নির্বাচন বনাম আন্দোলন: দোটানায় বিএনপি

বাংলামেইল:

cityতিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ অন্যদলগুলো বেশ কজন প্রার্থীকে সমর্থন জানালেও বিএনপি সমর্থিত কেউ এ নির্বাচনে আসছেন কি না সে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। সরকারের পক্ষ থেকে সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া শুরু হলে বিএনপি অভিযোগ করে, তাদের আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ফেরাতে এটা সরকারের একটা কৌশল।

এরইমধ্যে ১৮ মার্চ তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তবে সরকারের পতনের আন্দোলনে থাকা বিএনপি এ নির্বাচনে আসবে কি আসবে না সে বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। তবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা রয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়তে আগ্রহী বিএনপির কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। উত্তরে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টু। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থন দিলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়তে আগ্রহী বর্তমান মেয়র এম মনজুর আলম এবং নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন।

এছাড়াও কাউন্সিলর পদে লড়তে ঢাকার ৩৫ নং ওয়ার্ডে আমির হোসেন, শর্মিলা ইমাম (সাবেক কমিশনার), ৩৭-এ এম এ সামাদ (কারাগারে), ৩৮-এ কাজী আবুল বাশার, ৩৯-এ মোজ্জাম্মেল হক মুক্তা, ৪০-এ মকবুল আহমেদ মুক্তা, ৪১-এ মো. লিয়াকত আলী, ৪২-এ ইঞ্জিনিয়ার মো. হারুন অর রশিদ, ৪৩-এ কাজী মফিজুর রহমান কাউসার, ৪৪-এ আব্দুস শাহেদ মন্টু, ৪৫-এ হাজী মো. লিয়াকত আলী, ৪৬-এ হাজী ওয়াসেক বিল্লাহ, ৪৭-এ মো. ইলিয়াস স্বপন, ৪৮-এ মো. হাবিব উল্লাহ, ৪৯-এ আলহাজ্ব বাদল সরদার, ৫০-এ রাইসুল হাসান হবি, ৫১-তে সাইফুল ইসলাম, ৫২-তে আব্দুর রব রাশেদ বাদশাহ, ৫৩-তে আবু নাসের ফকির, ৫৪-তে আমির হোসেন, ৫৫-তে আহসান উল্লাহ, ৫৬-তে মো. নাঈম, ৫৭-তে হাজী মনির মানসিকভাবে প্রস্তুত রয়েছেন।

বিএনপির এই নেতারা এখন তাকিয়ে রয়েছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের দিকেই। অন্যদিকে টানা আড়াই মাস অবরোধ-হরতাল চালিয়ে এসেও সরকারকে টলাতে না পারা, শীর্ষ নেতাদের বন্দী হওয়া ও আত্মগোপনে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়ার বিষয়ে প্রবল চাপে রয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতারাও।

বিএনপি নির্বাচনে যাবে- সরাসরি এমন সিদ্ধান্ত না হলেও যদি শেষ পর্যন্ত যায়ই তবে তিন সিটিতে কাকে কাকে সমর্থন দেয়া হবে সেরকম একটি তালিকা তৈরির কাজও এগিয়ে রেখেছে বিএনপির হাইকমান্ড। নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্ত হলে তিনি সিটিতে বিএনপি যাদের সমর্থন দিতে পারে সম্ভাব্য সেই তালিকায় আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন এবং আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নাম রয়েছে।

সরকার পতনের টানা আন্দোলনের আড়াই মাসের বেশি সময় পার করে বিএনপি জোটের কর্মসূচি কার্যত জনসমর্থন হারিয়েছে। পেট্রোলবোমা হামলায় ব্যাপক প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতির কারণে এই জোটের আন্দোলন বিভিন্ন মহলে কঠোরভাবে সমালোচিত হয়েছে। এই মুহূর্তে দলের নেতাকর্মীদের বেশিরভাগ রয়েছেন কারাগারে ও আত্মগোপনে। অনেক নেতাকর্মী বিভিন্ন হাসপাতালে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালে বিএনপি যে আন্দোলন শুরু করেছিল নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর ওই আন্দোলন থামানোটা ভুল ছিল বলে স্বীকার করেছেন খোদ Khaledaবিএনপি চেয়ারপারসন। তবে ওই আন্দোলনেও ব্যাপক প্রাণহানি ঘটলে তখনও সমালোচিত হয় বিএনপি-জামায়াত জোট। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়ে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘তার দল নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করবেন।’

কেমন হবে বিএনপির নতুন সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি- এ বিষয়ে অনেকের আগ্রহ থাকলেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরপূর্তিকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিএনপির আন্দোলনে দেখা গেল সেই পুরোনো সংস্কৃতিই।

সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে বিএনপির তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না এলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, এই নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপিপ্রধান ইতিবাচক।

সিটি করপোরেশন নির্বাচন যেহেতু স্থানীয় সরকার নির্বাচন তাই এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় সমর্থনের সুযোগ নেই। এ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো যাদের সমর্থন দেয় তা অনানুষ্ঠানিকভাবেই দেয়া হয়।

বিএনপি নির্বাচনে এলেও সেটিও হবে মূলত দলীয় কোনো নেতাকে অনানুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেয়ার মাধ্যমে। এর আগেও স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে বিএনপি জোটের এমন অবস্থান ছিল।

নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিএনপি সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি-দাওয়া নির্বাচন কমিশনে তুলে ধরবে বলেও জানা গেছে একটি সূত্রে। কমিশন যদি তাদের দাবির প্রতি গুরুত্ব দেয় তাহলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জোটকে খালি মাঠে গোল দিতে দেবে না বিএনপি জোট।

তবে অপর একটি সূত্র জানায়, বিএনপি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে না। এই নির্বাচনে অংশ নিলে চলমান অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার করতে হবে। এই কর্মসূচি চালু রেখে নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ নেই। কর্মসূচি ঘোষণার সময় বিএনপি জোট থেকে বলা হয়েছিল- যতক্ষণ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন তাগিদ দিয়েছিলেন, বিএনপির শীর্ষ নেতারা তখন বলেছিলেন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সরকারের একটি ফাঁদ। তাদের চলমান আন্দোলন পণ্ড করতেই জনগণের সামনে সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইস্যু তুলে ধরা হয়েছে।

আবার এই নির্বাচনে অংশ নেয়া মানে সরকারকে অনেকটা বৈধতা দেয়া বলেও মনে করছেন বিএনপি জোটের অনেক নেতা। ফলে তাদেরও মত, বিএনপি যেন না যায় এই নির্বাচনে।

সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপি জোটের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলামেইলকে বলেছেন, ‘এ নিয়ে এখনো দলে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’


শেয়ার করুন