বিদ্যুৎ বিভাগের

প্রকৌশলীর দুর্নীতি’র কারণে আন্দোনের ডাক দিয়েছে ক্ষুব্ধ জনতা

trancfarmar photoএম.বশিরুল আলম, লামা :
লামা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের অন্তহীন অনিয়ম-দুর্নীতি ও বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিলের কারণে পার্বত্য লামা-আলীকদম ও চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়িসহ মানিকপুর-সুরাজপুর এলাকার শতশত বিদ্যুতের গ্রাহক চরম আর্থিক হয়রানীর শিকার হচ্ছে। লামা বিদ্যুত সরবরাহ কেন্দ্রে মিটার রিডার নেই। মাসের পর মাস মিটার চেক না করেই আবাসিক প্রকৌশলী তার খেয়ালখুশিমত গ্রাহকদেরকে বিদ্যুৎ বিল ইস্যু করছে। দুর্নীতিবাজ বিদ্যুৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে দীর্ঘকাল ধরে এই এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। কোন প্রকার প্রতিবাদ করলে বিদ্যূতের সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণসহ গ্রাহকদেরকে নানা হয়রানী করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় জেনারেটর ব্যবসায়ীদের সাথে মাসিক হাজার টাকা কন্টাকে লোডশোডিং এর নাম করে প্রতিদিন সন্ধার পর বিদ্যুত বন্ধ করে দেয়। শতাদিক অবৈধ সংযোগ দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে লামা বিদ্যুত বিভাগ। বিদ্যুত লাইন সংস্কার ও গাছগাছালী কাটার নামে ভুয়া খরচ দেখিয়ে প্রচুর টাকা আস্মসাত করার অভিযোগও রয়েছে আবাসিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।
সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও টমটম- অটোরিক্সা গ্যারেজে বিদ্যুত সংযোগ দিয়ে অবৈধ পনস্থায় লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। লামা আবাসিক প্রকৌশলী এম নজির আহমেদ মাসে ২০ দিন কর্মস্থলে অনপুস্থিত থাকায় সরকারের গুরুত্বপূর্ন এই বিভাগটি একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর হয়েছে। বিদ্যুত গ্রাহকদেরকে সরকার বিরোধী করে তুলতে অকারণে বিদ্যুত বন্ধ রেখে গন সেন্টিমেন্ট সৃষ্টি করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন আবাসিক প্রকৌশলী এম নজির আহমেদ। মোটাংকের টাকা নিয়ে অনেক বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে আবাসিক মিটার ও মৌসুমে সেচ প্রকল্পের বিপরিতে ভুর্তকীর বিদ্যুত ব্যবহার দেখিয়ে তামাক চাষীদের থেকে লাখ লাখ টাকা নিজের পকেটস্থ করে। নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে একটি আবাসিক মিটারে মুল্য বাবদ ৫ হাজার টাকা ও সংযোগ দিতে ২ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে আবাসিক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। মিটার বিহীন নতুন সংযোগ দিয়ে ৬ মাস কোন বিল করেনা। ৬ মাস পর মিটার লাগিয়ে দিয়ে পূর্বের ৬ মাসের মৌখিক বিল আদায় করে নিজেদের আখের গোছায়। উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভা বা সরকারি কোন সভা সমাবেশে যোগ দেন না এই আবাসিক প্রকৌশলী। ফলে বিদ্যুত সংক্রান্ত বিষয়ে অন্ধকারে রয়েছে খোদ উপজেলা প্রশাসন। বিদ্যুৎ নিয়ে ক্ষুব্দ জনতার অনেক সমস্যা নিরসনার্থে প্রশ্নের জবাব মিলছেনা সরকারের কোন প্রশাসনের কাছ থেকে। এসব অনিয়ম দুর্নীতির অন্তরালে রয়েছে আবাসিক প্রকৌশলী এম নজির আহমেদ-এর সক্রীয় ভুমিকা। বছরে কয়েকবার ট্রান্সফার্মার ওয়েল ক্রয় দিখেয়ে প্রচুর টাকা আস্মসাত করা হলেও প্রতিষ্টা কাল থেকে ওয়েল পরিবর্তন না করায় অনেক ট্রন্সফার্মার বিস্ফোরণ ঘটেছে। সম্প্রতি পৌর এলাকার চাম্পাতলীতে বিদ্যুতের মুল লাইনে শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নি সংযোগ ঘটলে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিষন্ত্রে আনেন। এছাড়া বমুবিল বিলছড়ি এলাকায় ৪৪০ লাইনের ছিন্ন তারে জড়িয়ে ৮ বছর বযসের এক শিশু মারা যায়। স্থানীয়রা জানান, বিদ্যুতের তার ছিড়ে ৩ দিন ধরে মাটিতে পড়ে থাকার বিষয়টি আবাসিক প্রকৌশলীকে জানানোর পরেও কোন ব্যবস্থা নেননি তিনি। এর ফলে একশিশু মৃত্যু ছাড়াও কৃষকের অনেক গবাদি পশুর ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে ভূক্তভোগী বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জানান, লামা-আলীকদম উপজেলার বিদুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হয় লামা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র থেকে। এ অফিসের মিটার রিডার নেই, আবাসিক প্রকৌশলীর অনুগত্য কাউকে দিয়ে রিডিং কাজ করান বিদ্যুৎ অফিসে বসেই। বছরে একবারও মিটার পরিদর্শন করে রিডিং করেন না। প্রতিমাসে মিটারের ইউনিট তদন্ত করেই বিদ্যুৎ বিল ইস্যু করার বিধান রয়েছে। মাসের পর মাস গ্রাহকদের নামে ভূয়া ও মনগড়া বিল ইস্যু করে চলছে। কতিপয় ভাড়াটিয়া লোকজন দিয়ে মনগড়া ও অমূলক বিদ্যুৎ বিল তৈরী করে থাকেন লামা বিদ্যুত অফিস। এর ফলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের বোঝা নিয়ে সাধারণ বিদ্যুত গ্রাহকরা আর্থিক হয়রানি হচ্ছে। অনেক গ্রাহক তাদের বাসা বাড়ী ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুতের লাইন সংযোগ দিয়ে যেন মহা বিপাকে পড়েছেন।
এলাকার কয়েকজন বিদ্যুৎ গ্রাহক আরো জানান, মিটার রিডারকালে বিভিন্ন বাহানায় তাদের কাছ থেকে উৎকোচ দাবী করে থাকে। অন্যথায় ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল অব্যাহতভাবেই চলবে উল্টো ধমক দিয়ে থাকেন। জানা গেছে, মিটার রিডিং এর প্রদত্ত ভুতুড়ে বিল খেটে খাওয়া অনেকের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব হয়না। ফলে বিলের বোঝা মাথায় নিয়ে গ্রাহকরা বিল পরিশোধে দেরী করলে করিৎকর্মা বিদ্যুতের স্টাফগণ পূর্ব সতর্ক না করে লাইন কেটে দিয়ে ‘ক্ষমতার দাপট’ দেখিয়ে থাকেন। সবাই যেন তাদের কাছে জিম্মি। কারণে অকারণে রোডশোডিংসহ বিরুক্তিকর এসব আচরণে সরকারি বিদ্যুত ব্যবহারে আগ্রহ হারিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আবেদনও করেছে অনেক গ্রাহক । স্থানীয় সূত্র জানান, লামা বিদ্যুত বিভাগে চাকুরী করে অনেকে কোটি টাকার মালিক বনেছে। এদর মধ্যে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী আবদুল ওহাব নামের একজন রয়েছে। বিদ্যুত ব্যবস্থার উন্নয়নের চেয়ে এ বিভাগে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন প্রাধান্য পাচ্ছে এ বিভাগে কর্মরতদের।
সুত্রে প্রকাশ, আবাসিক প্রকৌশলীর খামখেয়ালীপনায় লামা বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রটি কার্যতঃ একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। লামা-আলীকদম উপজেলার জন্য অত্যান্ত জনগুরুত্ব প্রতিষ্ঠান এটি। এ বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরদের স্বেচ্ছারিতা যেন বল্গাহীন পাগলা ঘোড়া। জানাযায়, লামা-আীলকদম উপজেলার স’মিল, ধানের কল, সেচ স্কীম, অটো রাইসমিল, টমটম ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা গ্যারেজের লোড সার্ভে ঠিকমত না করেই বিদ্যুৎ বিল প্রদান করা হচ্ছে। তাছাড়া অনেক মিল মালিক, সেচস্কীম ও টমটম ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা গ্যারেজের মালিকদের সাথে উৎকোচপূর্ণ উদারতা দেখিয়ে অনুমোদিত কিলোওয়াট ব্যবহারের অনুমিত দিচ্ছে আবাসিক প্রকৌশলী এম নজির আহমেদ। লামা বিদ্যুত সরবরাহ কেন্দ্রের পাশে জনৈক কাঁউর বাহারসহ দু’ বাহারকে এনালক মিটারের মাধ্যমে ব্যাটারি চালিত ২টি করে টমটম চার্জ দেয়ার সুযোগ করে দেন দুর্নীতিবাজ এ প্রকৌশলী। উৎকোচের বিনিময়ে লোডের ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণ করা হয় বলে সুত্র জানান। এরসাথে আবাসিক প্রকৌশলী ও সুপারেন্ডেন্টেন্ট প্রকৌশলীর যোগসূত্র রয়েছে বলেও জানা যায়।
এ ব্যপারে লামা বিদ্যুত বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী এম নজির আহমেদ অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেন, দিনে দিনে সব কিছু ঠিক হবে না। পরিবর্তন আনতে সময় লাগবে।
লামা-আলীকদম, বমুবিলছড়ি, মানিকপুর ও সুরাজপুর এলাকার বিপর্যয়কর বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়নে বর্তমান আবাসিক প্রকৌশলী এম নজির আহমেদ-এর দুর্নীতির বিচারসহ সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ভুতুড়ে বিলের কবল থেকে উদ্ধার করার জন্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছে এলাকাবাসী।


শেয়ার করুন