পরকীয়া ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

45645মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

মানুষের জীবনে প্রেম ভালোবাসা আসবে স্বাভাবিক। তবে অবৈধ পথে এ ভালোবাসাকে ব্যবহার করা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। প্রেম, পরকীয়া, অনলাইন চ্যাটিং, মোবাইল প্রেম- এ সব বিষয় ইসলামে নিষিদ্ধ। যেহেতু এ সব বিষয়ের পরিণাম খুবই ভয়াবহ, ভয়ঙ্কর, মারাত্মক ও তীব্র, তাই ইসলাম এর জন্য কঠোর শাস্তি ঘোষণা করেছে।
বর্তমানে পরকীয়ার বেশির ভাগ সূত্র হচ্ছে ফোনালাপ কিংবা অনলাইন চ্যাটিং থেকে। ইসলাম এ বিষয়ে নারী-পুরুষকে সতর্ক করেছে। নারীদের কথার আওয়াজকেও সতর্কের অন্তর্ভুক্ত করে অপ্রয়োজনে পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করেছে। একান্ত প্রয়োজনে কথা বলতে হলেও সুরা আহযাবের ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। যাতে করে নারীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কোনো পুরুষ আকর্ষণবোধ না করেন।
শুধু নারীদেরই নয়, বরং সুরা নুরের ৩০ নম্বর আয়াতে প্রথমে আল্লাহতায়ালা পুরুষদের তাদের দৃষ্টি সংযত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। আবার ৩১ নম্বর আয়াতে মহিলাদের তাদের দৃষ্টি সংযত রাখার পাশাপাশি তাদের গোপন শোভা অনাবৃত করতে নিষেধ করা হয়েছে। অপাত্রে সৌন্দর্য প্রদর্শনকে হারাম করে সবটুকু সৌন্দর্য স্বামীর জন্য নিবেদনে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। কারণ, স্বামী তার স্ত্রীর সৌন্দর্যে মোহিত হলে সংসারের শান্তিই বাড়বে। পক্ষান্তরে স্ত্রীর সৌন্দর্য দিয়ে অন্যকে মোহিত করার পথ অবারিত করলে তা কেবল বিপদই ডেকে আনবে।
পুরুষ-মহিলা সবাইকে চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। হজরত সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হবো।’ (বুখারি)
সুরা বনি ইসরাইলের ৩২ নম্বর আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না।’ কাছেও যেও না মানে কী? যে জিনিস মানুষকে ব্যভিচারের নিকটবর্তী করে দেয় তার কাছে যেতেই নিষেধ করা হয়েছে। যেসব কাজ করলে মানুষ ব্যভিচারে ধাবিত হয় সেসব কাজ করতেও নিষেধ করা হয়েছে। পরকীয়ার সূত্রপাত যদি ফোনালাপে হয় তাহলে সুরা বনি ইসরাইলের ৩২ নম্বর আয়াতে ফোনালাপকেও হারাম করেছে। কখনও দেখা যায় দেবরের সঙ্গে জমে ওঠে পরকীয়া। ইসলাম দেবরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার লাগামকেও টেনে ধরেছে। হজরত উকবা ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘সাবধান! তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেও না।’ এক আনসার সাহাবি বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কী? নবিজি সা. বললেন, ‘দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য।’ (বুখারি, মুসলিম)
হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. ফতহুল বারিতে লিখেছেন, ‘এখানে মৃত্যুর সমতুল্যর অর্থ হলো হারাম।’ আর ইসলামে এসবের শাস্তি ভয়াবহ। এসবের শাস্তিস্বরূপ রজম ও দোররার নির্দেশ এসেছে হাদিসে। যাতে কোনো নারী-পুরুষ যেন এ ধরনের কাজ না করে।
লেখক : বিশিষ্ট মুফাচ্ছিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন


শেয়ার করুন