পাশ্চাত্যে ইসলাম অবমাননার পর কুরআনের কপি বিক্রি বেড়ে যায় 

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা পশ্চিমা যুব সমাজকে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। ফ্রান্সের একটি পত্রিকায় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র প্রতি অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশের পর এ ধরনের একটি আহ্বানের উদ্যোগ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছিল। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের যুব সমাজের প্রতি দেয়া ঐতিহাসিক ওই বাণীতে তিনি বলেছেন, ‘ইসলাম আতঙ্ক’ থেকে পালিয়ে না গিয়ে এ ধর্ম সম্পর্কে সরাসরি সঠিক জ্ঞান অর্জন করা উচিত … এবং মুসলমানদের ব্যাপারে আতঙ্ক তৈরি করে তা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা পাশ্চাত্যের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য।

আসলে ইসলামের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের তথা পশ্চিমা শক্তিগুলোর বিদ্বেষ নতুন কোনো বিষয় নয়। ইসলামের সেই প্রাথমিক যুগ থেকেই এই ধর্মের বিরুদ্ধে যতো ধরনের শত্রুতা করা যায় তা করেছে ইসলাম বিদ্বেষী মহলগুলো। ইসলাম সম্পর্কে নানা আজগুবি ধারণা ও মিথ্যার প্রচার সেই প্রাথমিক যুগ থেকেই অব্যাহত ছিল। পাশ্চাত্যের অনেকেই এখন এ বিষয়ে সচেতন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালস্ট্রিট দখল আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও ছায়াছবি নির্মাতা ক্যালেব মপিন পাশ্চাত্যের যুব সমাজের উদ্দেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার পাঠানো সাম্প্রতিক বাণীর প্রশংসা করে ও কয়েকটি প্রশ্নের অবতারণা করে বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধ্যাপক ও শিক্ষকরা কেন হযরত ঈসা (আ.)’র প্রতি ইসলাম ধর্মের সম্মান প্রদর্শনের বিষয়ে ছাত্রদের কাছে কোনো তথ্যই তুলে ধরেন না? পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোও কেনো এই বাস্তবতা সম্পর্কে নীরব রয়েছে? …. আমি নিশ্চিত যে ইসলাম সম্পর্কে অনেক বিষয় রয়েছে যা আমাকে গভীরভাবে বিস্মিত করবে, অথচ সেইসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি এখন ইসলাম ধর্মের বাস্তবতাগুলো সম্পর্কে জানার জন্য গবেষণা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

মজার ব্যাপার হলো, ইসলাম এমন একটি সত্য ও বাস্তব ধর্ম যে যখনই এই ধর্মের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার জোরদার হয় তখনই মানুষের প্রকৃতির সাথে মানানসই এই ধর্মের দিকে অমুসলমানদের ঝোঁক আরো বেড়ে যায়। ২০০১ সালের ১১ ই সেপ্টেম্বরের রহস্যময় হামলার সঙ্গে মুসলমানদের জড়িয়ে পাশ্চাত্যের প্রচার মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচার জোরদার করা হয়। কিন্তু এর পরিণতিতে পবিত্র কুরআন ও ইসলাম সম্পর্কে পশ্চিমাদের আগ্রহ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। কুরআন ও বিশ্বনবী (সা.)’র প্রতি অবমাননাকর ঘটনাগুলোর পরই একই ধরনের বুমেরাং প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। সম্প্রতি ফ্রান্সের শার্লি এবদো পত্রিকায় ইসলাম অবমাননার পরও একই প্রবণতা দেখা দিয়েছে।

পবিত্র কুরআনের মানবীয় ও উচ্চতর আদর্শ আর মূল্যবোধগুলো প্রচারিত হোক, ইসলাম-বিদ্বেষী সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যকামী শক্তিগুলো তা কখনও চায়নি। কারণ, এর ফলে পশ্চিমারা দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে বলে তারা শঙ্কিত। পশ্চিমা প্রচার মাধ্যম পাশ্চাত্যেরই ষড়যন্ত্রে গড়ে ওঠা ধর্মান্ধ ওয়াহাবি-তাকফিরি গোষ্ঠীগুলোর নৃশংস নানা তৎপরতার ছবি খুব ফলাও করে প্রচার করে এবং বলে বেড়ায় যে, কুরআনে বর্ণিত ইসলামের জিহাদ আর এইসব সন্ত্রাস একই সূত্রে গাঁথা যদিও পবিত্র ইসলামের সঙ্গে এসবের দূরতম সম্পর্কও নেই। অথচ এইসব প্রচারমাধ্যম মুসলমানদের বিরুদ্ধে দেশে দেশে মার্কিন অপরাধযজ্ঞ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর ব্যাপারে কেনো নিরব রয়েছে? কেনো তারা কুরআন ও মহানবী (সা.)’র অতি উচ্চমানের আদর্শগুলো তুলে ধরে না? বিশ্ব-সভ্যতায় ইসলাম সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা সত্ত্বেও কেনো পশ্চিমা সরকার ও প্রচার মাধ্যমগুলো কেনো তা গোপন রাখছে?

