নেতা নয়, সাংবাদিক আর আইনজীবী হলে সাক্ষাৎ!

image_112719_0নতুন বার্তা ডটকম:

ঢাকা: ৫ জানুয়ারিকে সামনে রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ‘নিরাপত্তার জন্য’ ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। গত ৫ জানুয়ারির আগেও ঠিক একই ব্যবস্থা নিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে আগেরবার গুলশানের বাসার বাইরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি হলেও এবার তা নিয়ে আসা হয়েছে খালেদার রাজনৈতিক কার্যালয়ে।

শনিবার রাত আটটার দিকে প্রতিদিনের মতো নিজ রাজনৈতিক কার্যাপলয়ে যান খালেদা জিয়া। এখন পর্যান্ত তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। কারণ গতকাল রাত থেকে কার্যালয়ের বাইরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। রাতে একবার বের হওয়ার চেষ্টা করলেও গেইটে গাড়ি রেখে পুলিশ বের হতে বাধা দেয়ায় আবার ফিরে যান তিনি। একইসঙ্গে আশপাশের সড়কে আড়াআড়ি করে গাড়ি রেখে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। এমনকি জনসাধারণকে ওই এলাকায় ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় রাত থেকে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
অবশ্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দাবি করেছেন, খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করা হয়নি। তাকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।

আর ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে একই দাবি করে বলা হয়েছে, “খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করা হয়নি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে শুধু তার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। শুধু খালেদা জিয়া নয়, বিএনপির কোনো নেতাকেই অবরুদ্ধ করা হয়নি।”

গুলশান-২ এর ৮৬ নম্বর সড়কে খালেদা জিয়ার কার্যালয়। রোববার সকালে গিয়ে দেখা যায়, ওই রাস্তায় কার্যালয়ের উত্তরে গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এবং দক্ষিণে ৮৭ নম্বর সড়কের মাথায় পুলিশের দুটি ভ্যান আড়াআড়ি করে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে। রাস্তার দুই মুখে অবস্থান নিয়ে আছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। ওই রাস্তায় সাধারণ যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষজনের চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

এই যখন অবস্থা তখন খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাত থেকে কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করছেন সাবেক কয়েকজন মহিলা সাংসদ ও মহিলা দলের কয়েকজ কেন্দ্রীয় নেতা। আছেন তার বিশেষ সহকারী ও কার্যানলয়ের কর্মকর্তারা। তবে নতুন করে কাউকে কার্যা্লয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।

তবে রোববার সকালে কয়েকজন আইনজীবী ও সাংবাদিক নেতা অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে পুলিশ তাদের ভেতরে যেতে দেয়। কিছুক্ষণ অবস্থান শেষে তারা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে খালেদার বক্তব্য গণমাধ্যমে তুলে ধরেন।

তবে দুপুরের দিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারার চেয়ারম্যান ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী দেখা করতে গেলে পুলিশি বাধায় তিনি ফিরে যান। এসময় তিনি পুলিশের ভুমিকার নিন্দা জানিয়ে বিএনপির আন্দোলনে এখন থেকে পূর্ণ সমর্থনের কথা বলেছেন।

এরমধ্যে বেশ কয়েজন বিএনপি সমর্থক ওই এলাকায় গেলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। পরে কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর প্রায় ১০ জনকে আটক করে পুলিশ। এরমধ্যে কয়েকজন নারীকর্মীও আছেন।

গত নির্বাচনের আগে ঠিক একই চিত্র দেখা গিয়েছিল খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসার বাইরে। সামনের রাস্তার দুই পাশে আড়াআড়ি করে রাখা হয়েছিল দুটি বালুর ট্রাক।ছিল জলকামানের দুটি গাড়ি। কয়েকদিন ধরে মোতায়েন ছিল বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও নারী পুলিশ সদস্য।ওই সময়ও খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোনো বিএনপিসহ কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারেননি। শুধু সাংবাদিক নেতা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও আইনজীবীরা তার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছিলেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া রাতে নয়াপল্টন কার্যালয়ে যেতে চেয়েছিলেন।তাদের কাছে তথ্য ছিল, খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারির সমাবেশকে সামনে রেখে আগ থেকেই নয়াপল্টন কার্যালয়ে অবস্থান নিতে পারেন। এ কারণে তাকে বের হতে দেওয়া হয়নি। খালেদা জিয়াকে আপাতত তার কার্যালয় এবং বাসার বাইরে কোথাও যেতে দেওয়ার সম্ভাবনা কম বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।

এ পর্য্ন্ত আইনজীবীদের মধ্যে সাক্ষাত করেছেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদিন, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির গণশিক্ষা সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াসহ বেশ কয়েকজন।

আর বিএফইউজের (একাংশ) সভাপতি শওকত মাহমুদ ও সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী সাংবাদিকদের প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন। এরপর ভেতরে যান সঙ্গীতশিল্পী আসিফ আকবর ও সাবেক ফুটবলার আমিনুল ইসলাম।

এদিকে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে গুলশান ২ নম্বরের পাশের সড়কে মহিলা দলের কয়েকজন কর্মীকে ধাওয়া করে যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা কয়েকজন নারী সাংবাদিকের ওপর হামলা করে।পরে উপস্থিত সাংবাদিকরা পাল্টা হামলা করলে যুবলীগ কর্মীরা পালিয়ে যায়।


শেয়ার করুন