পুলিশের প্রতি আস্থা বাড়িয়েছে ওসি রনজিত বডুয়া

শামসুল হক শারেক:
পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়িয়েছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি রনজিত কুমার বডুয়া। তিনি কক্সবাজার মডেল থানায় যোগদানের পর থেকে যে কোন শ্রেণী পেশার মানুষ মনে করেন ওসি রনজিত বডুয়া তাদের একজন আপনজন। ইতোমধ্যে তাঁর কার্যক্রমে জনগণের এই বিশ্বাস ও আস্থার কদর ও রেখেছেন তিনি।
গত ২৪ আগষ্ট ২০১৭ ইং কক্সবাজার শহরের ইসলামী ব্যাঙ্কের সামনে থেকে ভোর সাড়ে পাঁচটায় আমার একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া পুত্র সন্তান নাঈম শারেক’র মোবাইল ও ল্যাপটপ কেড়ে নিয়ে গিয়েছিল ছিনতাইকারীরা। রাতের বাসে করে এসে সাড়ে ৫টায় হলিডে মোড়ে নেমে একটা টমটম নিয়ে সে দক্ষিণ রুমালিয়ারছরা বাসায় ফিরছিল। সাথে সাথে বিষয়টি আমি ফোনে মডেল থানার ওসি রনজিত বডুয়াকে অবহিত করি। তিনি সাথে সাথেই একদল পুলিশকে একটি পুলিশ ভ্যানে করে ছিনতাইকারীদের পিছু ধাওয়া করতে আমাকে সহযোগিতা করলেন। ছিনতাইকারীরা নাঈমের টমটমের সামনে একটি মাহিন্দ্রা গাড়ি দিয়ে আটকিয়ে তার মোবাইল, ল্যাপটপ, ও মানিব্যাগ ইত্যাদি নিয়ে বৌদ্ধমন্দীর সড়ক দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল।
পরের দিন ওসি সাহেব নাঈমকে সাথে নিয়ে আমাকে থানায় যেতে বলেন। এবিষয়ে একটি অভিযোগ করতে আমাকে সহযোগিতা করেন ওসি তদন্ত কামরুল আজম। ইনন্সপেক্টার আবুল কালাম আযাদকে এর তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে ওসি সাহেব আমাকে বললেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব, দেখাযাক কি হয়’। মনে মনে ভাবছিলাম এখন বাজারে মোবাইল আর ল্যাপটপ তরি তরকারীর মত। নিতাই হওয়া মোবাইল, ল্যাপটপ কি অসলে পাওয়া যাবে? ওসি রনজিত সাহেব ইতোপূর্বে কক্সবাজার সদর থানায় এসআই হিসেবে কর্মরত অবস্থায় আমার বাসা থেকে চুরি হওয়া দু’টি মোবাইল সেট উদ্ধার করে দিয়েছিলেন। এছাড়াও মহেশখালী এবং চকরিয়ার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আমি তাঁকে যতটুকু জানতাম এতে আমার একটা আস্থা ছিল তিনি কিছু একটা করতে পারবেন। অবশ্য টেকনিক্যাল কারণে এজন্য একটু সময় লাগবে তা অগেই বলে দিয়েছিলেন। সেদিন থানায় লক্ষ্য করলাম বাজারের মত নানুষ আর মানুষ। সংবাদ কর্মী হিসেবে কারণে অকারণে থানায় যাওয়া হলেও এত মানুষ তো কোন সময় দেখিনি। পরে বুঝতে পারলাম ওসি রনজিতের প্রতি জনগণের আস্থা আছে বলেই থানায় এত মানুষের যাতায়াত।
আলহামদুলিল্লাহ। অবশেষে নাঈমের ছিনতাই হওয়া মোবাইল ও ল্যাপটপ উদ্ধার হয়েছে। এতে নাঈমের খুশির সাথে আমাদের স্বস্থির বিষয়টি অনেক বড়। পাশাপাশি এই মোবাইল ও ল্যাপটপ উদ্ধারে ভূমিকা রেখেছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার চৌকষ ওসি রনজিত বডুয়ার নেতৃত্বে অন্যান্য কর্মকর্তারা। আমরা তাদের প্রতি অকুণ্ঠ চিত্তে কৃতজ্ঞ। তবে তাদেরকে শুধু ধন্যবাদ দিয়ে খাটো করতে চাইনা। দায়িত্ব পালনে তাদের নিষ্ঠা-অন্তরিকতা, জনসেবার প্রতি তাদের আন্তরিকতা ও জনগণের প্রতি তাদের ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে কর্তব্য পালনে তাদের বিরামহীন প্রচেষ্টার কথা না বললে কিন্তু হয়না।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ওসি সাহেব আমাকে ফোনে জানালেন, শারেক ভাই একটা সুখবর আছে ‘আপনার ছেলের মেবাইলটা উদ্ধার হয়েছে। ল্যাপটপটাও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে’। আমি কিন্তু একবারও জানতে চাইনি কি হয়েছে কি হচ্ছে এবিষয়ে। ২৮ সেপ্টেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল কালাম আযাদ ফোনে আমাকে জানালেন আমাকে একটু থানায় যেতে হবে। একটু পরে ওসি সাহেবেও ফোনে আমাকে বললেন, নাঈম তো ইউনিভার্সিটিতে, তার মোবাইল ও ল্যাপটপটা উদ্ধার হয়েছে। আপনি ওগুলো থানা থেকে নিয়ে যেতে পারেন। আমি তো রিতিমত অবাক। তরি তরকারীর মত মোবাই ও ল্যাপটপ যেখানে পথে ঘাটে। সেখানে ছিনতাই হওয়া মোবাই ও ল্যাপটপ উদ্ধার করল পুলিশ! আমি মনে করি খুব ছোট কথা নয় এটি। অমাদের পুলিশের রিুদ্ধে যতসব অভিযোগ এটি ঠিক তার উল্টো। তার মানে আমাদের পুলিশের অনেক যোগ্যতা আছে। আছে তাদের আন্তরিকতাও। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে পুলিশকে জনগনের মূখোমূখী দাঁড় করানো হয় বলেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। তখন পুলিশকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেও হয়ত অনেক কাজ করতে হয়।
আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর প্রতি মানুষ আস্থা হারাতে বসেছিল নানা কারণে। পুলিশের শুধু দোষ গুলোই খোঁেজ খোঁেজ বলা হত। আর তা লেখা হত সংবাদ পত্রের পাতা জুড়ে। এই ধরণের নেতিবাচক প্রচারণায় মানুষের ধারণা জন্মাতে থাকে পুলিশ যেন কোন ভাল কাজই করেনা। আসলে কি আমাদের দেশের পুলিশ বাহিনী খুব খারাপ! তারা কোন ভাল কাজ করেনা! এই ধারণা পাল্টে দিয়ে পুলিশের প্রতি আস্থা বাড়িয়েছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি রনজিত বডুয়া।
পুলিশ যে জনগণের বন্ধু, জনগণের কল্যাণেই পুলিশ। পুলিশ ভাল কাজ করে, জনগণের উপকার করে। সমাজে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আমাদের পুলিশ বাহিনী সদা তৎপর থাকেন। চোর-ডাকাত, বদমাইশ, ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসীদের শায়েস্তা করে তারা জনগণের স্বস্থি দেন। তার প্রমাণ কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রনজিত বডুয়া।
গত জুন মাসে (২০১৭ ইং) রনজিত বডুয়া কক্সবাজার মডেল থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর পরই তিনি সাড়াঁশি অভিযোন শুরু করেন চোর-ডাকাত, বদমাইশ, ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন কক্সবাজারের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এর পুরষ্কারও তিনি পেয়েছেন জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জেলার শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ হিসেবে।
অনেকেই তাঁেক অভিনন্দন জানালেন এই বলে জেলার সেরা ওসি নির্বাচিত হলেন মহেশখালী ও চকরিয়া থানার সাবেক ওসি বর্তমানে কক্সবাজার সদর মড়েল থানার ওসি রনজিত বড়ুয়া। দায়িত্ব পালনে সফলতা স্বরূপ পুলিশ সুপারের হাত থেকে সাফল্যের স্বারক গ্রহণ করেন তিনি।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের মাসিক ক্রাইম কনফারেন্সে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অপরাধ দমন, মাদক উদ্ধার ও সন্ত্রাসী গ্রেফতারে সাফল্য জনক ভূমিকা রাখায় জেলার শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ হিসেবে পুলিশ সুপার ড: এ কে এম ইকবাল হোসেন এর নিকট থেকে এই সম্মাননা স্বারক গ্রহণ গ্রহন করছেন তিনি।
এয়াড়াও ঢাকায় চুরি হওয়া মূল্যবান একটি ল্যাপটপও ঈদগাঁও ষ্টেশন এলাকা থেকে উদ্ধার করে দিয়েছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার পুলিশ। গত ১৯ আগষ্ট ওই ল্যাপটপ উদ্ধার অভিযানেও ছিল ওসি রনজিতের নেতৃত্ব এবং ইন্সপেক্টার আবুল কালাম অযাদের কৌশলী ভূমিকা।
এ প্রসঙ্গে ওসি রঞ্জিত জানান, চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর ছেলে ঢাকা নর্থসাউথ বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত নছিরুল আলম ফাহিমের এ্যাপল ম্যাক বুক প্রো-২০১২ মডেলের ল্যাপটপটি গত ১৩ আগষ্ট বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বি ব্লকের ১৩ রোডের বাসা থেকে তার বাবুর্চি চুরি করে পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে ঢাকা ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন ফাহিম। সাধারণ ডায়রি পেয়ে ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে ওই বাবুর্চি কক্সবাজারে অবস্থান করছে বলে শনাক্ত করা হয়। বিষয়টি আমাকে অবহিত করলে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া হয়। ট্রেকিংয়ের সুত্র ধরে ওই বাবুর্চিকে ল্যাপটপসহ আটক করা হয়।
পরে হোটেল মোটেল গেষ্ট হাউজ মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আলহাজ্ব শফিকুর রহমান কোম্পানীর উপস্থিতিতে ব্যবসায়ী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কাছে তার ছেলের ল্যাপটপটি হস্তান্তর করা হয়।
আমার বিশ্বাস আমাদের পুলিশ বাহিনীকে কোন কোন মহল থেকে নিয়ন্ত্রণ করা নাহলে, স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিয়ে তাদের আধুনিক প্রযুক্তিসহ সব বিষয়ে সহযোগিতা দেয়া হলে আমাদের পুলিশ বাহিনী বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পুলিশ বাহিনীতে পরিনত হবে।


শেয়ার করুন