ইসলামের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যাচার সত্ত্বেও পাশ্চাত্যে এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বইয়ের তালিকার শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে পবিত্র কুরআনের অনুবাদ। পাশ্চাত্যের গতানুগতিক চিন্তাধারায় বিশ্বাসী জ্ঞানপাপী চিন্তাবিদরা সেখানকার আধুনিক যুগকে ইউরোপের মধ্য ও অন্ধকার যুগের তুলনায় যুক্তির যুগ বা আলোকোজ্জ্বল যুগ বলে দাবি করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে সেখানে এখনও মিথ্যার বেসাতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাই করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের জুলুম কমিউনিস্টদের নৃশংসতা ও বলদর্পীতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এর প্রমাণ হলো পাশ্চাত্যে বিশ্বনবী (সা.)সহ সব নবী-রাসুলেরই অবমাননা করা যায় কথিত বাক-স্বাধীনতার নামে, কিন্তু ইহুদিবাদের নানা মিথ্যাচার সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন তোলাই নিষিদ্ধ। পাশ্চাত্য অতীতে ক্রুসেডের মতো যুদ্ধগুলোর মাধ্যমে সরাসরি ইসলাম ও মুসলমানদের ধ্বংস করতে চেয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তারা তাকফিরিদের দিয়ে দেশে দেশে মুসলমানদেরকে গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে ধ্বংসের চেষ্টা করছে। কিছুকাল আগেও পাশ্চাত্যের একদল মুক্তমনা চিন্তাবিদ মার্কিন আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদসহ পুঁজিবাদের ধ্বংসাত্মক নানা দিকের সমালোচনা করতেন। কিন্তু আজ এ ধরনের প্রতিবাদী চিন্তাবিদদের হয় মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য করা হয়েছে, কিংবা টাকা দিয়ে তাদের নিরব রাখা হয়েছে। তাহলে পাশ্চাত্যের কথিত চলমান সভ্যতার যুগকে কী অতীতের চেয়েও বেশি অন্ধকার ও অসভ্যতার যুগ বলা যায় না?

আজ পাশ্চাত্যেরই ভাড়াটে অনুচর ওয়াহাবি তাকফিরি জল্লাদরা কেনো ইসরাইলী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে? কেনো তাদেরকে জিহাদি বলে অভিহিত করে জিহাদের অবমাননা করা হচ্ছে? গুয়ান্তানামো কারাগারে যেভাবে মুসলমান বন্দিদের টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হচ্ছে তার ছবি কেনো পশ্চিমা মিডিয়াগুলোতে আসছে না? কেনো কেবল তাকফিরি সন্ত্রাসীদেরকে মুসলমান হিসেবে তুলে ধরে তাদের নৃশংসতাকে ইসলামের নৃশংসতা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে? যেসব সুন্নি আলেম ইসলামী ঐক্যের সমর্থক কেনো পশ্চিমা গণমাধ্যম তাদের কথা তুলে ধরছে না, বরং মুসলমানদের মধ্যে মাজহাবি যুদ্ধ বাধাতে আগ্রহী কথিত আলেমদের বক্তব‍্যই প্রচার করছে? এটা খুবই পরিহাসের বিষয় যে আজ পশ্চিমা গণমাধ্যম ও ইহুদিবাদীরাই ইসলাম সম্পর্কে তাদের নিজস্ব নানা বক্তব্য বা মতামত প্রচার করছে! কুরআন যে জিহাদের কথা বলে তা প্রতিরক্ষার জিহাদ, শান্তি প্রতিষ্ঠার জিহাদ ও ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠার জিহাদ তথা ন্যায্য অধিকার আদায়ের জিহাদ। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ, গণহত্যা, অপরাধ আর অশান্তির আসল হোতা পুঁজিবাদী ও ইহুদিবাদীদের অন্যায় যুদ্ধ বা অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে ইসলামী জিহাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

 পশ্চিমারা ও ইহুদিবাদীরা সব সময়ই নবী-রাসুল এবং ইসলাম সম্পর্কে নানা ধরনের আজগুবি অপবাদ প্রচার করেছে। পবিত্র কুরআন যদি না থাকতো তাহলে আজও পশ্চিমা জনগণের সবাই ইহুদিবাদীদের প্রচারণার প্রভাবে হযরত মুসা, ঈসা ও মারিয়াম (সা.আ.)’র মতো মহামানবদেরকেও সন্ত্রাসী এবং পাপী বলেই মনে করতো। বাইবেলের প্রাচীন সংস্করণ এখনও নবীদের সম্পর্কে নানা ধরনের জঘন্য ও নিকৃষ্টতম অপবাদের বোঝায় কলঙ্কিত হয়ে আছে।

