পর্যটন শহরের প্রতিটি রাস্তা মরণফাঁদ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

  • মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে শহরের প্রধান সড়ক ও উপ-সড়কগুলো। প্রতিদিন কোন না কোন দূর্ঘটনা ঘটছে প্রধান সড়ক ও অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে। সড়কগুলোতে উন্নয়ন কাজের নামে দীর্ঘদিন গর্ত করে রাখা হয়েছে। আর এসব গর্তযুক্ত সড়কগুলোই সাধারণ মানুষের ও যানবাহনের এবং যানবাহনের মালিকদের এমনকি যাত্রীদের গলার কাঁটা এখন। যেকারণে এসব সড়কগুলোতে প্রতিদিন ঘটছে দূর্ঘটনা।

দেখা গেছে, শহরের প্রধান সড়কটির কোন না কোন জায়গায় পানির পাইপ স্থাপন ও সড়কের অপর পাশে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। ড্রেনের জন্য গর্ত করে উপড়ে ফেলা মাটিগুলো রাখা হচ্ছে সড়কের অপর পাশে। আর ওই মাটির উপর দিয়ে চলতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ এমনকি সমস্ত যানবাহনকে। উঁচু-নিচু হয়ে থাকা মাটির উপর যানবাহন চলতে গিয়ে বেশ কয়েকটি দূর্ঘটনাও ঘটেছে ইতিমধ্যে।
তারাবনিয়ারছড়ার স্থায়ী বাসিন্দা মোহাম্মদ আলম জানান, গত কয়েকদিন আগে তারাবনিয়ারছড়া এলাকায় দুটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। সড়কের অপর পাশের সরু রাস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক যাওয়ার সময় বিকট শব্দে পড়ে যায় মালবাহী একটি ট্রাক।
এসময় ট্রাকে থাকা মালামালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ট্রাকের চালক ও হেলপার জানে বেঁচে গেলেও আহত হন তারা। এর পরেরদিন আরও একটি টমটম পড়ে যায় গর্তে। ওই টমটমে থাকা সমস্ত মালপত্র এবং কয়েকজন লোক মুহুর্তেই গর্তে পড়ে যায়। এভাবে দৈনিক একটা না একটা দূর্ঘটনা ঘটছে এই এলাকায়।

শহরের হাসপাতাল সড়কের সুজন দাশ বলেন, প্রধান সড়কের মতো অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোরও একই অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে ড্রেনের কাজ না করে ফেলে রাখায় সামনের ড্রেনেই পড়ে যায় একটি মালবাহী ট্রাক। এসময় ট্রাকের দুটি চাকা সম্পূর্ণ ড্রেনের ভিতর ঢুকে পড়ে। ওই ট্রাকের আশে পাশে থাকা অন্যান্য গাড়ির চালক ও যাত্রীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে নিত্যদিন ঘটছে দূর্ঘটনা। আর একবার যদি এরকম ঘটনা ঘটে পুরোদিন যানজট থাকে।
পানবাজার রোডের জাফর আলম জানান, গত ২৬ এপ্রিল রাতে বিকট শব্দ হয় পেট্রোল পাম্প এলাকায়। বের হয়ে দেখি পুরো আস্ত গ্যাস সিলিন্ডারভর্তি একটি ট্রাক পড়ে যায় সড়ক উন্নয়ন কাজের জন্য করা গর্তে। সাধারণ মানুষ ছুটোছুটি করতে গিয়ে আরও কয়েকজন আহত হয়। ভাগ্য ভালো ছিল গ্যাস সিলিন্ডার থেকে অগ্নিকান্ড ঘটেনি। তারপরও সিলিন্ডার ও ট্রাক মালিকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কোন রকম জানে বেঁচে যায় ট্রাক চালক ও হেলপার।
ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহেদ সালাউদ্দিন এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমি দুনিয়ার এত উন্নয়ন দেখেছি কিন্তু কক্সবাজারের মতো এমন উন্নয়ন কর্মকান্ড কোথাও দেখেনি। প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি প্রত্যেকটা রাস্তা ব্লক, খোদা না করুক; এই মুহুর্তে কক্সবাজারে যদি বড় কোন দূর্ঘটনা হয় যেমন অগ্নিকান্ড ভূমিকম্প তাহলে উদ্ধারের কোন পথ নাই। যে যেভাবে আছে সেভাবেই মৃত্যুবরণ করতে হবে। একজন প্রেগনেন্সি মহিলা এবং হার্টের রোগী জরুরি প্রয়োজনে ডাক্তারের কাছে যাবে, হাসপাতালে নিয়ে যাবে এমন কোন রাস্তা নাই।
প্রত্যেকটা রাস্তা উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিতভাবে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। এই মুহুর্তে কক্সবাজার পৌরসভা এলাকায় বসবাস করেন এমন কোন মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। প্রধান সড়ক থেকে আরম্ভ করে পৌরসভার প্রত্যেকটা অলিগলিতে ফায়ার বিগ্রেডের গাড়ি এবং এ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ এবং বের হওয়ার কোন ব্যবস্থা নাই। কোন বিকল্প ব্যবস্থা না করে এমন উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফল কক্সবাজারবাসী ভোগ করতে পারবে কিনা আমার মনে হয় না।
কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দিন জানান, ঝুঁকি আছে তারপরও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে সড়কটি দিয়ে। কেউ হয়তো ঝুঁকি এড়িয়ে যেতে পারছে আর কেউ কেউ এই মরণফাঁদের কবলে পড়ে সর্বশান্তহচ্ছে। সড়কগুলোর অপর পাশের মাটি খুঁড়ে উন্নয়ন কাজ করায় অন্য পাশ দিয়ে যানবাহন চলতে হয়।
বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে কোন না কোন দিন উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ছে ট্রাক, টমটম, মোটর সাইকেল সহ সংশ্লিষ্ট যানবাহন। এতে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন অনেকে। এসব দূর্ঘটনায় বড় কোন ক্ষতি না হওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিষয়গুলো দ্রুত সুরাহা করা দরকার।
কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ হেলাল উদ্দিন কবির জানান, চলমান কাজের জন্য মালামালগুলো এখানে পাওয়া না যাওয়ায় এবং লকডাউন চলমান থাকায় কাজের ধীরগতি হয়ে গেছে। তারপরও শ্রমিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজগুলো সমাপ্ত হয়।
এদিকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) ও কক্সবাজার পৌর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কক্সবাজারের সচেতন মহল দাবি তুলেছেন; শহরের প্রধান সড়ক ও উপসড়কগুলোর কারণে বড় কোন দূর্ঘটনা না ঘটার আগেই যাতে সঠিক ও কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হয়।


শেয়ার করুন