ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন

নিরাপত্তা ব্যয়ে রেকর্ড, প্রাণহানিতে ইতিহাস

upসিটিএন ডেস্ক :

সারা দেশে শেষ হলো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এবার মোট ছয় ধাপে দেশের ইউনিয়নগুলোতে ভোটগ্রহণ করা হয়। ছয় ধাপেই প্রচুর পরিমাণ সহিংসতা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর এবং শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। যদিও এই নির্বাচনের নিরাপত্তা খাতে কমিশন ব্যয় করেছে ৩০০ কোটি টাকা।
২০১১ সালে যে ইউপি নির্বাচন হয়েছিল তার তিনগুণের বেশি ব্যয় হয়েছে এবারের ইউপি নির্বাচনে। ২০১১ সালে ইউপি ভোটে পরিচালনা ও আইন শৃঙ্খলায় ১৪৭ কেটি টাকার বেশি বরাদ্দ পায়। যার অর্ধেকেরও বেশি গেছে নিরাপত্তাখাতে। আর ২০০৩ সালের ইউপি নির্বাচনের চেয়ে হয়েছে ৮ গুণ বেশি। ওই সময় নিরাপত্তায় ব্যয় হয় ৫৯ কোটি ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ১৫২ টাকা।
এবার ইউপি নির্বাচনে ১০৮ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছে অন্তত পাঁচ হাজার। ইসির তথ্য অনুযায়ী, এর আগে ১৯৮৮ সালে অন্তত ৮০ জন, ২০০৩ সালে অন্তত ৮৩ জন এবং সর্বশেষ ২০১১ সালের ইউপিতে অন্তত ১০ জন নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছেন।
নবম ইউপি নির্বাচনে সব মিলিয়ে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। মোট ব্যয়ের ৬০ শতাংশই ব্যয় হয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায়। আর বাকি ৪০ শতাংশ নির্বাচনী সামগ্রী মুদ্রণ কেনাকাটা, প্রশিক্ষণ, মাঠকর্মীদের ভাতাসহ নির্বাচন পরিচালনার বিভিন্ন খাতে খরচ হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এর পর চার মাস ধরে মোট ছয় ধাপে শেষ হয় চার হাজারেরও বেশি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে লড়াই করেছেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা। দলীয় প্রভাববিস্তারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল গোটা নির্বাচনজুড়েই।
এ বিষয়ে ইসির উপসচিব রকিবউদ্দিন মণ্ডল বলেন, ভোট শেষ হয়েছে। এখন সার্বিক ব্যয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এর মধ্যে সিংহভাগই যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা খাতে এরই মধ্যে ৪১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শেষ দিকে ভোটের জন্য নির্বাচনী সামগ্রীসহ অন্যান্য ব্যয় বাবদ প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ও নিরাপত্তা খাতে ৫৫ কোটি টাকার নতুন চাহিদা আসতে পারে। বিদায়ী অর্থ বছরের বাজেট থেকে বাকি অর্থের সংস্থান করে সংশোধিত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ছিল সবেচেয়ে বেশি সহিংসতাপূর্ণ। প্রাণহানির দিক থেকে অতীতের যেকোনো নির্বাচনকে ছাড়িয়ে গেছে এবারের নির্বাচন। নিরাপত্তা খাতে সবচেয়ে বেশি খরচ হওয়া এই নবম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেই সহিংসতা হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ‘কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্ন গোলযোগের ঘটনা’ ঘটলেও এ নির্বাচনকে ‘শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু’ বলে উল্লেখ করেছে। অপরদিকে বিএনপির দাবি, বর্তমান সরকারের হাতে কোনো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন যে হতে পারে না, ইউপি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারও তা প্রমাণিত হয়েছে।
প্রথমবারের মতো দলভিত্তিক এ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন, জাল ভোট, ব্যালট ছিনতাইসহ সুষ্ঠু ভোটের বিষয়ে কঠোর অবস্থান না নেওয়ায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকারও ব্যাপক সমালোচনা করেছে বিএনপির পাশাপাশি দেশের সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা।
প্রথম ধাপে ৭১২, দ্বিতীয় ধাপে ৬৩৯, তৃতীয় ধাপে ৬১৫, চতুর্থ ধাপে ৭০৩, পঞ্চম ধাপে ৭১৭ ইউপি এবং ষষ্ঠ ধাপে ৬৯৮টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনিয়ম ও সহিংসতার কারণে কিছু ইউপির নির্বাচন আংশিক বা সম্পূর্ণ বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছে।
সূত্র : এনটিভি অনলাইন


শেয়ার করুন