অবিবেচনা প্রসূত ধ্বংসযজ্ঞের কারণে

প্রকৃতি আজ হারিয়ে যাবার পথে


11950992_712912365508173_489433742_nআবদুল আলীম নোবেল, সিটিএন :

মাত্র দু’যুগ আগে প্রকৃতিকে যে ভাবে দেখেছি আজ তার ঠিক উল্টো চেহেরা। মানুষের কারণে এই বিচিত্র অবস্থা দেখতে হচ্ছে। এটি বুঝতে বিষেজ্ঞ হতে হবে এমন কথা নয়। প্রকৃতির দান গাছ-পালাসহ নানা জাতের প্রাণির বলতে গেল বিলুপ্ত প্রায়। ঘর থেকে বের হলে কক্সবাজারের বন ও উপকূলীয় এলাকার প্যারাবন, সৈকতের বালিয়াড়িতে বিভিন্ন জাতের প্রাণির দেখা মিলত, তাও এখন দেখা যায় না।

এক সময় এই জনপদে প্রকৃতি আর মানুষের সাথে গভীর মিতালী ছিল। সেই মিতালী এখন নেই। বিজ্ঞানী নিউটনের সূত্রমতে ‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে’ । মূর্ত বা বিমূর্ত একদিন তার ফল কিন্তু পাবেনই এতে কোন সন্দেহ নেই। আজ বিবেকবান মানুষের দ্বারে বার বার কড়া নাড়ছে একটি দুঃখের সংবাদ, প্রকৃতি বাঁচান তা না হলে মানব জাতীস সকল প্রাণীর জন্য জন্য মোটেও শুভ লক্ষণ।

final pci nobelবঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূল মারাত্মক দূষণের শিকার হয়েছে। ফলে মারা যাচ্ছে লাখ লাখ শামুক ঝিনুকসহ উপকূলীয় জীব-বৈচিত্র।
কক্সবাজার শহর উপকূলের নাজিরারটেক থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার উপকূল জুড়ে সমুদ্রের পানিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।

বাঁকখালী নদী মোহনায় এই দূষণের মাত্রা অস্বাভাবিক বেশি বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জাফর আলম ও কক্সবাজার উপকূলে পরিবেশ দূষণের কথা জানিয়েছেন।

কক্সবাজার সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায় সৈকত জুড়ে লাখ লাখ মৃত শামুক ও ঝিনুক জোয়রের পানিতে ভেসে আসছে। পঁচা ঝিনুক শামুকের তীব্র দুর্গন্ধে সৈকতের পরিবেশ হয়ে উঠেছে অস্বাস্থ্যকর ।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি -দীপক শর্মা দীপু বলেন, ‘সামুদ্রিক জীব বৈচিত্রের মড়ক সাম্প্রতিক সময়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।

কক্সবাজার জেলার দীর্ঘ উপকূল জুড়ে পানিতে এটির দেখা মিলে। প্রায় সময় মারা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণি। এটি আমাদের জন্য সত্যি দূঃখজনক। অপর দিকে নির্বিচারে কক্সবাজার পাহাড় কাটা চলছে। যাতে আমাদের গায়ে আঘাত চলছে। এই আঘাত আমাদের আগামী প্রজন্মের অনশিসংকেত’।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন উপকূলে শামুক ঝিনুকের মৃত্যুর হার বেড়েছে। কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন জানিয়েছেন, সমুদ্রে শামুক ঝিনুকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর সঠিক কারণ পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে সমুদ্র দূষণের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সাগরে লবণের মাত্রা বৃদ্ধি, খাদ্য সংকট, আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলেও জীব বৈচিত্র মারা যেতে পারে।

তিনি জানান- সমুদ্র উপকূল জুড়ে দূষণের ফলে ইলিশ সহ সামুদ্রিক মৎস্য প্রজন ক্ষেত্রগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রজজন ক্ষেত্র নষ্ট হওয়ায় বঙ্গোপসাগরে ৪৭৫ প্রজাতির মাছের মধ্যে অনেক প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই বিষয়ে একটি ব্যাপক জরীপের প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি জানান সাগরে জরিপ কাজ চালানোর জন্য সরকার একটি জাহাজ ক্রয় করেছেন।

imagesবিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মাছ ধরার যান্ত্রিক নৌকা এবং মালবাহি জাহাজ থেকে নিক্ষিপ্ত বর্জ্যরে কারণে সমুদ্র দূষণ হচ্ছে সব চেয়ে বেশি। সাগরে ৩০ হাজারের বেশি ফিসিং বোট রয়েছে। যার মাধ্যমে সমুদ্র দূষণ হচ্ছে উলে¬খ্যযোগ্য হারে। অন্যদিকে বন্দর ব্যবহারকারি জাহাজ সমূহ সমুদ্রে বর্জ্য নিক্ষেপ করছে প্রতিনিয়ত। মাছ ধরার নৌকা ও ইঞ্জিন সার্ভিসিং করে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে আর এটি বাঁকখালী নদী হয়ে পড়ছে সমুদ্রে। প্রাপ্ত তথ্য মতে শুধুমাত্র কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর মোহনায় রয়েছে শতাধিক ডকইয়ার্ড। এসব ডকইয়ার্ডের বৈধ কোন অনুমোদন নেই।

পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমুদ্র দূষণের কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার উপকূল পর্যন্ত স্থানে সমুদ্রের পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রতি লিটার পানিতে স্থান ভেদে ৫ মিলি গ্রামের নীচে নেমে যাচ্ছে। তিনি জানান, পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ ৩ এর নীচে নেমে গেলে জলজ প্রাণি মারা যাবে।

বেসরকারি একটি সূত্র জানিয়েছে, সমুদ্র উপকূল জুড়ে তেল জাতীয় পদার্থের কারণে দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। এখানে প্রতি লিটার পানিতে ১০০ থেকে ১৩০ মিলি গ্রাাম পর্যন্ত তেল জাতীয় পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী মোহনায় এই মাত্রা আরও বেশি পরিমাণ রয়েছে বলে সূত্রে প্রকাশ।


শেয়ার করুন