নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যানের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবী

Tofail new picমো.আবুল বাশার নয়ন
নাইক্ষংছড়ি উপজেলায় জনগণের ভোটে দুই বারের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাইল আহামদকে সাময়িক বরখাস্ত করায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক আদেশ জারীর খবর উপজেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ সংবাদকর্মীদের সাথে মোবাইল ফোনে এ ক্ষোভের কথা জানান।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অভিযোগ করেন- জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপে বরখাস্ত করার ঘটনায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এছাড়াও তোফাইল আহামদ নির্বাচিত হওয়ার পর সরকার বিরোধী কোন কর্মকান্ড বা প্রচারণায় ছিলেননা বলে দাবী করেন তারা।
এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা বিএনপির নব নির্বাচিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল কাশেম বলেন- একজন ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যানকে বহিষ্কার করেনি সরকার, পুরো উপজেলাবাসীকে বহিষ্কার করেছে। বহিষ্কারাদেশের বিষয়টি খুবই দুখজনক বলে তিনি জানান।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা জনসংহতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও তরগু মৌজা হেডম্যান মংনু মার্মা বলেন- বৌদ্ধ মন্দির হামলার ঘটনায় আইনী প্রক্রিয়াকে সাধুবাদ জানাই, তবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরাখাস্তের মাধ্যমে জনগণ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া খুবই দু:খজনক। এছাড়াও তোফাইল আহামদ সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের উন্নয়নের একনিষ্ট কর্মীর ভূমিকা পালন করেছেন বলে জানান।
বাইশারী ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি জসিম উদ্দিন জানান, বিপুল ভোটে জনপ্রিয় নেতা তোফাইল আহামদকে সাময়িক বহিষ্কার করায় বাইশারীর আপামর জনগণের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনতিবিলম্বে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার পূর্বক তোফাইল আহামদকে জনগণের কাতারে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী জানান তিনি।
সাংবাদিক মাহামুদুল হক বাহাদুর বলেন- নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বহিষ্কারাদেশের কারনে তোফাইল আহামদ উপকৃত হয়েছেন। কারণ তরুণ সমাজের মাঝে তোফাইল আহামদের যে জনপ্রিয়তা ছিল তা আরো বাড়বে।
উপজেলা ছাত্রদল সহ-সভাপতি সাইফুদ্দিন বাহাদুর বলেন- যেখানে কথা বলার স্বাধীনতা নির্ভর করে আইনের উপর, সেইখানে গনতন্ত্র থাকে না। আর গনতন্ত্র না থাকলে সব কিছু সম্বব।
বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুল হক ও দোছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রশিদ আহামদ বলেন- স্বাভাবিক ভাবে একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যানকে বহিষ্কারের বিষয়টি সর্বস্থরের মানুষকে নাড়া দিয়েছে। তারা আরো বলেন- তোফাইল আহমদ দায়িত্বপালনকালীন সময়ে সরকার বা রাষ্ট্র বিরোধী কোন কর্মকান্ডে বা প্রচারণায় ছিলেন না।
উল্লেখ্য, জনগণেরর বিপুল সমর্থনে ২০০২ সনে প্রথম বারের মত ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জেলার ২৯ পরিষদের মধ্যে শ্রেষ্ট চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তোফাইল আহামদ। এর পর ইউপি চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে ২০০৮ সনে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ দায়িত্ব পালন কালীন সময়ে উপজেলা সদর থেকে ১৩ কি:মি দূরবর্তী পার্শ্ববর্তী উপজেলা রামুতে ২০১২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বৌদ্ধ বসতীতে হামলার ঘটনায় আটক হওয়ার পর ২০১৩ সনে কারাগার থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা করে দ্বিতীয় বারের মত উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তোফাইল আহমদ। সে সময় অর্থাৎ এক এক বৎসর পূর্বে রামুর বৌদ্ধ বসতী মামলার অভিযোগপ্রত দেওয়া হলেও গত বৃহস্পতিবার তোফাইল আহামদকে উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে তোফাইল আহামদ বলেন- ‘প্রতিদ্বন্ধী পক্ষ আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করে আসছে দীর্ঘদিন’। আমি কারাগারে থেকে নির্বাচিত হওয়ার পূর্বের মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। জামিনের দীর্ঘ দেড় বৎসর সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ভাবে উপজেলা প্রশাসন পরিচালনা করেছি। সরকারের উন্নয়নের দিকগুলো সর্বাত্তক মানুষের মাঝে তুলে ধরে নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথ ভাবে পালন করেছি। বহিষ্কারাদেশের বিষয়ে তিনি আইনী প্রক্রিয়ায় যাবেন কিনা তা বিবেচনা করছেন বলে তিনি জানান।


শেয়ার করুন