পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার

ed11b763867eab4239f2fb6544c30e9a_xlarge-400x240
আমাদের সময়.কম:
: বিদ্যুৎ খাতের মাস্টার প্ল্যান অনুয়ায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে সরকার। এর মধ্যে কয়লা থেকেই ২০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়ে এ পর্যন্ত ১৯ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ২১টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে এখন পর্যন্ত এসব কেন্দ্রের জন্য পরিবেশের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সব কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ করে তবেই ছাড়পত্র নেওয়া হবে। তবে পরিবেশবাদীরা অভিযোগ করছেন, প্রকল্পের কাজ শেষে যখন আবেদন করা হয় তখন সরকারের চাপে অনেকটা বাধ্য হয়েই ছাড়পত্র দিয়ে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আগেই ছাড়পত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
জানা যায়, সকলের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার। এর মধ্যে তেলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে ১০ শতাংশ, গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র থেকে ২০ শতাংশ, সৌরবিদ্যুৎ, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ অন্যান্য খাত থেকে ২০ শতাংশ এবং কয়লা থেকে ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তবে এখন পর্যন্ত কয়লা থেকে ২১টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ১৮ হাজার ৯১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ৩৩৫ মেগাওয়াট, বেসরকারি খাত থেকে ৭ হাজার ৯২০ মেগাওয়াট এবং বাকি ৩ হাজার ৬৬০ মেগাওয়াট আসবে সরকারের সঙ্গে অন্য দেশের যৌথ মালিকানার বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। কয়লাভিত্তিক ২১ কেন্দ্রের মধ্যে কেবল বাগেরহাটের সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া বাকি ২০টির জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়েই নির্মাণ ও অন্যান্য কাজ শুরু হয়েছে। এর আগে পিডিবির পক্ষ থেকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইআইএ বা পরিবেশের চূড়ান্ত ছাড়পত্র চাওয়া হয় একাধিকবার। তবে অধিদপ্তর প্রতিবেশগত সংকটপূর্ণ এলাকায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ব্যাপারে সতর্ক থাকায় ইআইএ অন্তত আটবার ফেরত পাঠায়। ইআইএ ছাড়াই সরকার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় মাটি ভরাটের কাজ শুরু করে। পরে সরকারের চাপে ২০১৩ সালের আগস্টে বহু অসংগতি থাকা সত্ত্বেও এ কেন্দ্রের চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর।
পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো সরকার অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু করে মাঝপথে ইআইএর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে চাপ দেবে। তখন সরকারের চাপে ইআইএ দিতে বাধ্য হবে পরিবেশ অধিদপ্তর ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোনো প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই পরিবেশের ছাড়পত্র নেওয়ার বিধান রয়েছে। প্রকল্পের চুক্তি ও নির্মাণকাজ শুরু করার পর পরিবেশের ছাড়পত্র নিলে ওই প্রকল্প আর্থিকভাবে লাভবান হবে না। কারণ পরিবেশের ছাড়পত্র পেতে অনেক ধরনের বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। এসব বিধিনিষেধ পালন করতে গিয়ে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যায়। তবে সেটি হয় নিয়ম মাফিক ও স্থায়ী।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবীব বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান অন্তত পাঁচটি আইনে বলা আছে যে, প্রকল্প শুরুর আগেই পরিবেশের ছাড়পত্র নিতে হবে। কারণ তাতে ওই প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকে। এটা না করে সরকার সব কাজ শেষ করে পরিবেশের ছাড়পত্র নিচ্ছে। এতে একরকম বাধ্য হয়েই পরিবেশ অধিদপ্তর সম্মতি দিচ্ছে। প্রকল্পের মাঝামাঝি পরিবেশের ছাড়পত্র নিলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যায়। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও বেশি পড়বে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বিদ্যুৎ আমাদের দরকার। তবে পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া কোনোভাবেই কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ যুক্তিযুক্ত হবে না। সরকার কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে এক ধরনের কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। জমি ভরাট থেকে শুরু করে কেন্দ্রের অর্ধেক কার্যক্রম শেষে মাঝপথে চাপ সৃষ্টি করে পরিবেশের ছাড়পত্র নিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু করব। রামপাল কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ৮বার বিভিন্ন বিষয়ের জবাব চেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে চিঠি পাঠায়। আমরা তাদের চাহিদামতো সব জবাব দেওয়ার পরেই অধিদপ্তর ইআইএ বা পরিবেশের চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেয়। এরপরই রামপালের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকি কেন্দ্রগুলোর ছাড়পত্র নিয়েই কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।


শেয়ার করুন