পারবে বাংলাদেশ?

২২২৫তম ম্যাচ চলছে। কিন্তু টেস্ট ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেছেই মাত্র ৩৪ বার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তো আরও কম। মাত্র পাঁচবার। চতুর্থ ইনিংসে ২৮৬ কিংবা এর বেশি রান তাড়া করে জেতার সেই কীর্তিটাই গড়ার খুব কাছে বাংলাদেশ। কিন্তু খুব দূরেও। রান দরকার ৩৩, কিন্তু উইকেট আছে মাত্র দুটি। আশা হয়ে আছেন ৫৯ রানে অপরাজিত সাব্বির রহমান।
একসময় ভালোমতোই কঠিন এই পথ পাড়ি দিচ্ছিল বাংলাদেশ। জয়টা মনে হচ্ছিল খুব কাছের পথ। স্কোর ৫ উইকেটে ২২৭। ৫৯ রানের দূরত্বটা কি খুব বেশি? হাতে যখন ৫ উইকেট! সময়ও তো অফুরন্ত। আরও একটা দিন বাকিই পড়ে আছে। কিন্তু শেষ দিনে সমীকরণ যে এত কঠিন হয়ে দাঁড়াল, ১১ রানের মধ্যে বাংলাদেশ ৩ উইকেট হারাল বলে। এখান থেকেই তাইজুলের সঙ্গে সাব্বিরের নবম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১৫ রানের জুটি এখনো আশা জাগিয়ে রেখেছে।
এই টেস্টটা অবশ্যই অনেক দিন মনে রাখবে এ দেশের ক্রিকেট। বাংলাদেশ এমন রোমাঞ্চকর টেস্ট খেলেছেই হাতে গোনা। তবে সেটি আনন্দের স্মৃতি হয়ে থাকবে, নাকি আক্ষেপের—বলে দেবে চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দিন। আশা আর বাস্তবতা মিলে না গেলে এ–ও হয়ে থাকবে আরেক ‘মুলতান-আক্ষেপ’।
মুলতান টেস্টে টেল-এন্ডারদের নিয়েই বাংলাদেশের মুঠো থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন ইনজামাম। ৯৩ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত সাব্বিরকে এখন নিতে হবে সেই ভূমিকা। যদিও নবম উইকেটের জুটিটায় ১১ রানই এনে দিয়েছেন তাইজুল। কিন্তু আগামীকালের মহা গুরুত্বপূর্ণ সকালে আসল ভূমিকা নিতে হবে সাব্বিরকেই। এ ধরনের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য খুব কম বলে আজ রাতে ঠান্ডা মাথায় রণকৌশলও সাজিয়ে নিতে হবে। আজ যেমন এই জুটিতে তাইজুলই খেললেন ২৩ বল, সাব্বির মাত্র ৯টি। অথচ তাইজুলকেই আড়াল করে রাখার কথা। ওভারের প্রথম বলে রান নিয়ে তাইজুলকে স্ট্রাইকে এনে দেওয়া—এ–ও ছিল ভুল। ওভারের শেষ বলে ২ রান নেওয়াও তো ভুল।
বাংলাদেশের সাজঘর অবশ্য আরও বড় ভুল করেছে তাইজুল-শফিউলের আগেই কামরুলকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে। অভিজ্ঞতায় যেখানে কামরুল একেবারেই আনাড়ি।
ছোটখাটো ভুলেরও বড় মাশুল গুনতে হতে পারে। ম্যাচ এখন এমনই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে। অথচ মুশফিকুর রহিম যখন উইকেটে ছিলেন, সাব্বিরের সঙ্গে যখন অসাধারণ বললেও কম বলা হয়, এমন একটা জুটি গড়ে উঠেছিল, অসম্ভব শব্দটার শুরুর ‘অ’-কে ধীরে ধীরে ফিকে করে দিচ্ছিল বাংলাদেশ। জয়টাকে খুব সহজ মনে না হলেও খুব কঠিনও মনে হচ্ছিল না।
