পাঠ্যবইয়ে ভুলে দায়ীরা অবশেষে সাজা পাচ্ছেন

4dca987ab240161c43a1ec0f68d900e2-untitled-4প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিনা মূল্যের পাঠ্যবইয়ে ভুলের জন্য দায়ী জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রথমে দায়ী ব্যক্তিদের এনসিটিবি থেকে সরিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হবে। এর ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠ্যবইয়ের ভুল তদন্তে গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন। এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পাঠ্যবইয়ের ভুল তদন্তে গঠিত কমিটি ভুলের জন্য দায়ী এনসিটিবির কয়েকজন কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে সচিবের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। তবে ব্যবস্থাটি কী হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি প্রতিবেদনে। কমিটি বলেছিল, কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটি মন্ত্রণালয় ঠিক করবে।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন ওই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান। তিনি বলেন, ওই কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই এ জন্য দায়ী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। তিনি দায়ী ব্যক্তিদের নাম না বললেও সংখ্যাটি চার-পাঁচজন হবে বলে জানান।
তবে এর আগে এনসিটিবির প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পাঠ্যবইয়ে ভুলের ঘটনায় এনসিটিবির প্রধান সম্পাদক প্রীতিশ কুমার সরকার, ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ লানা হুমায়রা খানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। আর আর্টিস্ট কাম ডিজাইনার সুজাউল আবেদীনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির একাধিক সূত্র বলেছে, লানা হুমায়রা খান তৃতীয় শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’ পরিমার্জনের দায়িত্বে ছিলেন। এই বইয়েই ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতাটি ভুলভাবে ছাপা হয়েছে। যেটিকে এবারের সবচেয়ে বড় ভুল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে এনসিটিবিকে ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ করতে পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছিল। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বলেন, এনসিটিবিকে সংস্কার করা হবে।
চলতি শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে বিভিন্ন ধরনের ভুলভ্রান্তি হয়। পাশাপাশি কয়েকটি পাঠ্যপুস্তক থেকে নামকরা কয়েকজন প্রগতিশীল লেখকের কিছু গল্প-কবিতা বাদ দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে আন্দোলন চলছে। অভিযোগ উঠেছে, কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক একটি সংগঠন পাঠ্যবই থেকে যেসব বিষয় বাদ দেওয়ার দাবি করেছিল, এবারের পরিবর্তন তার সঙ্গে মিলে গেছে। পাঠ্যবইয়ে ভুলভ্রান্তি নিয়ে গণমাধ্যমে খবর বের হওয়ার পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রুহী রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই কমিটি শুধু ভুলের বিষয়টিই তদন্ত করেছে। পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তনের বিষয়টি তাঁদের তদন্তের কার্যপরিধিতে ছিল না।
এখনো ভুলের সংশোধনী নেই: শিক্ষাবর্ষ শুরুর দুই মাস পেরিয়ে মার্চ মাস শুরু হয়ে গেলেও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ভুলে ভরা পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী এখনো বিদ্যালয়গুলোতে পাঠাতে পারেনি এনসিটিবি। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ভুলের জন্য করা তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য তাঁরা অপেক্ষা করছেন। কিন্তু প্রতিবেদন জমা দেওয়ার এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও সংশোধনী দেওয়া হয়নি। ফলে এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা আজ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ভুলের সংশোধনী ঠিক করে তা অনুমোদনের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসামাত্রই সংশোধনী দেওয়া হবে।


শেয়ার করুন