পানের দামে চাষীর ঘরে আনন্দ

panশাহেদ ইমরান মিজান, সিটিএন:
পানের নাম এলে সবার আগে যে জায়গাটির নাম সামনে চলে আসে তা হলো মহেশখালী। মহেশখালী পানের জন্য বিখ্যাত। শেফালী ঘোষের গানেও তার প্রমাণ মেলে। “যদি সুন্দর এক খান মুখ পাইতাম-মহেশখালীর পানের খিলি তারে বানাইয়া খাবাইতাম”। মহেশখালীর ৮০ শতাংশ মানুষ পান চাষের সাথে জড়িত রয়েছে। বর্তমানে রয়েছে পানের বাড়তি দাম। বিগত দু’মাস ধরে পানের এই উচ্চমূল্য বলবৎ রয়েছে। পানের উচ্চমূল্য পাওয়ায় মহেশখালী ৮০ শতাংশ মানুষ খুশিতে দিন কাটাচ্ছে। শুধু মহেশখালী নয় জেলার উখিয়া, কক্সবাজার সদরসহ অন্যান্য এলাকারাও এখন খুশিতে আত্মহারা।
পানচাষীরা জানান, বতর্মানে বছরের রেকর্ড পরিমাণ দামে পান বিক্রি হচ্ছে। এক বিড়া বড় আকারের পান বতর্মানে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকার বিক্রি হচ্ছে বিড়াপ্রতি -৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। ছোট পান ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পানের এই দাম ন্যায্য বলে জানান চাষীরা। কেননা বীজসহ সরঞ্জাম খরচ বেশি পড়ায় চাষ খরচ বেশি গেছে। তার উপর মড়কে ক্ষতি হয়েছে অনেক পান বরজ। তাই বাড়তে দাম না পেলে লোকসান গুণতে হতো। দাম পাওয়ায় খরচ উঠে লাভ হওয়ার আশা করছেন।
মহেশখালীর হোয়ানকের পানচাষী এনামুল হক জানান, চলতি বছর অসময়ে বৃষ্টি হয়েছে। এতে মড়ক পড়ে অনেক পানের বরজের ক্ষতি হয়েছে এবং সব বরজের কিছু কিছু ক্ষতি হয়েছে। এতে করে চাষীরা প্রথম দিকে ভেঙে পড়েছিলেন। কিন্তু পানের দাম বাড়ায় চাষীরা অন্তত লোকসান থেকে মুক্ত হবে এবং দাম অব্যাহত থাকলে লাভের মুখ দেখবে।
পান ব্যবসায়ী বজল আহমদ জানান, শীত মৌসুমে মিষ্টি পানের কদর বাড়ে। বতর্মানে মহেশখালীতে ৮০ শতাংশ পান চাষ হচ্ছে শীতকালে। বিলের বরজে এসব পান উৎপাদন হচ্ছে। কদর বাড়ায় পানের দামও বেড়েছে।
তিনি আরো জানান, মহেশখালীতে মিষ্টি পান বিক্রির হাটবাজারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হাটবাজার বসে বড় মহেশখালী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বড় মহেশখালী মাঠে। আরো রয়েছে, কালারমারছড়া বাজার, হোয়ানক টাইমবাজার, কেরুনতলী বাজার, ছোট মহেশখালী লম্বাঘোনা বাজার, শাপলাপুর বাজার হচ্ছে মিষ্টি পান বিক্রয়ের বড় বাজার। এছাড়াও বর্তমানে চাহিদার ভিত্তিতে উপজেলা আরো অর্ধশত ছোট পানের বাজার রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা পান কিনতে এসব বাজারে আসেন। এসব বাজারে প্রতি সপ্তাহে ১৫ কোটি টাকারও বেশি পান বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী, শাপলাপুর, হোয়ানক, কালারমারছড়ায় ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ১৫’শ হেক্টর জমিতে মিষ্টি পানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ বিলের বরজ।
মহেশখালী উপজেলা পানচাষী সমিতির সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘চলতি মৌসুমে মড়ক পড়ে পান বরজের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এতে চাষীরা অনেক দু:শ্চিন্তায় ছিল। পানের দাম বাড়ায় তারা আশার আলো দেখছেন। এখনো পুঁজি উঠে আসেনি। পানের দাম মৌসুম পর্যন্ত থাকলেই পুঁজি উঠে লাভের আশা করা যায়।’ পান চাষে সরকারি পৃষ্টপোষকতা থাকলে পানচাষের সম্ভাবনা আরো বাড়বে জানা তিনি।
মহেশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুল আলম কুতুবী বলেন, ‘পানচাষীদের প্রশিক্ষণসহ সরকারিভাবে অনেক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে মড়কসহ নানা সমস্যা নিয়ে তাৎক্ষণিক পরামর্শ ও সমাধান দেয়া হচ্ছে। এই জন্য আমাদের উপ-সহকারী কৃষিকর্মকর্তারা সব সময় মাঠে কাজ করছেন।’


শেয়ার করুন