পৃথিবীর মতো সাতটি নতুন গ্রহ আবিষ্কার

37667502_303পৃথিবীর আয়তনের সাতটি গ্রহ যে ‘সূর্য’-কে প্রদক্ষিণ করছে, তার আয়তন কিন্তু সূর্যের দশ ভাগের এক ভাগ৷ এই গ্রহগুলির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, সেখানে পানি থাকতে পারে৷
নতুন সাতটি গ্রহ
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এর আগেও আমাদের সৌরজগতের বাইরে পৃথিবীর মতো গ্রহ খুঁজে পেয়েছেন – কিন্তু এক কোপে সাতটি! তাও আবার একটি তারার চারপাশে! চমকটা উপলব্ধি করা যায়৷

আবিষ্কার করেছেন বেলজিয়ামের লিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মিশায়েল জিলঁ ও তাঁর সতীর্থরা৷ তাঁদের সমীক্ষা গত বুধবার ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে৷ সদ্য আবিষ্কৃত সব ক’টি গ্রহেই ‘‘উপরিভাগে তরল পানি, এমনকি জীবনের রেশ থাকতে পারে,’’ প্রবন্ধতে লিখেছেন জিলঁ৷
নতুন আবিষ্কৃত গ্রহগুলি যে বামন তারাটির চারপাশে ঘুরছে, তার বৈজ্ঞানিক নাম হলো ‘ট্র্যাপিস্ট-১’, আয়তনে বৃহস্পতি গ্রহের চেয়ে বেশি নয়৷ পৃথিবী থেকে ৩৯ আলোকবর্ষ দূরত্বে রয়েছে এই বামন তারকা৷
গ্রহ সাতটিকে আপাতত শুধু ১বি, ১সি ইত্যাদি করে ১এইচ অবধি ডাকা হচ্ছে৷ তারা সকলেই ‘ট্র্যাপিস্ট-১’-এর বেশ কাছে, সূর্য থেকে পৃথিবীর যা দূরত্ব, তার চেয়ে অনেক বেশি কাছে৷
Sieben erdähnliche Planeten um Trappist-1 (NASA/JPL-Caltech )
এটা সম্ভব, কেননা, ‘ট্র্যাপিস্ট-১’ সূর্যের চেয়ে অনেক ছোট ও অনেক বেশি ঠান্ডা, যার ফলে তথাকথিত নাতিশীতোষ্ণ, বসবাসের উপযোগী এলাকাটি তারকার অনেক কাছে এসে পড়েছে – যেখানে পানি উবে যাবে না অথবা জমে যাবে না, অর্থাৎ তরলই থাকবে – অর্থাৎ শূন্য থেকে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে থাকে এই ‘হ্যাবিটেবল জোন’৷
তারার আলো
‘ট্র্যাপিস্ট-১’-এর আলোও খুব উজ্জ্বল নয়৷ সমীক্ষাটির যৌথ রচয়িতা আমরি ত্রিয় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী৷ তিনি বলেছেন যে, ‘ট্র্যাপিস্ট-১’-এর আলো সূর্যালোকের ২০০ ভাগের এক ভাগের মতো হবে, অর্থাৎ সূর্যাস্তের শেষে যেরকম আলো হয়৷ কিন্তু ‘ট্র্যাপিস্ট-১’-এর আলো অন্তত আমাদের চাঁদের আলোর চেয়ে বেশি জোরালো, কাজেই এই গ্রহগুলি খুব বেশি ঠাণ্ডা হবে না – বলেছেন ত্রিয়৷
‘ট্র্যাপিস্ট-১’-এর আলোকরশ্মির অধিকাংশই অবলোহিত বর্ণালীতে, যা আমরা দেখতে পাই না৷ আকাশটা নাকি হালকা সুড়কি রঙের হতে পারে, বলে ত্রিয়-র ধারণা৷
সেখানে কি জীবন আছে?
‘ট্র্যাপিস্ট-১’-এর গ্রহগুলিতে যদি সমুদ্র থাকে আর সেখানে জীবনের সূচনা ঘটে (থাকে), তাহলে কোনো বিপদ নেই৷ কিন্তু সাগর ছাড়া অন্য কোথাও জীবনের সূচনা ঘটলে তার ‘বাঁচা-মরা’ নির্ভর করবে ‘ট্র্যাপিস্ট-১’ থেকে গ্রহটির দিকে কি পরিমাণ রশ্মি বিকিরণ ঘটছে, তার উপর৷
Infografik Trappist-1 englisch
এর পরের কাজ হবে, এই গ্রহগুলির বায়ুমণ্ডল বা আবহমণ্ডল পরীক্ষা করে দেখা৷ গবেষকরা এ কাজের জন্য জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করবেন – টেলিস্কোপটিকে ২০১৮ সালে মহাকাশে পাঠানো হবে এবং তা সদ্য আবিষ্কৃত গ্রহগুলিতে মিথেন, অক্সিজেন ও ওজোন, এই তিনটি গ্যাস আছে কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখবে৷ ঐ তিনটি গ্যাস একসঙ্গে থাকার অর্থ: সেখানে জীবনের সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি৷
গ্রহ অনেক, কিন্তু বাসযোগ্য গ্রহ?
আমাদের সৌরজগতের বাইরে প্রথম গ্রহটি আবিষ্কৃত হয় ১৯৯২ সালে৷ দূরের গ্রহগুলি যখন তাদের তারকার সামনে দিয়ে যায়, তখনই সেই গ্রহগুলি ধরা পড়ে৷ এভাবে বিগত দশ বছরে সৌরজগতের বাইরে হাজার হাজার গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে৷ এমনকি এখন ধরে নেওয়া হচ্ছে যে, অধিকাংশ তারারই গ্রহ আছে ও সেইসব তারকামণ্ডলের ‘হ্যাবিটেবল জোনে’ প্রায়শই পৃথিবীর মতো গ্রহ থাকে৷ গোটা ব্রহ্মাণ্ডে নাকি ১০০ কোটির মতো পৃথিবী-সদৃশ গ্রহ আছে, যেখানে তরল পানি থাকা সম্ভব…
নাকি পৃথিবী থাকা সম্ভব?


শেয়ার করুন