পাঁচ শত্রু মারলেই বেঁচে যাবে পৃথিবী

সিটিএন ডেস্কঃ

মানুষের বসবাসের উপযোগী একমাত্র গ্রহ পৃথিবী। কিন্তু আজ সে ভালো নেই। ভূমির যথেচ্ছ ব্যবহার থেকে শুরু করে দূষণ-নানা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে বিষিয়ে উঠেছে তার পরিবেশ ও প্রকৃতি। বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। কমে যাচ্ছে জীবজন্তুর সংখ্যা। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে মানুষের অস্তিত্ব।

পৃথিবীর এই করুণ দশার পেছনে অসংখ্য কারণ রয়েছে। তার মধ্যে এমন পাঁচটি কারণ রয়েছে যেগুলোকে সবচেয়ে বড় হুমকি বা শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা এও বলেছেন, সবাই মিলে এই পাঁচ শত্রুকে খতম করতে পারলেই শুধু বাঁচতে পারে পৃথিবী। চলতি সপ্তাহেই চীনের কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জলবায়ুবিষয়ক কপ-২৬ সম্মেলনের প্রথম ধাপের বৈঠক। বিশ্বের প্রকৃতি জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস এড়ানোর নানা কৌশল ও নীতি নিয়ে আলোচনা করবেন বিভিন্ন দেশের সরকার ও নীতিনির্ধারকরা।

গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি সামনে রেখে ইন্টারগভর্নমেন্টাল সাইন্স-পলিসি প্লাটফর্ম অন বায়োডাইভারসিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিসেস (আইপিবিইএস) প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাঁচ প্রধান কারণ চিহ্নিত করেছে। কারণগুলো হচ্ছে-ভূমি ও সমুদ্রে বিরূপ পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ ও ভিন প্রজাতির আগ্রাসন। বিশ্লেষকরা বলছেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সফল হতে হলে বিশ্বের নীতিনির্ধারকদের এই পাঁচটি কারণ মোকাবিলা করতেই হবে।

ভূমির বিরূপ পরিবর্তন : বিশ্বের জনবসতি বাড়ছে। বাড়ছে খাদ্যের চাহিদা। সময়ের সঙ্গে এই চাহিদা আরও বাড়বে। কিন্তু পৃথিবীর সম্পদের পরিমাণ সীমিত, ভূমিও ব্যতিক্রম নয়। বাড়ন্ত জনসংখ্যার মুখে খাবার তুলে দিতে গিয়ে বহুকাল ধরে অনাবাদি থাকা জমি/ভূমিকে কৃষির আওতায় আনতে হচ্ছে। ফলে ওই সব এলাকায় বসবাস করা জীবজন্তু তাদের আবাস হারাচ্ছে।

দৃষ্টান্তস্বরূপ, এভাবে নতুন নতুন আবাদি জমির প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রেইরি নামে বিস্তীর্ণ তৃণভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ম্যাডিসনের এক গবেষণাতে বিষয়টি উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, ২০০৮ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত মাত্র আট বছরে এই অঞ্চলের প্রায় ৪০ লাখ হেক্টর জমি নতুন করে চাষাবাদের আওতায় আনা হয়েছে। পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে এই প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।

প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যাপক ব্যবহার : বন্যপ্রাণী শিকার, মাছ ধরা আর গাছ কাটা থেকে শুরু করে তেল, গ্যাস ও পানির মতো প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যাপক ও যথেচ্ছ ব্যবহারে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে। খনিজ পানির উত্তোলনে জীববৈচিত্র্যের জন্য নতুন সংকট সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্বের বহু দেশে কৃষক তার খেতে সেচ দেওয়ার জন্য ও খনি কোম্পানিগুলো খনি থেকে ব্যাপক হারে পানি তুলছে। এর ফলে নদ-নদী ও খাল-বিল শুকিয়ে যেতে পারে। বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে মিঠাপানির নানা প্রজাতির মাছ।

জলবায়ু পরিবর্তন : জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। এখনো সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। শুধু তাই নয়, এই মুহূর্তে জলবায়ু পরিবর্তনকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসাবে দেখা হচ্ছে। জাতিসংঘের ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের সর্বশেষ রিপোর্ট মতে, ১৭৫০-২০১৯ সালের মধ্যে পৃথিবীর বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড ২৮০ পিপিএম থেকে বেড়ে প্রায় ৪১০ পিপিএম হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে গড় তাপমাত্রা প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। আইপিসিসি বলছে, ২০১৭ সালে বাতাসে যত পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড ছিল, আগামী এক দশকের মধ্যে তাকে অন্তত ৪৯ শতাংশ কমাতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গড় উত্তাপ যদি আর ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তাহলে বাস্তুতন্ত্রে প্রবল আঘাত লাগবে।

দূষণ : লাগাম ছাড়া শিল্পায়ন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, কৃষিক্ষেত্রে যথেচ্ছ রাসায়নিকের প্রয়োগ, বনাঞ্চলের সঙ্কোচন, যত্রতত্র দূষিত বর্জ্য নিক্ষেপ করার ফলে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড ফর নেচার বা ডব্লিউডব্লিউএফ প্রতি দুবছর অন্তর লিভিং প্ল্যানেট রিপোর্ট শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০২০ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে ডব্লিউডব্লিউএফ জানিয়েছে, ১৯৭০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে পৃথিবীর পাখি, মাছ, উভচর প্রাণী ও সরীসৃপদের সংখ্যা অন্তত ৬৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। নদী বা জলাভূমিতে থাকে, এমন প্রাণীর সংখ্যা প্রায় ৮৪ শতাংশ কমেছে।

ভিন প্রজাতির আক্রমণ : মানুষের হাত ধরে এক অঞ্চলের বিশেষ এক প্রজাতি আরেক অঞ্চলে স্থানান্তরিত হচ্ছে। ফলে স্থানীয় প্রজাতিগুলোর প্রতি হুমকি হয়ে উঠছে বিশেষ ওই প্রজাতি। দৃষ্টান্তস্বরূপ, আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণে গফ আইল্যান্ডে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রোডেন্ট নামের ইঁদুরের উৎপাত ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্বীপটিতে বাসা করে এমন সামুদ্রিক পাখির হাজার হাজার ডিম ও বাচ্চা খেয়ে ফেলে এসব ইঁদুর। ঊনবিংশ শতকের কোনো একসময় নাবিকদের নৌকায় করে দূরের এই দ্বীপে পৌঁছে গিয়েছিল এই প্রজাতির ইঁদুর। এ ধরনের আরও অনেক সমস্যা রয়েছে যেদিকে বিশ্বের নীতিনির্ধারকদের বিশেষ নজর দিতে হবে।


শেয়ার করুন