  আজ পশ্চিমা সরকারগুলোর মদদপুষ্ট ওয়াহাবি-তাকফিরি সন্ত্রাসীরা সাহাবি ও নবী-রাসুলের মাজার ধ্বংস করছে। পবিত্র মক্কা ও মদীনায় মহানবী (সা.) এবং তাঁর প্রথম স্ত্রী তথা প্রথম মুসলমান হযরত খাদিজার (সা. আ.)’র পুণ্য-স্মৃতি-বিজড়িত নিদর্শনগুলোর অবমাননা বা সেইসব নিদর্শনগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে কী ইহুদিবাদীদেরকেই খুশি করার জন্য? অজ্ঞ ও মূর্খ তাকফিরিরা বলে এইসব স্থানের প্রতি সম্মান দেখানো নাকি শির্ক, ঠিক যেভাবে অতীত যুগে পশ্চিমা ইসলাম-বিদ্বেষীরা প্রচার করতো যে, মুসলমানরা মুহাম্মাদের পূজা করে বা কাবা ঘরের পূজা করে!

 এই তাকফিরি সন্ত্রাসীরা নবী-রাসুল ও সাহাবিদের মাজার এবং মসজিদ ধ্বংস করলেও সম্প্রতি সিরিয়াতে ওসমানিয় তুর্কি শাসক সুলাইমানের মাজার ঠিকই ধ্বংস করেনি। কারণ, তুরস্কের বর্তমান সরকার এই সন্ত্রাসীদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে। পাশ্চাত্যের সেবাদাস তুর্কি সরকারও ওই মাজার রক্ষার নামে সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে এবং ওই মাজারটিকে সিরিয়ারই অন্য এক অঞ্চলে সরিয়ে নিয়ে গেছে তাকফিরিদের সহায়তায়!

 বহু শতাব্দী পর্যন্ত পাশ্চাত্যের ভাষাগুলোতে কুরআন অনুবাদ করা ছিল নিষিদ্ধ এবং কেউ কেউ অনুবাদ করলেও তাতে নানা ধরনের মিথ্যা তথ্য ও অপবাদ যুক্ত করা হতো যাতে পাশ্চাত্যের জনগণ প্রকৃত কুরআনের ছোঁয়া থেকে দূরে থাকে। আসলে মহানবী (সা.)’র প্রতি সম্মানের অর্থ তাঁর পূজা করা বা তাঁর ইবাদত করা নয়, বরং তাঁকে ভালবাসারই প্রকাশ। আসলে আজ ইহুদিবাদীদের কথাগুলোই নতুন করে ওয়াহাবি-সালাফি তাকফিরিদের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে। এই তাকফিরিরা জিহাদ ও শাহাদতের পুণ্যময় নিদর্শনগুলো ধ্বংস করছে শির্ক নির্মূলের নামে, অথচ ব্রিটেনের রানীর জুতো পরিদর্শন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও পুঁজিপতিদের জিয়ারত করাকে ইবাদত ও শাফায়াতের মতই জরুরি মনে করছে।

ইরানের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ রাহিমিপুর আজগাদির মতে, ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যার সয়লাব ও বিষাক্ত প্রচারণার অবিরাম বোমা বর্ষণের জবাবে ইসলামের সত্যিকারের শিক্ষা এবং বাণীগুলোকে প্রচার করতে হবে। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট মাধ্যমকেও ব্যবহার করতে হবে যথাযথভাবে। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ পাশ্চাত্যের অনেক নারীবাদী বা একজন স্যেকুলার শিক্ষিত মহিলা অধ্যাপক যখন কুরআনে নারী অধিকারের বাণী দেখে বিস্মিত হন এবং ইসলামকে সবচেয়ে বেশি নারী-অধিকারের সমর্থক বলে স্বীকার করেন তখন তা সত্যকে তুলে ধরারই সুফল মাত্র। ল্যাটিন আমেরিকার কমিউনিস্ট নেতারাও যখন দেখেন যে ইসলাম শ্রমিকের অধিকার, দুর্বলদের অধিকার এবং বঞ্চিত ও নির্যাতিতদের অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রামের আহ্বান জানায় তখন তারা যারপরনাই বিস্মিত হন। ভারতের অনেক মূর্তিপূজারী শিক্ষিত ব্যক্তি যখন মহানবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের অনুপম চরিত্র এবং মহানুভবতার কথা শোনেন তখন তারা বিস্ময়ে বলে ওঠেন: এই মহামানবরা নিশ্চয়ই ঈশ্বর বা ঈশ্বরের মনোনীত নেতা ছিলেন!

