মহেশখালী পৌরসভায় সহিংসতা

নিষ্ঠুরতার বলি হলো টমটম চালক শুক্কুর

index copyনিজস্ব প্রতিবেদক :

মহেশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার আজমের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন আবদু শুক্কুর। নির্বাচন ছাড়াও নানা সময়ে সরওয়ারের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করতেন তিনি। এক কথায় সরওয়ারের প্রয়োজনে ছুটে যেতেন যখন-তখন। এটা ছিল সরওয়ারের প্রতি তার অন্ধ ভালোবাসা। রোববার অনুষ্ঠিত মহেশখালী পৌরসভা নির্বাচন নিয়েও শুরু থেকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সরওয়ারের পক্ষে কাজ করেছেন নিরলসভাবে। নির্বাচনের দিনও সরওয়ারের ভালোবাসায় খুব ভোরে ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন শুক্কুর। কিন্তু এটা যে তার বাড়ি থেকে শেষ বারের মতো বের হওয়া তা হয়তো কেউ ভাবেননি। কিন্তু না আরো একবার তিনি বাড়ি ফিরেছেন তবে লাশ হয়ে।
মহেশখালী পৌরসভার পুটিবিলা দাসিমাঝি পাড়ার আবুল কাশের প্রথম পুত্র শুক্কুর একজন টমটম চালক। টমটম চালিয়ে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। অবিবাহিত শুক্কুরের উপার্জনের উপর অনেকটা নির্ভর ছিল তার পরিবার। তারা তিন ভাই ও দু’বোন। ব্যক্তি জীবনের খুব সহজ-সরল ছিলেন শুক্কুর।
জানা যায়, দুপুর ২টার সময় ৫নং ঘোনার পাড়ার কেন্দ্রে মকছুদ সমর্থকরা ভোট জালিয়াতি করলে শুরু হয় গন্ডগোল। এসময় সওয়ারকে মারধর করে মকছুদের সমর্থক মামুনসহ অন্যরা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে সরওয়ারের উপর চড়াও হয় তারা।
সরওয়ার জানান, ভোট জালিয়াতির প্রতিবাদে তার সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে পড়লে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মকছুদের বেশ কয়েকজন সমর্থক ফরহাদ, পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কায়সারসহ যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদলের বেশ কয়েকজন নেতা প্রকাশ্যে সরওয়ারের সমর্থকদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। এক পর্যায়ে মকছুদের ভাতিজা ফরহাদ তার হাতে থাকা শর্টগান থেকে সরওয়ারকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। কিন্তু গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে সরওয়ারের পাশে থাকা শুক্কুরের কপাল আর কান বরাবর বিদ্ধ হয়। এতে শুক্কুর লুটিয়ে পড়েন। তাকে পুলিশ উদ্ধার মহেশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সাথে সাথে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আনা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাত ৯টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। কিন্তু চকরিয়া পর্যন্ত গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শুক্কুর। রাতেই ময়না তদন্তের জন্য ফের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ময়না তদন্ত সেরে গতকাল বিকালের দিকে শুক্কুরের লাশ বাড়ি নিয়ে গেছেন স্বজনরা। একই ঘটনায় আরো অর্ধশত গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তারাও কক্সবাজার সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে অবস্থা আশঙ্কাজনক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত শুক্কুরসহ গুলিবিদ্ধ আহতদের স্বজনদের আহাজারিতে পুরো মহেশখালী পৌরসভায় আহাজারি চলছে। শুক্কুরের মা-বাবাসহ স্বজনদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, নির্বিচারে ভোট জালিয়াতি করেও মকছুদের লোকজন ক্ষান্ত হননি। তারা সরওয়ারকে হত্যা করতে অত্যন্ত নিষ্ঠুর কায়দা গুলি করেছিলেন। কিন্তু সরওয়ার বেঁচে গেলেও ঝরে গেলো একটি নিরীহ প্রাণ।
এদিকে প্রকাশ্যে গুলি করে শুক্কুর হত্যা করে মকছুদের সমর্থকরা পুলিশের উপর দায় চাপাতে চেষ্টা করছে। মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমকে শুক্কুর পুলিশের গুলিতে মরে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে মকছুদের সমর্থকরা। এরপরও নির্র্বাচনের সন্ধ্যার ৭টার দিকে সরওয়ারের সমর্থকদের উপর হামলায় চালায়। গতকালও সকালেও গোরকঘাটা বাজারে সরওয়ারের সমর্থকদের ধাওয়া করে মকছুদের সমর্থকরা।
শুক্কুরের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আজ সকাল ১০টায় নিহত শুক্কুরের জানাযা অনুষ্ঠিত হবে।
শোকে বিহ্বল শুক্কুরে পিতা কাশেম বলেন, ‘আমার উপার্জনক্ষম পুত্রকে তারা গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা এখন নি:স্ব। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’


শেয়ার করুন