রোহিঙ্গা। আজ সোমবার কয়েকটি রোহিঙ্গা শিবিরের কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে তাঁদের এ আশার কথা জানা গেছে।

জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপেক্ষায় আছেন। কাল মঙ্গলবার শেখ হাসিনা কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের কথা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবেন। রোহিঙ্গাদের অনেকে আশা করছেন, শেখ হাসিনাকে কাছে পেলে তাঁরাও দুঃখের কথা তুলে ধরতে পারবেন। আশ্রয় দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে পারবেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছে সেখান থেকে হেলিকপ্টারে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন।

আজ সকালে উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালং এলাকার পৃথক তিনটি অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আসার বিষয়টি রোহিঙ্গাদের মধ্যে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ তাঁকে কাছ থেকে দেখার আগ্রহের কথা জানান। তাঁদের জন্য কী আনবেন, কী ঘোষণা দেবেন, মিয়ানমারে ফেরত পাঠাবেন কি না—এসব প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করছেন তাঁরা।

বালুখালীর অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে (পাহাড়ে) শাহাব উদ্দিন (৪৬) নিজের পরিচয়পত্র ‘এনভিসি’ (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) দেখিয়ে বলেন, রোহিঙ্গারা ‘বাঙালি’ না। তাঁরা সাবেক আরাকান রাজ্যের (বর্তমান রাখাইন রাজ্য) আদিবাসী। একসময় রোহিঙ্গারা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। রোহিঙ্গা নেতারা এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। রোহিঙ্গারা সুচির মুক্তির জন্য বহু আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। অথচ সেই সুচির সরকার বলছে রোহিঙ্গারা নাকি ‘বাঙালি’! মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা উ থাউং তুন বলেছেন, রাখাইন রাজ্য থেকে যাঁরা পালিয়ে বাংলাদেশ ঢুকেছে, নাগরিকত্ব প্রমাণ ছাড়া তাঁদের মিয়ানমারে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তাহলে কি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশেই থেকে যাবে? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁদের জন্য কী বলবেন, তা শোনার অপেক্ষায় আছেন তিনি।

বালুখালী বাজারের একপাশে জড়ো হয়েছে ২৩ জনের একটি রোহিঙ্গা দল। এর মধ্যে ১২ জন শিশু, পাঁচজন নারী। গত শনিবার রাতে তাঁরা নৌকায় টেকনাফ আসেন। সেখান থেকে বাসে আসেন টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত শিবিরে। জায়গা না থাকায় আজ সোমবার সকালে আসেন বালুখালী অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে। এখন কুতুপালং শিবিরের দিকে যেতে গাড়ির অপেক্ষায় বসে আছেন। কিন্তু সড়কজুড়ে অনেক রোহিঙ্গা থাকায় কুতুপালং যেতে গাড়ি পাচ্ছেন না। কেন সেখানে যেতে চাইছেন, তা জানতে চাইলে ওই দলের নুরুল ইসলাম (৫৫) বলেন, কাল শেখ হাসিনা কুতুপালং আসছেন। তাঁকে দেখতে চাই। তিনি তো একেবারে খালি হাতে আসবেন না।

ওই দলের রহিমা বেগম (৪৫) বলেন, পাঁচ দিন আগে সেনাসদস্যরা গুলি করে তাঁর স্বামী আনোয়ার কামালকে হত্যা করেছে। দুই ছেলেকে জঙ্গলে নিয়ে জবাই করেছে। তিনি পালাতে পেরেছেন। এখন কোথায় যাবেন?

সাইফুল আলম বলেন, শুনেছি, রোহিঙ্গাদের রাখার জন্য বালুখালীতে একটি ক্যাম্প হচ্ছে। সেখানে নাকি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আসছেন। তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আশ্রয় দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা।

উখিয়ায় বাংলাদেশ টেলিভিশন সম্প্রচার উপকেন্দ্রের পাশে রাবারবাগানে কয়েক দিন ধরে পড়ে আছেন ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। সেখানেও ছড়িয়েছে আলোচনা। সেখানে অনেকেই আশা করছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁদের দেখতে এলে রোহিঙ্গারা সহযোগিতা পাবেন।

আজ সোমবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ইতিমধ্যে তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। আরও অনেক রোহিঙ্গা সীমান্তে অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে। আগে থেকে কক্সবাজারে বসতি করছে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। মোট সাত-আট লাখ রোহিঙ্গার ভারে স্থানীয় বাসিন্দারা হিমশিম খাচ্ছেন, তাঁদেরও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।


শেয়ার করুন