প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলেই পদত্যাগ: এরশাদ

বিরোধী দলে থেকেও জাতীয় পার্টির নেতাদের মন্ত্রিসভায় থাকাকে ‘লজ্জাজনক’ হিসেবে বর্ণনা করে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলেই’ তারা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করবেন।

ঢাকার বনানীতে বৃহস্পতিবার পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ।

তার দলের নেতারা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করছেন কি না জানতে চাইলে এরশাদ বলেন, “আমরাই বিরোধী দল। যদিও আমরা সরকারে আছি, আমাদের তিনজন মন্ত্রী ক্ষমতায় আছে… এটা আমাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার।

“আশা করি এই লজ্জার হাত থেকে একদিন আমরা মুক্তি পাব।”

জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রী।

এছাড়া মুজিবুল হক চুন্নু শ্রম মন্ত্রণালয় এবং মশিউর রহমান রাঙ্গা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মান্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন।

বিএনপিবিহীন দশম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। আর এরশাদ নিজে আছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বে।

এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেবেন কি না – এমন প্রশ্নে এরশাদ বলেন, “আমাদের সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে। আমি উনাকে (প্রধানমন্ত্রী) এ বিষয়ে বলেছি। কথা হচ্ছে- উনি ( প্রধানমন্ত্রী) আমাকে এই পদটা দিয়েছেন, সম্মান দিয়েছেন। উনার সাথে আলোচনা না করে আমি উনাকে অসম্মান করতে চাই না। একটা সম্মানের ব্যাপার আছে।”

কবে নাগাদ পদত্যাগ করতে পারেন- এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “পদত্যাগ হবে। তোমরা জানো তো….সবই জানো। একটা অনুমতির দরকার আছে। আশা করি কিছুদিনের মধ্যে পাব।”

বুধবার রাতে বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাড়িতে যে বৈঠক হয়, সেখানে জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান জি এম কাদেরেরে উপস্থিতি নিয়েও এরশাদকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।

জবাবে এরশাদ বলেন, “সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাহেবকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইফতারের দাওয়াত করেছিলেন, তার অর্থ তিনি সরকারের বিরুদ্ধে নন; না হলে আর কাউকে তো তিনি আমন্ত্রণ করেননি। সেই অনুষ্ঠানে তিনি আমার পাশে বসেছিলেন। এর মধ্যে দিয়ে কি প্রতীয়মান হয় না যে তিনি মিত্রবাহিনীতে আছেন?”

বিকল্পধারা বাংলাদেশের সঙ্গে জাতীয় পার্টির জোট করার কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কী না- এ প্রশ্নে এরশাদের পাশে বসা জিএম কাদের বলেন, “আমরা বরাবরই বলে আসছি, আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে আমরা একটি পৃথক রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। গতকাল একটি বৈঠক ছিল, সেখানে রাজনৈতিক ব্যাক্তিরা ছিলেন। কিছু রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে- তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মত কথা সেখানে হয়নি।

“এখন এ বিষয়ে প্রেসিডিয়াম ফোরামে আলোচনা হবে- আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হবে- জোট হবে কি না।”

সংবাদ সম্মেলনে দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে সাবেক সামরিক শাসক এরশাদ বলেন, “দেশে এখন মহাক্রান্তিকাল; ক্ষমতার তুফান বইছে।

“বগুড়ায় সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটল… পত্রপত্রিকা খুললেই দেখা যায় নারীর প্রতি সহিংসতার মহোৎসব চলছে। বাংলাদেশ নারীদের জন্য অভিশপ্ত হয়ে উঠছে। এর কারণ বিচারহীনতা।”

পাহাড়ধসে কত মানুষ মারা গেছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছে নেই মন্তব্য করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ বলেন, “পাহাড় সরকারি সম্পত্তি। এই পাহাড় যারা কাটল, তাদের সরকার দেখল না কেন? অষ্টআশির বন্যায় কেউ অনাহারে মারা যায়নি। আর এখন ৫০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি হচ্ছে। ১০ টাকা কেজি চালের কথা শুনেছিলাম। সেই চাল নিয়ে কী চালবাজি হয়েছে তা সবাই জানেন। সুশাসন আজ সঙ্কটে।”

অন্যদের মধ্যে জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অবসরপ্রাপ্ত মেজর খালেদ আক্তার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ।


শেয়ার করুন