নদী রক্ষায় আদালতের নির্দেশনা, আইন প্রণয়নই যথেষ্ট নয়: রিজওয়ানা হাসান

ডেস্ক নিউজঃ

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নারী সংগঠক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নদী সংরক্ষণসহ পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক আইন প্রণয়ন এবং এ নিয়ে আদালতের নির্দেশনাই যথেষ্ট নয়। আইন ও আদালতের নির্দেশনা কার্যকর হচ্ছে কিনা, তাও নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশে যারা নদী দূষণের জন্য দায়ী, তারা খুবই শক্তিশালী এবং রাজনৈতিকভাবে যুক্ত। ১১ জুন শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে নদী বিষয়ক আন্তর্জাতিক এক সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখছিলেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। নদী সংরক্ষণ বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্স এই সম্মেলনের আয়োজন করে। বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশ থেকে নদী সংরক্ষণ ও পরিবেশ নিয়ে সোচ্চার সংগঠকরা চারদিনব্যাপী এই সম্মেলনে যোগ দেন। বিশ্বের সর্বত্র নদ-নদীর প্রবাহ, নদী নিয়ন্ত্রণ, পানি দূষণ এসবের কারণ ও প্রতিকার নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও সংগঠকরা কথা বলেছেন সম্মেলনের বিভিন্ন পর্যায়ে।

হোয়াইট হাউস সংলগ্ন এলাকার ক্যাপিটেল হিল্টন হোটেলের মূল মঞ্চে তৃতীয় দিনের মূল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল চমৎকার উপস্থাপনার মাধ্যমে রিজওয়ানা হাসানকে মঞ্চে আহ্বান জানালে মিলনায়তনভর্তি লোকজন দাঁড়িয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে সম্প্রতি ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া রিজওয়ানা হাসান সাদা রঙের ওপর জামদানি ছাপের শাড়ি পরে মঞ্চে উপস্থিত হলে পিনপতন নিস্তব্ধতার মধ্যদিয়ে লোকজনকে তাঁর বক্তব্য শুনতে দেখা যায়। সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের নদী সংরক্ষণ ও পানি বিষয়ক আইন নিয়ে কথা বলেন। তাঁর বক্তৃতায় সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকার মিশিগানে ফ্লিন্ট পানি সংকট এবং এ সংক্রান্ত মামলা এবং বৈষম্যের অভিযোগের বিষয়গুলো উঠে আসে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে নদী সংরক্ষণ আইন ও আইনের কার্যকারিতা শক্তিশালী করার চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান নদীর নয়টি অধিকার নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন। পরিবেশ দূষণ, পানি দুষণের সাথে বর্ণবিদ্বেষসহ সাম্প্রতিক সময় অর্থ পাচারের মতো অপরাধ আলোচিত হচ্ছে বলে তিনি পরিবেশ আন্দোলনকারীদের জানান।

বাংলাদেশের নদী দূষণের চিত্র তুলে ধরে তিনি সিলেট সীমান্তের ডাউকি নদীর ২৫ বছর আগের এবং এখনকার চিত্র তুলে ধরেন। রিজওয়ানা হাসান বলেন, দূষণের ফলে নদী বিলীন হচ্ছে, গতি হারাচ্ছে, প্রকৃতিতে এর প্রভাব পড়ছে। ডাউকি নদীর বাস্তবতাই একটি বড় উদাহরণ হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। রিজওয়ানা হাসান তাঁর বক্তব্য শেষে তাঁকে বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নের জবাবে পানি ও পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন আইন ও প্রতিকারের কথা তুলে ধরেন। নদী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে যোগ দিচ্ছেন শরীফ জামিল, আব্দুল করিম কিম এবং তোফাজ্জল সোহেল। ২০১৯ সালে ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্সের ২০ বছর পূর্তিতে সারাবিশ্বে ঘোষিত ২০ জন ওয়াটারকিপার যোদ্ধার একজন হিসাবে শরীফ জামিলকে সম্মানিত করা হয়। আব্দুল করিম কিম বাপার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাপা সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক। ২০০৬ সাল থেকে তিনি পরিবেশ আন্দোলনে যুক্ত হন। গত দেড় দশকে সিলেট বিভাগের নদ-নদী, হাওর-জলাশয়, বন-বন্যপ্রাণী, পাহাড়-টিলা ও ঐতিহ্য রক্ষায় অসংখ্য আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন আব্দুল করিম কিম। ২০১৪ সালে ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্স তাঁকে সুরমা নদীরক্ষায় সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার মনোনীত করে। তোফাজ্জল সোহেল বাপার হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক। তিনি পুরাতন খোয়াই নদী দখলমুক্ত করা, হবিগঞ্জের মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলাজুড়ে শুরু হওয়া শিল্পদুষণবিরোধী চলমান আন্দোলনে্র নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০১৪ সালে ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্স তাঁকে খোয়াই নদীরক্ষায় খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার মনোনীত করে।


শেয়ার করুন