পদ্মা সেতুর কারণে কুয়াকাটা সৈকতে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক

ডেস্ত নিউজঃ

ঈদুল আজহার ছুটিতে ফেরিবিহীন ভ্রমণে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা সৈকতে এবার পর্যটকদের বান ডেকেছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু দর্শন এবং কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন এক ছুটিতেই সেরে ফেলতে বেরিয়েছেন অনেকে। এবারের কুয়াকাটা সৈকতে আগত পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে এমনই মন্তব্য পাওয়া গেছে।

ঈদুল আজহার তৃতীয় দিন মঙ্গলবার সকালে কুয়াকাটা সৈকতে তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। ফলে বিগত বছরগুলোর ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের উপস্থিতির সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। করোনা পরিস্থিতি তোয়াক্কা ছিল না এসব পর্যটকদের কাছে। ছিল না করো মুখে মাস্ক কিংবা সেবাদানকারী রেস্টুরেন্ট বা আবাসিক হোটেলেও তেমন কোনো সতর্কতা চোখে পড়েনি।

ঈদের দিন রোববার বিকাল থেকে মঙ্গলবার সকালে কুয়াকাটা সৈকতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো। উত্তাল সমুদ্রে নেচে গেয়ে সমুদ্রে মাতোয়া হবার দৃশ্য লক্ষ্যণীয়। সৈকতের প্রবেশমুখে, ফয়েজ মিয়ার নারিকেল বাগান, ঝাউবনসহ গোটা সৈকতের সর্বত্রই পর্যটকদের চাপ সামাল দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশকে হিমশিম খেতে দেখা যায়।

পর্যটকবাহী বাস, হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতে জেলা প্রশাসনসহ ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের মনিটরিং ছিল। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও খাবারের মান নিশ্চিতে তারা একযোগে কাজ করছেন।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারায়নগঞ্জ থেকে কুয়াকাটা ভ্রমণে আসা জাহান যুগান্তরকে জানান, তিনি ২ বন্ধুকে নিয়ে শুধুমাত্র পদ্মা সেতু দেখার জন্য ঈদের দিন বিকালে রওনা হয়েছেন। এরপর রাতে পদ্মা সেতু দেখে তিন বন্ধুর তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে রাত ৩টায় পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজা থেকে বাসে উঠে বরিশাল পৌঁছান সকাল ৬টায়। মঙ্গলবার সকাল ৯টা হোটেল কানসাই ইন্-এ ওঠেন। এরপর সমুদ্রের উত্তাল সমুদ্রে গোসল করেন। বিকালে দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরবেন বলেও জানান। ওই তিন পর্যটক কেবলমাত্র পদ্মা সেতু দেখতে এসে কুয়াকাটা সৈকতে প্রথমবারের মতো আসার সুযোগ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।

একই মন্তব্য ছিল ঢাকার গাজীপুর থেকে আসা মারফিয়া দম্পতির। রমজানের ঈদে ছুটিতে ইনানী বিচে গিয়েছিলেন। এবার পদ্মা সেতু দেখার লোভে কুয়াকাটাও ঘুরে গেলেন।

মারফিয়া বলেন, প্রাইভেটকারে পদ্মা সেতু দেখতে আসাই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। এরপর ভাবলাম পদ্মা সেতু থেকে যেহেতু ৪ ঘণ্টায় কুয়াকাটায় পৌঁছা যায়। সেক্ষেত্রে এক সুযোগে দু-দুটো কাজ করলে মন্দ কিসের। কুয়াকাটা সৈকতের বেঞ্চিতে বসে একই কথা জানালেন রিমি আক্তার, ঝিমি শ্রাবন্তী, হাসিব, সবুজসহ অসংখ্য পর্যটক।

ট্যুরিস্ট গাইড ইমরান খান জানান, যেসব পর্যটক আগাম রুম বুকিং দিয়ে এসেছেন তাদের বেগ পেতে হয়নি। আবাসিক হোটেলে একটি রুম পেতে পর্যটকদের হন্যে হয়ে খুঁজতে হয়েছে। ইমরানের মতে, নিম্নমানের আবাসিক হোটেলগুলোতে পর্যটকদের সঙ্গে দরদামের দৃশ্য পর্যটন শিল্পের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়শনের সেক্রেটারি জেনারেল এমএ মোতালেব শরীফ বলেন, তাদের সংগঠনের হোটেলগুলো পর্যটকদের গুণগত সেবা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। যেসব আবাসিক হোটেলগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে সেসব হোটেল সংগঠনবর্হিভূত। তবে গোটা সপ্তাহজুড়ে বিপুল পরিমাণে পর্যটকদের আনাগোনা থাকবে বলে মন্তব্য ছিল এই হোটেল মালিক সংগঠকের।

ট্যুরিস্ট পুলিশ বরিশাল রিজিওনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, কুয়াকাটা সৈকতে অতিরিক্ত পর্যটদের চাপ রয়েছে। পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তদারকি করতে ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিওনসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কুয়াকাটায় অবস্থান করছেন।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ও সৈকত ব্যবস্থা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়ই প্রমাণ করে পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন শিল্পের ভাগ্য বদল করে দিয়েছে। গোটা সৈকত ব্যবস্থাপনাসহ সব উন্নয়ন পর্যটনবান্ধব করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।


শেয়ার করুন