সময় পেরিয়ে গেলেও শুরু হয়নি উন্নয়ন কাজ

নিশ্চিহ্ন কস্তুরাঘাট জেটি

711d17cd-e499-4cbd-abc2-0e933cc04aef

শাহেদ ইমরান মিজান, সিটিএন:
দীর্ঘ দু’বছরের জীর্ণ দশার পর অবশেষে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে কস্তুরাঘাট জেটি। ভঙ্গুর অবকাঠামো গুলো ‘খোয়া’ গিয়ে এখন এক ‘নিশ্চহ্নের প্রতীক’ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী জেটিটি। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে জেটিটির অস্থিত্ব তলিয়ে গেছে। কস্তুরাঘাট জেটির উন্নয়নে সম্প্রতি ১ কোটি ৮ লাখ বরাদ্দ দিয়েছিল কক্সবাজার পৌরসভা। ডিসেম্বরে এই উন্নয়ন কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। ফলে জেটিটির শেষ রক্ষা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দীর্ঘকাল ধরে কক্সবাজার-মহেশখালী-কুতুবদিয়া নৌ-রুটের কক্সবাজার পয়েন্টের একমাত্র ঘাট ছিল কস্তুরাঘাট। এ ঘাট দিয়েই তিন অঞ্চলসহ বিপুল সংখ্যক লোকজনের যোগাযোগ। পরিচালিত হয় দ্বীপাঞ্চলের মানুষের ব্যবসা বাণিজ্য। তাছাড়া সাগরে মাছ ধরার নৌকার মাঝি-মাল্লাদের যোগাযোগে মাধ্যম ছিল এ ঘাটটি।
কিন্তু নৌ-চলাচলের রাস্তার দ্ইুপাশ দখল করে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কারণে নাব্যতা হারিয়ে ফেলে খর¯্রােতা বাঁকখালী নদী। দখলদারের থাবায় ভরাট হয়ে গেছে নদীর দু’কূল। সংকুচিত হয়ে পড়ে যোগাযোগ সুবিধা। যার কারণে ঘাটের সাথে সড়কের একটা দূরত্ব তৈরি হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ঘাটে নৌ-যানের ব্যবসা নিয়ে মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মুকছুদ মিয়া ও পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আনচারুল করিমের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তাদের কারণে বিভক্ত হয়ে পড়ে মহেশখালী-কক্সবাজার নৌ-রুটে চলাচলকারী বোট মালিকরা। এতে করে ৬ নং জেটিঘাট কেন্দ্রিক যোগাযোগ বেড়ে গেলে কস্তুরাঘাট অচল হয়ে পড়েছে। দু’বছর ধরে অচলাবস্থা চলেও আসলেও বিগত ৭ মাস ধরে সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে ঘাটটি। বন্ধ থাকায় অবস্থা ‘খোয়া’ গেছে ঘাটের কাঠের জেটি। এখন সেখানে কয়েকটি খুঁটি ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। মূলত দু’পক্ষের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কোন্দলে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে কস্তুরাঘাট। এর কারণে যাত্রীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
কস্তুরাঘাট জেটি অচল হয়ে পড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, নৌ-যান সংকট। সময় মতো বোট না পাওয়ায় এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে যাত্রীরা। অচল হয়ে পড়ে কস্তুরাঘাট কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্য। তবে কৌশলে কস্তুরাঘাট অচল রাখা হয় বলে অনেকের অভিযোগ।
এদিকে কস্তুরাঘাট নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ায় মহেশখালী-কক্সবাজার নৌ-রুটের ক্ষুব্ধ যাত্রীরা জানান, একটি লুটেরা চক্র পারাপার করা যাত্রীদের বিপুল টাকা হাতিয়ে নিতে কৌশলে কস্তুরাটের ‘মৃত্যু’ ঘটিয়েছে। এই জন্য প্রশাসনের কোন উদ্যোগ না থাকা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। তারা দ্রুত এই ঘাটের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানান।
নিয়মিত যাত্রী কলেজ শিক্ষক মাহবুবুর রহমান জানান, মহেশখালী-কক্সবাজার নৌ-রুটের সহজ কস্তুরাঘাট দিয়েই সম্ভব। এই ঘাট দিয়ে পারাপারে টাকা ও সময় দু’টিই সাশ্রয় হয়। সেই সাথে শারীরিক কষ্ট ও হয়রানি থেকে নিস্তার পাওয়া যায়। তাই অতিদ্রুত এই ঘাটের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানান এই কলেজ শিক্ষক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘাটের যাত্রী ছাউনি ক্ষয়ে গেছে অনেক আগেই। কাটের জেটিটির কাঠ অন্যান্য অবকাঠামোও খোয়া গেছে। শুধুমাত্র ৮/১০ খুঁটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। কোন ধরণের লোকজনের চলাচল একেবারে দেখা যায়নি।
কক্সবাজার পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার-মহেশখালী নৌ-রুটের ঐতিহ্যবাহী কস্তুরাঘাট জেটির অবকাঠামো উন্নয়নে পৌরসভার রাজস্ব তহবিল থেকে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই ঘাটটিকে আধুনিক মানের করে গড়ে তুলতে এই উদ্যোগ নিয়েছে কক্সবাজার পৌরসভা। উন্নয়ন কাজের মধ্যে থাকবে খাল খনন, সংযোগ সড়কসহ আনুসাঙ্গিক উন্নয়ন। আগামী মাসের মধ্যেই কাজ শুরু হবে জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, কস্তুরাঘাটের রাস্তার দুই পাশের খাল খনন করে ৩০ ফুট প্রশস্ত ও ১০ ফুট গভীর করা হবে। এ জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কাঠের তৈরি নড়বড়ে জেটি ভেঙে ফেলে দিয়ে নদীটি ৭০০ ফুট গভীর ড্রেজিং করা হবে। মূল সড়কেই সরাসরি নৌ-যান ভিড়তে পারার জন্য এই ব্যবস্থা। জেটিঘাটে নির্মাণ করা হবে উন্নতমানের ‘পার্কিংপ্লেস।’ এই জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৮৮ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে দু’টি ভিন্ন ১ কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে পৌরসভা। গত ২ মাস আগে এ বরাদ্দ দেয়ার সময় ডিসেম্বরের শুরুতে কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছিলেন তৎকালীন মেয়র সরওয়ার কামাল। কিন্তু ডিসেম্বর পেরিয়ে জানুয়ারি শেষ হতে চললেও কাজ এখনো শুরু হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান মাবু বলেন, ‘ঠিকাদারকে কস্তুরাঘাটের উন্নয়ন কাজের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। আশা করি এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু হবে।’


শেয়ার করুন