প্যাকেজ ভ্যাট বহালের দাবিতে মানববন্ধন

02সিটিএন ডেস্ক: ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আরোপ না করে ‘প্যাকেজ ভ্যাট’ বহাল রাখার দাবিতে সারা দেশে একঘণ্টা দোকান বন্ধ রেখে মানববন্ধন করেছে খুচরা ব্যবসায়ীরা।

১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আরোপ না করে ‘প্যাকেজ ভ্যাট’ বহাল রাখার দাবিতে সারাদেশে একঘণ্টা দোকান বন্ধ রেখে মানববন্ধন করেছে খুচরা ব্যবসায়ীরা।

দেশের খুচরা ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে সোমবার বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত রাজধানীর শান্তিনগরে ইস্টার্ন প্লাস মার্কেটের সামনে কেন্দ্রীয়ভাবে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন ব্যবসায়ীরা।

একই সময়ে সোনারগাঁও হোটেলের বিপরীতের রাস্তায় মানববন্ধন করেন কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা। মানববন্ধনের সময় সেখানে যান চলাচলে কিছুটা বিঘœ ঘটলেও পরে তা স্বাভাবিক হয়ে আসে।

মানববন্ধন হয়েছে নিউ মার্কেট এবং মিরপুরসহ রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও। পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরাও এই মানববন্ধন করে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর না করার দাবি জানান।

সংগঠনটির মহাসচিব শাহ আলম খন্দকার বলেন, প্যাকেজ ভ্যাট বহাল রাখার আন্দোলনে সাড়া দিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন করেছে।

‘ঢাকার নিউ মার্কেট, মিরপুর রোড, এলিফ্যান্ট রোড, সদরঘাট, নবাবপুর, কারওয়ান বাজারসহ অনেক স্থানেই দোকান বন্ধ রেখে মানববন্ধন করেছে ব্যবসায়ীরা। ঢাকার বাইরে কুমিল্লা, জামালপুর, খুলনা, মায়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য জেলা থেকেও কর্মসূচি পালনের খবর এসেছে।’

মূসক আইন আইন সংস্কারে ব্যবসায়ীদের দেওয়া ৭ দফা প্রস্তাব বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

নতুন অর্থবছরে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের নিয়ম চালু হলে তা নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবি আর) ও ব্যবসায়ী উভয় মহল ‘বিশৃঙ্খলার মুখে’ পড়বে জানিয়ে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দেয় দোকান মালিক সমিতি।

এতদিন ধরে চালু থাকা ‘প্যাকেজ ভ্যাটের’ নিয়ম যেন নতুন ভ্যাট আইনে সংযুক্ত করা হয় সেজন্য ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপেও কামনা করেন সংগঠনের নেতারা।

চলতি বছরের জুলাই থেকে মূসক (ভ্যাট) আইন ২০১২ কার্যকরের কথা রয়েছে, যেখানে কৃষিজাত কয়েকটি পণ্য ছাড়া বাকি সব পণ্যের খুচরা বিক্রির ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূসক আদায়ের বিধান রাখা হয়েছে।

এই প্রক্রিয়ায় ভ্যাট আদায় কষ্টসাধ্য হবে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঝামেলা বাড়বে বলে সতর্ক করে আসছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) আশঙ্কা, এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে।

প্যাকেজ ভ্যাটের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায়ের আইন চালু হলে ‘ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের হয়রানিতে’ পড়বেন বলে সংবাদ সম্মেলনে রোববারের সংবাদ সম্মেলেনে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সমিতির সভাপতি এসএ কাদের কিরণ।

‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে; ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হয়রানির মুখে পড়বে।’

“১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায়ের জন্য প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আদালাভাবে হিসাব করার জন্য একজন লোক রাখতে হবে। সেখানে পিওএস মেশিন বা ইসিআর মেশিন বসাতে হবে।”

প্যাকেজ ভ্যাট নতুন ভ্যাট আইনের আওতায় আনতে প্রয়োজনে আরও আলোচনা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতেও প্যাকেজ ভ্যাট প্রথা চালু আছে।

পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের মানববন্ধনের পর ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু মোতালেব বলেন, ‘অনতিবিলম্বে প্যাকেজ ভ্যাট পুনর্বহাল করতে হবে। এই দাবিতে এনবি আরের কাছে এফবিসিসিআই যে সাতদফা দাবি দিয়েছে, তা অনতিবলম্বে মেনে নিতে হবে।’

২ জুনের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

আগামী ২ জুন আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তখন তিনি মূসক আইন নিয়ে জটিলতার নিরসনের কোনো পরিকল্পনা জানাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।


শেয়ার করুন