পানিয় জলের তীব্র সংকটে লামাবাসি

unnamedএম বশিরুল আলম,লামা :

পৌরকর্তৃপক্ষের স্বার্থান্ধতায় বিএমডিএফ’র ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত পানি সরবরাহ কেন্দ্রটি মাতাভারী প্রতিষ্ঠানে রুপ নিয়েছে

ভর মৌসুমেও লামায় পানীয়জলের তীব্র সংকট। বিএমডিএফ”র অর্থায়নে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত লামা পৌরসভার সার্ফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি মুখ থুপড়ে পড়েছে। পানিয় জলের চাহিদা মেটাতে স্থানীয়রা ছড়া-নালা ও নদীর পানি পান করছেন। এর ফলে পেটের পীড়াসহ পানিবাহিত নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু, নারী ও বয়:বৃদ্ধরা। এলাকায় নিরাপদ পানিয় জল প্রাপ্তির দাবী যে কোন সময় রাজপথে সরব অবস্থান নিতে পারে স্থানীয়রা।
নাগরিক জীবন মান উন্নয়নের লক্ষে ২০০২ বাণিজ্যিক এলাকা নিয়ে লামা সদর ইউনিয়নের একটি বড় অংশকে পৌরসভা ঘোষণা করেন সরকার। পৌর এলাকায় বিদ্যুতায়ন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা জোরদার, সড়ক, কালভার্ট, ব্রীজ নির্মাণ, বিশুদ্ধ পানিয় জল সরবরাহসহ নাগরিক জীবন মান উন্নয়নে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নীতিমালা অনুসরণ করা পৌর কর্তৃপক্ষের কাজ। প্রায় ত্রিশ হাজার জনসংখ্যা নিয়ে পৌর সভার ৯টি ওয়ার্ডে ৬ হাজার পরিবার পানীয় জলের সংকটে থাকে বারমাস। পানির অপর নাম জীবন। পানিয় জলের সংকট নিরসনে ২০০৪ সালে বিএমডিএফ কর্তৃক পৌর এলাকায় ৪ নং ওয়ার্ডে মাতামুহুরী নদীর তীর ঘেষে একটি পাহাড় চুড়ায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন কাজ শুরু করেন। শুরুতেই কাজের সাসটেন্ট্যাবল ডিজাইন-পরিকল্পনা না করে, সংশ্লিষ্টরা স্বার্থান্ধ হওয়ায় স্থাপিত প্লান্টটি বর্তমানে পৌরবাসীর জন্য মাথাভারী প্রতিষ্ঠানে রুপ নেয়। প্লান্ট স্থাপনে ৬ কোটি টাকা বিদেশি ঋণের বোঝা মাতায় নিয়েও “ইঁদুর কপালে’’ লামাবাসি বিশুদ্ধ পানিয় জল পাচ্ছে না এখনো। বিগত তিন বছর আগেথেকে পৌর কর্তৃপক্ষ পানির লাইন সংযোজন দিয়ে স্থানীয়দেরকে পানি সরবরাহের নামে ফাঁকি দিয়ে চলছে। মাঝে মাঝে পানি দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালায় পৌর কর্তৃপক্ষ। প্লান্ট থেকে সরবরাকৃত এসব পানি গ্রাহকদের ট্যাংকি অবধি না পৌছে বাণিজ্যিক এলাকার অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে অনেক গ্রাহক হাজার হাজার টাকা খরচ করে পানি না পেয়ে চরম হয়রানির পর আবেদনের মাধ্যমে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাতে বাধ্য হন। পানি নিয়ে পৌরসভার নানাবিধ হয়রানির কথা উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাজার ব্যবসায়ীর। লামা বাজারের আরামবাগ হোটেল মালিক সবুজ, চৌরঙ্গি হোটেল মালিক রতন দাশসহ কয়েকজন আবাসিক গ্রাহক অভিযোগ করে জানান, পৌরসভা বছরের মাত্র কয়েকবার পানি সরবরাহ করে থাকেন, তাও ময়লা ও দুর্গন্ধময়।
দক্ষ জনবল ও সুষ্ঠু তদারকির অভাবে কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে জনগুরুত্বপুর্ন এই ওয়াটার প্লান্টটি পৌরবাসির জন্য ঋণ যন্ত্র হিসেবে কাজ করছে। অপরদিকে কদিন পরপর এটি সংসংস্কারের নামে রাজস্ব তহবিলের প্রচুর অর্থ চলে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের পকেটে। ভোক্তভুগি স্থানীয়রা জানান, কয়েক কোটি বিদেশি ঋণের টাকায় স্থাপিত সার্ফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি একটি পাহাড়ের প্রাকৃতিক কাঠামো নষ্ট করে, কৃত্রিম শোভা বর্ধন ছাড়া কোন কাজেই আসেনি। এই প্লান্ট এখন মডেল হিসেবে আচার্য্য বস্তুর স্থান দখল করেছে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগের লোকদের কাছে। এটি দেখার জন্য বিএমডিএফ’র বড় বড় ইঞ্জিনিয়ার ও দাতা সংস্থার লোকজন আসে স্থাপত্য এলাকায়। পানি সরবরাহের এই প্লান্টটি এখন কোন কোন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির জন্য বহুমাত্রিক সুবিধা বহন করলেও বিশুদ্ধ পানিয় জল সংকটে পতিত লামা পৌরবাসির জন্য মাথাভারী একটি প্রতিষ্ঠান। প্লান্ট স্থাপনা নির্মাণের ৫ বছর না যেতেই ফাটল ধরেছে, পাহাড় চুড়ায় নির্মিত পানিশোধণাগার ভবনের বিভিন্ন অংশে। অপরদিকে মাতামুহুরী নদীর জলদ্বার পরিবর্তন হয়ে প্রায় তিন শ মিটার দুরে পানি প্রভাহিত হচ্ছে। এর ফলে উচু পাহাড়ে স্থাপিত রিজার্ভ ট্যাংকিতে পানি উঠানোর সাভাবিকতা ব্যহত হচ্ছে। এ ব্যপারে লামা পৌরসভার মেয়র আমির হোসেন জানান, এই প্লান্টটি রক্ষণা-বেক্ষণ ব্যয় বহনে বর্তমানে পৌরসভার আরো ফান্ড দরকার এবং জনবল অপ্রতুল। বিষয়টি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের মনযোগ আকর্ষণ করেছি।
বিশুদ্ধ পানিয় জলের সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।


শেয়ার করুন