পর্যটন বর্ষ ও বীচ কার্ণিভালের প্রভাব পড়েনি কক্সবাজারে

DSC_0023

বিশেষ প্রতিনিধি ॥

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে ও বছরজুড়ে দেশি-বিদেশী পর্যটক বাড়াতে কক্সবাজারে প্রথম বারের মত আয়োজিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক মেগা বীচ কার্ণিভাল। মূলত সরকার ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করায় তারই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের পর্যটনকে প্রসার করার উদ্দেশ্য নিয়েই বীচ কার্ণিভালের আয়োজন করা হয়।

বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও কক্সবাজার বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির যৌথ উদ্যোগে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি তিন দিন ব্যাপী জাগজমক ভাবে বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে এই কার্ণিভাল অনুষ্ঠিত হয়। তবে এতো বড় আয়োজনের পরও বাস্তবতা ভিন্ন। অন্যান্য বছরের মতই এবছরও স্বাভাবিকভাবেই পর্যটক এসেছে কক্সবাজারে। অন্যান্য বছর যেমন পর্যটন মৌসুমে ব্যাপক পর্যটকের সমাগম ঘটে ঠিক তেমন এবারেও মৌসুম ভিত্তিক পর্যটক এসেছে। পর্যটন বর্ষ অথবা কার্ণিভালের তেমন কোন প্রভাব পড়েনি বলে মত দিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ঠ ব্যবসায়িরা। তাদের মতে, বীচ কার্ণিভাল শেষে সৈকতের অবস্থা আগে যেমন ছিল এখনো ঠিক তেমনি রয়ে গেছে। শহরটিকে নতুন আঙ্গিকে সাজাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কোন ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ যার মাধ্যমে হয়তো দৃষ্টি আকর্ষন করা যেত বিদেশী পর্যকট বা কক্সবাজার বিমুখদের।

জেলার সচেতন মহল বলছেন, ২০১৬ কে সরকার পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন কিন্তু দেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারে এর কোন প্রভাব পড়েনি। কক্সবাজারে বিশে^র দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত রয়েছে কিন্তু তা আমরা এখনো সুরক্ষিত করতে পারিনে এবং আন্তর্জাতিক মান সম্পন্নভাবেও গড়ে তুলতে পারিনি। অন্যান্য দেশের সৈকতের তুলনায় আমাদের সৈকত তুলনামূলভাবে অনেক অনুন্নত। আর সরকার চাইলেই কক্সবাজারকে পরিকল্পিতভাবে আরো আধুনিক করে গড়ে তুলতে পারে। আর তখনই বীচ কার্নিভালের মত আন্তর্জাতিক মানের উৎসবগুলো পরিপূর্ণতা পাবে।

তাদের মতে, দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী কক্সবাজার। বিশেষ বিশেষ দিন ও পর্যটন মৌসুমে দেশি বিদেশি লাখো পর্যটক প্রকৃতির টানে ছুটে আসেন স্বপ্নের কক্সবাজারে। অস্থির নগরী থেকে একটু প্রশান্তির লোভে বিশাল সাগরের কাছে আশ্রয় খোঁজে ভ্রমণ পিঁপাসু মানুষেরা। বিগত কয়েক বছরে কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা কমেছে, বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা অনেকাংশেই কমে গেছে। তারপরও অনেক পর্যটকই ভ্রমণে আসছেন কিন্তু তারা অনেকটাই হতাশ হয়ে ফিরছেন। কারন একটি পর্যটন নগরী হিসেবে পর্যটকদের জন্য যে সব সুযোগ সুবিধা থাকার কথা তার অনেক কিছুই নেই এখানে। জেলার সচেতন মহল ও কক্সবাজারে ভ্রমনে আসা পর্যটকদের দাবি বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি চাইলে বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্র সৈকতের উন্নয়নে কাজ করতে পারে।

তারকা মানের হোটেল লং বীচ এর হেড অব অপারেশন মোহাম্মদ তারেক বলেন, পর্যটন বর্ষ ও কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত মেগা বীচ কার্ণিভালের পর সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ থেকে আর কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। পর্যটকদের আকর্ষন বাড়াতে বছর জুড়ে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করার কথা থাকলেও দৃশ্যত তার কিছুই হচ্ছে না। তিনি বলেন, কক্সবাজারে পর্যটক আসার উপযুক্ত সময় নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। এর পরের সময়গুলোতে এখানে পর্যটক কমতে থাকে। ডিসেম্বর-জানুয়ারীতে এমনিতেই পর্যটকে ভরপুর থাকে কক্সবাজার অথচ ঐ সময়েই বীচ কার্ণিভালের আয়োজন করা হয়েছে। তবে এই ধরনের উৎসব বা কার্ণিভালের আয়োজন করা দরকার অফ সিজনে মানে এই সময়ে। তাহলে মৌসুমের পরেও এখানে পর্যটকদের ভাল উপস্থিতি দেখা যাবে।

হোটেল বেষ্ট ওয়েস্টার্ন এর জিএম শাহাব উদ্দিন বলেন, পর্যটন বর্ষকে যথাযথবাবে ব্যবহার করতে এবারের বর্ষা মৌসুমে পর্যটক সংখ্যা বাড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৌসুম ভিত্তিক কিছু আয়োজন করা যেতে পারে। যেমন বীচ ফুটবল, জলকেলি বা এই ধরনের উৎসবের আয়োজন কারা গেলে মৌসুম ছাড়াও এখানে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বাড়বে।

এবিষয়ে জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) ড. অনুপম সাহ বলেন, পর্যটন সংশ্লিষ্ঠ যে সকল সংগঠনগুলো রয়েছে তারা সারা বছর জুড়ে কক্সবাজারে কোন না কোন অনুষ্ঠানের আয়োজ করে থাকে। আর সেই আয়োজনের সাথে জেলা প্রশাসনের সম্পৃক্ততা থাকে। পর্যটন বর্ষে আমরা এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি। কিছু দিন আগে বীচে আন্তর্জাতিক সার্ফিং প্রতিযোগীতা হয়ে গেলো এটাও তো একটি উৎসবের অংশ।


শেয়ার করুন