মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে খুরশিদা

নির্যাতনের পর বিষ খাইয়ে দিল স্বামী

36147_0নুরুল আজিম নিহাদ, টেকনাফ
নিজের অমত স্বত্ত্বেও ২০০৬ সালের ৯ মার্চ বিয়ের পিড়িঁতে বসতে হয় গ্রামের দুরন্ত ও অবুঝ বালিকা খুরশিদাকে। বাবা মায়ের পছন্দ হওয়ায় কিছু বুঝে উঠার আগে ১৫ বছর বয়সে খুরশিদাকে জড়িয়ে পড়তে হয় সংসার জীবনে। বেশ ভালই চলছিল খুরশিদার সংসার। স্বামী আর সন্তানদের ভালবাসা নিয়ে দীর্ঘ নয় বছর কেটে গেছে তার অনায়াসেই। কিন্তু হঠাৎ খুরশিদার সামনে হাজির হয় এক কালো অধ্যায়। স্বামী জড়িয়ে পড়ে এক রোহিঙ্গা নারীর পরকিয়া প্রেমে। পরকিয়ায় আসক্ত হয়ে গত এক বছর ধরে খুরশিদার উপর তার স্বামী চালিয়ে আসছে অমানষিক নির্যাতন। বেশ কয়েক বার স্বামীর সংসার ছেড়ে বাপের বাড়িও চলে এসেছিল সে। কিন্তু সন্তানদের ¯েœহের মোহে পূণরায় ফিরে যেতে হয় তাকে। এক পর্যায়ে শারিরিকভাবে নির্যাতনের পর খুরশিদাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার জন্য বিষ খাইয়ে দেয় তার স্বামী। কিন্তু এতেও তার প্রাণ নামে ওই বস্তুটি কেড়ে নেয়নি বিধাতা। তাই এখন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে খুরশিদার।
খুরশিদার পরিবার ও স্থানীয় কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক রীতি নীতি মেনে উভয় পরিবারের সম্মতিতে উখিয়া রাজাপালং এর জাদিমুড়া এলাকার খুরশিদা বেগমের (২৫) সাথে বিয়ে হয় টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর নতুনপাড়া এলাকার মৃত রশিদ আহমদের ছেলে আজিজুল ইসলামের (৩০) সাথে। বিয়ের সময় খুরশিদা অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলেও সংসার বুঝে উঠতে তার তেমন কোন সমস্যা হয়নি। বিয়ের প্রথম বছরেই খুরশিদার কুল জুড়ে আসে এক ফুটফুটে সন্তান। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে এখন ২ মেয়ে ৩ ছেলের জননি সে। একদিকে যেমন পরিপূর্ণ মা অন্যদিকে তেমনি এক গুণবতী রমনী। বেশ ভাল করেই চলে আসছিল খুরশিদা ও আজিজের সংসার। আজিজ খুরশিদাকে খুব ভালবাসত। খুরশিদাও তাই। কিন্তু খুরশিদার এই সুখ যেন আর স্থায়ী হলনা। হঠাৎ এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় গৃহিনী খুরশিদা বেগম। গত একবছর আগে তার স্বামী আজিজ পড়ে যায় এক রোহিঙ্গা রূপবতী নারীর অবৈধ সম্পর্কে। যতই ওই রোহিঙ্গা নারীর প্রতি আজিজের আসক্তি বাড়ছে ততই খুরশিদার উপর নির্যাতন বেড়ে যায়। খুরশিদার ভালটাও যেন আজিজের মারাত্মক জঘন্য। কথায় কথায় তার উপর বর্বরোচিত শারীরিক নির্যাতন চালায় আজিজ। নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া কয়েক মাস আগে অন্তর অন্তর বাপের বাড়ি ফিরে এসেছিল খুরশিদা। কিন্তু বাপের বাড়িতেও খুরশিদার জায়গা সংকীর্ণ হওয়ায় মন না চাইলেও তাকে স্বামীর বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে। একবারের জন্যও খরশিদার আকুতি শুনেনি তার বাপের বাড়ির লোকজন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ৬ মাস আগে টেকনাফ থানায় খুরশিদা জীবনের নিরাপত্তার জন্য তার স্বামীর বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিল। কিন্তু তাতেও কিছুই হয়নি। বরাবরের মত আসক্তি আর নির্যাতন সমান তালে বাড়ছে। খুরশিদার পিটে, মুখমন্ডল,হাত পাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারধরের মারাত্মক আঘাত রয়েছে। শেষ পর্যন্ত খুরশিদার উপর নেমে আসে এক অমানষিক নির্যাতনের খড়গ।
খুরশিদার সন্তানদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তখন ২৪ ডিসেম্বরের আনুমানিক রাত দেড়টা। মদ পান করে বাড়ি ফিরে আজিজ। এতরাতে বাড়ি ফেরার কারণ জানতে চাইলে শুরু হয় চিরাচরিত গালিগালাজ। এক পর্যায়ে শুরু হয় ফিল্মি স্টাইলে মারধর। শারীরিকভাবে নির্যাতনের এক পর্যায়ে খুরশিদাকে প্রাণে মেরে ফেলার জন্য ষড়যন্ত্রের কৌশল প্রয়োগ করে আজিজ। পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিষের বোতল নিয়ে জোরপূর্বক খুরশিদাকে বিষ খাইয়ে দিলে সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে ঢলে পড়ে। এ অবস্থায় তাকে ফেলে আজিজ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে তার সন্তানরা চিৎকার চেচাঁমেচি করলে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসে। তারা খুরশিদাকে এ অবস্থায় দেখে দ্রুত টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তার শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় খুরশিদাকে সেখান থেকে রেফার করা হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। বর্তমানে সদর হাসপাতালের ৪ র্থ তলার গাইনি ওয়ার্ডের বেডে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে তার।
খুরশিদার ভাই জিয়াউল হক জানান, আজিজ শারীরিকভাবে নির্যাতন করার পর তার বোনকে হত্যা করার জন্য বিষ খাইয়ে দিয়েছে। সে বর্তমানে পলাতক। খুরশিদা শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক হলে আজিজের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান সে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সোলতান আহমদ সিরাজী জানান, খুরশিদার শারীরিক অবস্থা এখনো স্বাভাবিক নয়। তবে চিকিৎসা চলছে। বিষপানে তার এই অবস্থা হয়েছে। তার শরীরেও অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।


শেয়ার করুন