পাঁচ বইয়ের লেখক এক মুচির গল্প

5-poet-400x240আমাদের সময়.কম:

বই লিখেছেন পাঁচটি। বিভিন্ন এ্যাওয়ার্ডও জিতেছেন। জুতো সেলাইয়ের বদলে তার কাছে কবিতা শুনতেই আসে বেশির ভাগ মানুষ। এমন এক মুচির গল্প পড়লে লেখককে গাঁঞ্জাখোর বলে বসতে পারেন। মনে মনে গালিও দিতে পারেন। তবে ঘটনা এক চুলও মিথ্যে নয়।
মুনাওয়ার শাকিল নামের এক মুচির সন্ধান পাওয়া গেছে। জুতো মেরামতের কাজ করেই তিনি লেখালেখি করেন। মধুর সুরে আবৃত্তি করতে পারেন ছড়া কবিতা। সেসব শুনতে লাইন পড়ে যায় মানুষের। মুনাওয়ার পাকিস্তানের ফয়সালাবাদ শহরের এক রাস্তার মুচি। এ আয়েই চলে তার সংসার।
মুনাওয়ার অনেক আগেই কবি খ্যাতি পেয়েছেন। কেবল তাই নয়, এলাকার লোকজন তাকে তাদের সংস্কৃতির ধারক মনে করে।
মুনাওয়ার শাকিলের জন্ম ১৯৬৯ সালে। বাবা মা অশিক্ষিত হওয়ায় স্কুলে পাঠাননি। লেখাপড়াটাও সেভাবে হয়নি। তবে মুনাওয়ারের কবিত্বের প্রকাশ পায় ১৩ বছর বয়সেই। ২০০৪ সালে প্রকাশ হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বিস্তৃত বোধ’।
মুনাওয়ার বলেছেন, তিনি এই পেশায় এসেছেন বংশীয় ঐতিহ্য থেকেই। সারাদিন জুতো সেলাইয়ে আয় হয় ৩০০ রুপি। এখান থেকে প্রতিদিন ১০ রুপি জমা রাখেন বই প্রকাশের জন্য।
মুনাওয়ারের দ্বিতীয় বই ‘ভিনদেশে গায়কদল’ প্রকাশ হয় ২০০৫ সালে। তৃতীয় বই ‘শতাব্দির দেয়াল’ ২০০৯ সালে, চতুর্থ বই ‘ঝরা পাপড়ির গল্প’ ২০১১ সালে এবং পঞ্চম বই ‘মাটি হয় চোখ’ প্রকাশ হয় ২০১৩ সালে।
মুনাওয়ারের এই পাঁচটি গ্রন্থই বিভিন্ন পর্যায়ে এ্যাওয়ার্ড জিতেছে। তিনি রয়েল সাহিত্য একাডেমি এবং পাঞ্জাবি লেখক সংঘের সদস্য। দেশটির প্রসিদ্ধ লেখক সংগঠন ‘পাকিস্তান রাইটার্স গিল্ড’ এবং চন্দর বার এ্যাওয়ার্ড জিতেছেন।
মুনাওয়ার জুতো সেলাইয়ের পাশাপাশি খবরের কাগজও বিক্রি করেন। মিডিয়ার সঙ্গে কথোপকথনে তিনি বলেন, সমাজের অভিজাত শ্রেণির মানুষদের জন্য সবাই লেখে কিন্তু নিন্মশ্রেণির মানুষের জীবন সংগ্রাম নিয়ে লেখার মানুষ নেই। আমি এদের নিয়ে লিখি। যার ফলে এই শ্রেণির মানুষ আমাকে গ্রহণ করেছে।
মুনাওয়ার শাকিল কবিতা ও গল্পের পাশাপাশি গানও লিখেন। চলতি বছরের শেষ দিকে তার লেখা ১১২ টি গান নিয়ে একটি বই প্রকাশের কথা রয়েছে।
মুচির কাজ করা নিয়ে মুনাওয়ারের বক্তব্য, এ কাজে আমার কোনো লজ্জা নেই। কষ্ট করলে সফলতা আসে। এটাও একটি সম্মানজনক কাজ।
মুনাওয়ার চান তার বই থেকে মানুষের ভেতর কাব্যবোধ তৈরি হোক। অন্যায় দূর হোক এবং সমাজ থেকে নীচু মানসিকতা চলে যাক। সমাজের এসব দেখে তিনি দুঃখবোধ করেন।


শেয়ার করুন