নিজামী ইস্যুতে জাতিসংঘে যাচ্ছে পাকিস্তান

nizamii_112955সিটিএন ডেস্ক :

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ পাকিস্তান। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান নানা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের এই আচরণে বাংলাদেশ সরকারও কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান অব্যাহতভাবে তাদের ধৃষ্টতা দেখিয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ আজ শুক্রবার বলেছেন, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি কার্যকরের ইস্যুটি পাকিস্তান জাতিসংঘে নিয়ে যাবে। তিনি বলেছেন, পাকিস্তান এই ইস্যুটি নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) দ্বারস্থ হবে এবং অন্যান্য দেশেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

বাংলাদেশ সরকার বিরোধী নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করছে উল্লেখ করে পাকিস্তানের সিনেটে দেয়া বক্তৃতায় সারতাজ আজিজ বলেন, এ ব্যাপারে মুসলিম বিশ্ব এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। একাত্তরে পাকিস্তানের দোষর হিসেবে স্বাধীনতাকমীদের নির্বিচারে হত্যা এবং সর্বোপরি যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিজামীদের ফাঁসি দেয়ার প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়ে আজিজ তার বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশ সরকার এসবের মধ্য দিয়ে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি লঙ্ঘন করছে।

পাকিস্তানের সিনেটের নেতা রাজা জাফারুল হক বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ দাবি করে তা ঠেকাতে মুসলিম দেশগুলোর যৌথ পরিকল্পনা চান।

এর আগে সিনেট সদস্যরা বাংলাদেশ থেকে রাষ্ট্রদূত ফিরিয়ে নেওয়ায় তুরস্কের প্রশংসা করেন। বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানেরও ‘শক্ত অবস্থান’ চান তারা।

সর্বশেষ বুধবার ঢাকায় জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর এর নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি দিয়েছে এবং এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জামায়াত আমিরের একমাত্র অপরাধ ছিল, তিনি ‘পাকিস্তানের সংবিধান ও আইন সমুন্নত’ রাখতে চেয়েছিলেন।

নিজামীর আগে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মো. কামরুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময়ও একই প্রতিক্রিয়া এসেছিল পাকিস্তান থেকে। এ কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি রয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের।

নিজামী ছিলেন একাত্তরে আল বদর বাহিনীর নেতা, যে বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নকশা বাস্তবায়ন করেছিল। আদালতের বিচারে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা, নির্দেশদাতা হিসেবে দোষি সাব্যস্ত হন নিজামী।

তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নিন্দা জানিয়ে বুধবার পাকিস্তানের পার্লামেন্ট একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস করে এবং বাংলাদেশের এই ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাটির’ প্রতি দৃষ্টি দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। পরবর্তীতে তলব করা হয় ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাই কমিশনারকে।

তার প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় পাকিস্তানের হাই কমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে বলা হয়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার মতো অপরাধে দণ্ডিতদের পক্ষ নিয়ে পাকিস্তান সেইসব অপরাধে তাদের সম্পৃক্ততারই প্রমাণ দিচ্ছে।

তবে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের বিষয়ে আঙ্কারা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন।


শেয়ার করুন