৮৭ রানের সেই জুটিটা দারুণভাবে সামলে নিয়েছিল ১৪০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে এক রকম ছিটকেই পড়া বাংলাদেশকে। দিনের শুরুতে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ইংল্যান্ডকে ২৪০ রানে অল আউট করে দিয়েছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮৬। তামিম মাত্র ৯ রান করে ফিরে গেলেও ইমরুল-মুমিনুল ভালো শুরুই এনে দিয়েছিলেন। বিশেষ করে ৬১ বলে ৪৩ করা ইমরুল শুরুতে ওই গতি না এনে দিয়ে অতিরক্ষণাত্মক খেললে বাংলাদেশ চাপেই পড়ে যেত। সমস্যা হলো ইমরুল, মুমিনুলের পর মাহমুদউল্লাহও উইকেটে সেট হয়ে ফিরে গেলেন।
যাঁর ভুল শটে প্রথম ইনিংসে ৪০-৫০ রানের সম্ভাব্য লিড থেকে বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ, সেই সাকিব বল হাতে ৮৫ রানে ৫ উইকেট নিয়ে পাপমোচন করার পরও কাজ শেষ মনে করেননি। প্রথম ইনিংসের শেষ ভুল শোধরানোর দৃঢ় প্রতিজ্ঞাই ছিল তাঁর ব্যাটিংয়ের মেজাজে। কিন্তু তাঁর ২৪ রানের ইনিংসটাও শেষ হলো আক্ষেপ নিয়ে। ৫ উইকেটে ১৪০; বাংলাদেশের তো আর কোনো আশাই নেই!
সেখান থেকেই সাব্বির-মুশফিকের সেই জুটি; যা ভাঙল গ্যারেথ ব্যাটির অকস্মাৎ লাফিয়ে ওঠা একটা বল সাপের ফণার ছোবলে মুশফিককে শর্ট লেগে ক্যাচ দিতে বাধ্য করায়। ভাঙা উইকেটে তিনিই আশার পাজলগুলো জোড়া লাগাচ্ছিলেন। ১২৪ বলে মাত্র ৩টি চারে করেছেন ৩৯। পাথুরে পা কোনোমতে টেনে বের হলেন মাঠ থেকে।
মেহেদী মিরাজ ব্যাট হাতে নিজের অলরাউন্ডার পরিচয়কে চেনাতে ব্যর্থ হলেন টেস্টের কঠিনতম পরীক্ষায়। আর ৬৪ ও ১৩টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে এমন দুজনকে বসিয়ে রেখে তাঁকে আগে ব্যাট করতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত ভুল দ্রুতই প্রমাণ করে কামরুল ফিরলেন শূন্য রানে। অভিষেকেই জোড়া শূন্য! ১১ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে স্কোর হয়ে গেল ৮ উইকেটে ২৩৮! টেস্ট আজই শেষ হয়ে যায় কি না, তখন এমনই শঙ্কা।
নিভু নিভু প্রদীপটাই জ্বালিয়ে রেখেছে নবম উইকেট জুটি। আশা নিয়ে এখনো উইকেটে আছেন সাব্বির। অভিষেক টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সাতে নেমে ফিফটি করা মাত্র চতুর্থ ব্যাটসম্যানের কীর্তিও গড়েছেন। কিন্তু সাব্বিরের জন্য আরেক মঞ্চ প্রস্তুত। বাংলাদেশের ক্রিকেটে মহানায়ক হয়ে ওঠার।

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৯৩ (মঈন ৬৮, বেয়ারস্টো ৫২; মিরাজ ৬/৮০, সাকিব ২/৪৬, তাইজুল ২/৪৭)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৪৮ (তামিম ৭৮, মুশফিকুর ৪৮, মাহমুদউল্লাহ ৩৮, সাকিব ৩১; স্টোকস ৪/২৬, মঈন ৩/৭৫, রশিদ ২/৫৮, ব্যাটি ১/৫১)
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ২৪০ (স্টোকস ৮৫, বেয়ারস্টো ৪৭, ওকস ১৯*; সাকিব ৫/৮৫, তাইজুল ২/৪১, মিরাজ ১/৫৮, কামরুল ১/২৪)
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৭৮ ওভারে ২৫৫/৮ (তামিম ৯, ইমরুল ৪৩, মুমিনুল ২৭, মাহমুদউল্লাহ ১৭, সাকিব ২৪, মুশফিকুর ৩৯, সাব্বির ৫৯*, মিরাজ ১, কামরুল ০, তাইজুল ১১*; ব্যাটি ৩/৬৫, ব্রড ২/২৬, মঈন ২/৬০, রশিদ ১/৫৫)


শেয়ার করুন