পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ড উপ-নির্বাচন: ঘনিয়ে আসছে দিন, প্রচারণা জমজমাট

শাহেদ ইমরান মিজান:
কক্সবাজার পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনের মাহেন্দ্রক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। সময় মাত্র আর ৪দিন। ৪ দিন পরের সেই ক্ষণে প্রতিফলিত হবে প্রার্থীদের টানা মাসাধিক সময়ের নির্ঘুম আর কঠিন শ্রম। হাড়ভাঙা শ্রমকে সার্থক করতে শ্রমের মাত্রা যেন আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা! প্রার্থীদের পক্ষে পাল্লা দিয়ে কাজ করছে সমর্থকরাও। পোস্টার আর ব্যানারে ছেয়ে গেছে সর্বত্র। মাইকে গমগম করছে চারিদিক। সব মিলে তিন প্রার্থীর বিরামহীন ভোটযুদ্ধে এক জমজমাট পরিবেশ বিরাজ পুরো শহরজুড়ে।
ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী তিন প্রার্থী প্রয়াত কাউন্সিলর সাইফুদ্দীন খালেদের ছোটভাই কফিল উদ্দীন, সাবেক কাউন্সিলর জসিম উদ্দীন ও পৌর আওয়ামী লীগ নেতা জাবেদ কায়ছার মো: নোবেল যোগ্যতার দিক দিয়ে কেউ কারও চেয়ে পিছিয়ে নেই। ঠিক একই ভাবে প্রচার-প্রচারণাসহ সামগ্রিক নির্বাচনী কর্মযজ্ঞে তিনজনে সমানে সমান। তাই জয়ের মালাটা কার গলায় উঠছে তা সহসাই অনুমান করতে পারছেন না নির্বাচনী বোদ্ধারা! তবে প্রার্থীরা নিজেদের যোগ্যতার দিকটি তুলে ধরে মূল্যবান ভোটটি নিজের বাক্সে নেয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই লক্ষ্যে দিন পেরিয়ে নির্ঘুম রাতেও ভোটারদের দরজায় টোকা দিচ্ছেন। ভিক্ষা চাচ্ছেন ভোট। সাথে নিজেদের স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনসহজ সমর্থকরাও আলাদা আলাদা দল বেঁধে ভোট ভিক্ষা করছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উপ-নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দ্বী ৩ প্রার্থীর জন্যই ‘প্রেস্টিজ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কফিল উদ্দীন চাচ্ছেন জয়টা নিজের ঘরে তুলে অকাল প্রয়াত ভাই ও পরিবারের সম্মানটা ধরে রাখতে। সাবেক কাউন্সিলর হিসেবে জসীম উদ্দীনের আত্ম-সম্মানটা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। তিনি চাচ্ছেন তার হারানো সম্মানটা উদ্ধার করতে। অন্যদিকে সরকারদলীয় নেতা ও ব্যক্তিগত ‘জনপ্রিয়’ ইমেজকে বেগবান করতে জয়টা নিজের করতে চান পৌর আওয়ামী লীগ নেতা জাবেদ কায়ছার মো: নোবেল। তিন প্রার্থীই সমান যোগ্যতা অধিকারী। এ নিয়ে ভোটের হিসেবে কাউকে এগিয়ে; কাউকে পিছিয়ে দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে তিন প্রার্থীর যোগ্যতার বিষয় মাথায় নিয়ে ভোটাররাও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছেন এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। ভোটাররা প্রার্থীদের সম্পর্কে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে। কোন প্রার্থীকে ভোট দিলে মঙ্গল হবে তা নিয়ে চলছে নিজদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক। তারপরও বিজয়ের মুকুট কার মাথায় উঠছে তার জন্য ১৬ এপ্রিল অন্তত সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে- এমনটি মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারপরও মনে করা হচ্ছে, প্রার্থী কফিল উদ্দিন একদিকে তারুণ্যের প্রতীক, ক্লিন ইমেজের অধিকারী। অপর দিকে প্রয়াত কাউন্সিলর সাইফুদ্দীন খালেদের ছোটভাই। সব থেকে অকাল প্রয়াত ভাইয়ের উপর থাকা ভোটারদের ‘সিম্পেথি’ কাজ দিলে তিনি জয়ী হবেন।
তরুণ রাজনীতিক হিসেবে জাবেদ কায়ছার মো: নোবেলের পরিচিত সর্বমহলে। সামাজিক, ক্রীড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার অবদানও সর্বজন বিদিত। তার উপর আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে দলীয়ভাবে তাকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। দুই হিসেব মিলে গেলে প্রথম বার নির্বাচনে অংশ নিয়েই জয়ী হচ্ছেন তিনি।
সাবেক কাউন্সিলর হিসেবে ভোটারদের পরীক্ষিত জসিম উদ্দীনের রয়েছে আলাদা ইমেজ। তরুণ ভোটার বাদ দিলেও বয়স্ক ভোটারদের একটা বিরাট অংশ তার পক্ষেই রয়েছে এমন কথা শোনা যাচ্ছে। সে সমীকরণটা মিলে গেলে হারানো মুকুট ফিরছে জসীম উদ্দীনের।
১০ নং ওয়ার্ডের আওতাধীন বাহারছড়া, মোহাজের পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রার্থীর সমর্থনে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, লিফলেটে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। মাইকিং চলছে পুরো শহরজুড়ে। পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে চলছে ‘চায়ের কাপে ঝড়’। এক কথায় সর্বত্র বিরাজ উৎসবমুখর পরিবেশ। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কালোটাকা ছড়াছড়ি হওয়ারও কথা শোনা যাচ্ছে।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ নং ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনে মোট ভোটার হচ্ছেন ৫৬২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩১৪৩ জন ও নারী ভোটার ২৪৮৬জন। ভোট গ্রহণ করা হবে দুইটি কেন্দ্রে। ওই দু’টি কেন্দ্রে বুথ থাকবে ১৭টি।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজার পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন খালেদ দায়িত্ব গ্রহণের পর মাত্র এক বছর ৫ মাসের মাথায় গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর মারা যান। তার মৃত্যুতে কাউন্সিলর পদটি শূন্য হয়ে যায়।


শেয়ার করুন