উদ্বোধন ২৫ জুন

পদ্মা সেতুর যত বিশ্বরেকর্ড

সিটিএন ডেস্কঃ

পানি প্রবাহের দিক দিয়ে পৃথিবীতে আমাজন নদীর পরই অবস্থান পদ্মার। প্রমত্তা এই নদীতে ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের সাফল্য। এই সেতু রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশকে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার সঙ্গে যুক্ত করবে।

আগামী ২৫ জুন উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা পদ্মা সেতু কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশ্বে রেকর্ড করেছে। নদীশাসন, পাইল ও বিয়ারিংয়ের ব্যবহারে পদ্মা সেতুর এ রেকর্ডের কথা জানা গেছে সেতু বিভাগ সূত্রে।

পাইলের গভীরতা: খরস্রোতা পদ্মার মাটির ১২০-১২৭ মিটার গভীরে গিয়ে বসানো হয়েছে পদ্মা সেতুর পাইল। এর আগে পৃথিবীর অন্য কোনো সেতুর জন্য এত গভীরে গিয়ে পাইল বসাতে হয়নি। যা একটি রেকর্ড।

১০ হাজার টনের বিয়ারিং: পদ্মা সেতুতে ব্যবহৃত ‘‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’’ এর সক্ষমতা ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। ফলে রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো সক্ষমতা রয়েছে এ সেতুর।

এছাড়া, এই সেতুতে ব্যবহৃত একেকটি বিয়ারিংয়ের ওজন ১০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। পৃথিবীতে এর আগে কোনো সেতুতে এমন বড় বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়নি।

উদ্বোধনের অপেক্ষায় পদ্মা সেতু
সর্ববৃহৎ ক্রেন: পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রেন ব্যবহার করা হয়েছে। পিলারের ওপর স্প্যান বসাতে যে ক্রেনটি ব্যবহৃত হয়েছে সেটি এসেছিল চীন থেকে। প্রতি মাসে এর ভাড়া বাবদ গুনতে হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। ক্রেনটি বাংলাদেশে ছিল প্রায় সাড়ে তিন বছর। এজন্য মোট খরচ হয়েছে ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বিশ্বে প্রথম কোনো সেতু তৈরিতে এত দীর্ঘদিন ক্রেনটি ভাড়ায় থেকেছে। এই ক্রেনটির দাম দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

ব্যবহৃত হয়েছে কংক্রিট ও স্টিল: পৃথিবীতে এই প্রথম কোনো সেতু নির্মাণে কংক্রিট এবং স্টিল উভয়ই ব্যবহৃত হয়েছে। বিশ্বে আর কোনো সেতু নির্মাণে কংক্রিট এবং স্টিলের ব্যবহার একসঙ্গে দেখা যায়নি। অর্থাৎ সেতুগুলো হয় কংক্রিটে নির্মিত, নাহয় স্টিলের।
সেতু রক্ষায় নদীশাসন: পদ্মা সেতুর সুরক্ষায় নদীতীরের ১৪ কিলোমিটার (১.৬ কিলোমিটার মাওয়া প্রান্তে ও ১২.৪ কিলোমিটার জাজিরা প্রান্তে) এলাকা নদীশাসনের আওতায় আনা হয়েছে। এ কাজে ব্যয় হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি। পদ্মা সেতু প্রকল্প তিন জেলায় বিস্তৃত। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া, শরীয়তপুরের জাজিরা এবং মাদারীরপুরের শিবচর।

এসব বিষয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু বিশ্বে কয়েকটি বিষয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। সেটা হলো গভীরতম পাইল হয়েছে পদ্মায়। কারণ পদ্মার মতো এত খরস্রোতা নদী পৃথিবীর বুকে নেই বললেই চলে। আমরা ভূমিকম্প মোকাবিলায় যে বিয়ারিং ব্যবহার করেছি এটা পৃতিবীতে একটা রেকর্ড। এত বড় বিয়ারিং আগে কোথাও ব্যবহার করা হয়নি। এটা প্রায় ১০ হাজার টনের কাছাকাছি। আরও একটা আছে নদীশাসন। সেতুর জন্য ১৪ কিলোমিটার নদীশাসন আর কোথাও নেই। এত গভীরে আর নদীশাসনও কোথাও হয়নি।

পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞ (ফাইল ছবি)। মেহেদি
আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু পারাপারের জন্য টোলের হার নির্ধারণ করেছে সরকার। গত ১৭ মে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পরিবহনের জন্য আলাদা আলাদা টোলের হার নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

‘পদ্মা সেতু হয়ে সিঙ্গাপুর থেকে ইউরোপে যাবে ট্রেন’
সিঙ্গাপুর থেকে যখন ইউরোপে ট্রেন যাবে তখন পদ্মা সেতু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম

পদ্মা সেতু
সিঙ্গাপুর থেকে যখন ইউরোপে ট্রেন যাবে তখন পদ্মা সেতু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু হয়ে যখন এই ট্রেনগুলো যাবে তখন অনেক মালামাল নিয়ে যাবে, সুতরাং হেভি লোডেড সেতু বানানো হয়েছে।”

রবিবার (১২ জুন) অনলাইন গণমাধ্যম দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

শফিকুল ইসলাম জানান, তুলনা করলে বাংলাদেশের অন্যান্য সেতু থেকে পদ্মা সেতুর খরচ কম। মেঘনা ও দাউদকান্দি সেতুতে কত খরচ করেছি। রেলওয়ে সেতুর খরচ কত? সব মিলিয়ে দেখলে খরচ বেশি হয়নি।

খরস্রোতা পদ্মায় সেতু বাস্তবায়নে কী কী রেকর্ড হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিশ্বে খরস্রোতা নদী হিসেবে আমাজন নদীর পরই পদ্মার অবস্থান। তাই এই সেতুতে মাটির ১২০ থেকে ১২৭ মিটার গভীরে গিয়ে পাইল বসাতে হয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোনো সেতু তৈরিতে এত গভীরে গিয়ে পাইল প্রবেশ করাতে হয়নি, যা পৃথিবীতে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই সেতুর আরেকটি রেকর্ড হচ্ছে বিয়ারিং সংক্রান্ত। এই সেতুতে ব্যবহার করা ‘ফিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’র সক্ষমতা ১০ হাজার টন। বিশ্বের কোনো সেতুতে এখন পর্যন্ত এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।”

“পিলার এবং স্প্যানের মধ্যে যে বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে সেটিও বিশ্বরেকর্ড। এখানে ব্যবহার করা একেকটি বিয়ারিংয়ের ওজন ১০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। এর আগে বিশ্বের কোনো সেতুতে এমন বড় বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়নি। আর অন্য রেকর্ডটি হলো নদীশাসন। ১৪ কিলোমিটার এলাকা নদীশাসনের আওতায় আনা হয়েছে। এটাও রেকর্ড।”

সেতুতে কী কী কানেক্টিভিটি থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখানে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকবে। যেহেতু বিদ্যুৎ লাইন ৪০০ কেভি হাই ভোল্টেজ, তাই আমাদের স্টিল ও কংক্রিটের ব্রিজে ঝুঁকি থাকবে। ফলে এটা সেতুর পাশ দিয়ে আলাদাভাবে যাবে। তবে গ্যাস রেললাইনের পাশ দিয়ে ও অপটিক্যাল ফাইবার সেতু দিয়েই যাবে।”


শেয়ার করুন