পশ্চিমা মতলববাজরা বলছে, ইসলাম নাকি কুসংস্কারে বিশ্বাসী। অথচ বিশ্বনবী (সা.)’র পুত্র ইব্রাহিম যখন শিশু বয়সেই মারা যান তখন সূর্যগ্রহণ দেখা দেয়ায় মুসলমানরা এবং অমুসলমানরা যখন এই দুই ঘটনাকে সম্পর্কযুক্ত বিষয় বলে ভাবছিল তখন মহানবী (সা.) নিজেই এ ব্যাপারে মুখ খুলে স্পষ্টভাবে বলে দেন যে, সূর্য গ্রহণের সঙ্গে আমার ছেলের মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই। মহানবী (সা.) বিনা যুদ্ধে এবং কোনো রক্তপাত ছাড়াই পবিত্র মক্কা অধিকারের পর সব শত্রু ও বিধর্মীকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। অথচ এমন মহানবী (সা.) ও দয়ার সাগরকে পশ্চিমারা অবমাননা করছে নানাভাবে এবং এমনকি তাকে হিংস্র বলে তুলে ধরছে।

 অন্যদিকে পশ্চিমা যুব সমাজের জন্য ভেবে দেখার বিষয় হলো, পাশ্চাত্যের কৃষ্ণাঙ্গ ও সংখ্যালঘু স্থানীয় সম্প্রদায়গুলো আজো বর্ণবাদ এবং নব্য-দাসপ্রথার শৃঙ্খলে বন্দি।

পশ্চিমাদের সৃষ্ট গত প্রায় এক হাজার বছরের নানা গণহত্যার কথা বাদ দিলেও এমনকি এই আধুনিক যুগেও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা দশ থেকে বিশ কোটি বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে দুই দু’টি মহাযুদ্ধে। তারা পরমাণু ও রাসায়নিক অস্ত্রের মতো ব্যাপক-বিধ্বংসী মারণাস্ত্র এবং গণহত্যার সামগ্রী ব্যবহার করেছে নির্দ্বিধায়।
আর এই প্রেক্ষাপটেই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা পশ্চিমা যুব সমাজের উদ্দেশে বলেছেন:

‘ইউরোপ ও আমেরিকার ইতিহাস দাসপ্রথার জন্য লজ্জিত, তার মাথা হেট হয়ে আছে ঔপনিবেশিক যুগের জন্য। যারা অশ্বেতাঙ্গ ও যারা খ্রিস্টান নয় তাদের ওপর অত্যাচারের জন্য লজ্জিত এই ইতিহাস। ক্যাথলিক ও প্রটেস্টান্টদের মাঝে ধর্মের নামে অথবা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাতীয়তার নাম করে ঘটানো রক্তপাত নিয়ে তোমাদের গবেষক ও ইতিহাসবিদদের মাথা নত হয়ে আছে।’ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরো বলেছেন:

 ‘কেনো পশ্চিমের জনগণের বিবেক জেগে উঠতে ও সচেতন হতে কয়েক দশক বা কয়েক’শ বছর সময় লাগে? কেনো গণ-বিবেক বা সামষ্টিক বিবেকের পুনর্বিবেচনা কেবল সুদূর অতীতের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হয়, কেনো তা বর্তমান যুগের বিষয়গুলো নিয়ে করা হয় না? কেনো ইসলামী চিন্তাধারা ও সংস্কৃতির সঙ্গে আচরণের পদ্ধতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ব্যাপারে গণ-সচেতনতা সৃষ্টিতে বাধা দেয়া হচ্ছে? কেনো ঘৃণা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার পুরনো কূটকৌশলটিকে নজিরবিহীনভাবে তীব্রতর কোরে ইসলাম ও মুসলমানদের টার্গেট করা হয়েছে?” কেনো দুনিয়ার ক্ষমতাশালীরা চায় যে ইসলামী চিন্তাধারা কোণঠাসা হয়ে যাক ও অক্ষম হয়ে পড়ুক? ইসলামের কোন্ ব্যাখ্যা ও মূল্যবোধগুলো পরাশক্তিগুলোর নানা পরিকল্পনার পথে বাধা এবং ইসলামের ভুল চিত্র তুলে ধরার মাধ্যমে কোন্ স্বার্থকে রক্ষা করা হয়? তাই আমার প্রথম অনুরোধ হল, ইসলামের চিত্রকে মলিন করার পেছনের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যগুলো সম্পর্কে পড়াশুনা ও গবেষণা করো। আমার দ্বিতীয় অনুরোধ হলো, ইসলাম সম্পর্কে আগাম নানা রায় বা বাছ-বিচার (অনিরপেক্ষ মতামত) ও মিথ্যা প্রচারণার বন্যার-জবাবে তোমরা এই ধর্মটির সম্পর্কে সরাসরি জানার চেষ্টা করো।’#

 রেডিও তেহরান


শেয়ার করুন