নতুন জীবন পাবে সাড়ে ৪ হাজার পরিবার

WWWWশাহেদ ইমরান মিজান, সিটিএন :
তারা চির উদ্বাস্তু! ৯১ এর প্রলংয়কারী ঘূর্ণিঝড় তাদের করেছে ঘরছাড়া; জন্মভূমি ছাড়া। এরপরের জীবন চিত্র এক প্রকার যাযাবর কাহিনী। জীবনের প্রয়োজনে জন্মভূমি দ্বীপ উপজেলা কুতুদিয়া ছেড়ে সবাই হয়েছেন নিরুদ্দেশ! এসব মানুষের একটি বিরাট অংশের ঠাঁই হয়েছিল কক্সবাজার পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডে। তারা দীর্ঘদিন জলভাসা অনুন্নত এই এলাকায় বসবাস করছিল। কিন্তু এর মধ্যে খবর আসে তাদের উৎখাত করা হবে। কারণ কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে করা হচ্ছে। এর জন্য সব জমি দরকার। এতে মাথায় বাজ পড়ে সেখানকার সাড়ে ৪ হাজার পরিবারের অন্তত ৩০ হাজার মানুষের। এ নিয়ে দীর্ঘ দিন চলে আন্দোলন-সংগ্রাম। তবুও পেরে উঠেনি। তাতে দমে যান তারা। বাধ্য হয়ে দুর্গম খুরুস্কুলে বরাদ্দ করা আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনাগত অসুন্দর ভবিষ্যতই ছিল ভরস! কিন্তু সরকারি কর্তৃপক্ষ ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, খুরুস্কুল আশ্রয়ণ প্রকল্প গতানুতিক আশ্রয়ণ প্রকল্পের আদলে হবে না। এটি হবে বাংলাদেশের আধুনিক সব সুবিধা সম্বলিত একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প। সেখানে বসবাসকারীরা পাবেন রাষ্ট্রীয় সব নাগরিক সুবিধা। সেসব সুবিধায় এক নতুন জীবন পাবে আধুনিক কক্সবাজার পৌরসভায় অনাধুনিক জীবনযাপন এই মানুষগুলো। রোববার কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আয়োজিত খুুরুস্কুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত করণ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এমন চমকপ্রদ আশার কথা জানান।
চট্টগ্রাম বিভাগী কমিশনার মোঃ আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মূখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বিশেষ সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রকল্ড পরিচালক মোঃ জহিরুল ইসলাম, কক্সবাজার-রামু আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, ও সংরক্ষিত আসনের সাংসদ খোরশেদ আরা হক । আরো উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসাইনসহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক গণ, পুলিশ সুপার, জেলার সকল সরকারি দপ্তরের প্রধানগণ, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম রহিম উল্লাহসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।
সভায় প্রকল্প সংশ্লিষ্ট, সরকারের স্থাপত্য অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডিসহ সব সংশ্লিষ্ট বিভাগ তাদের পরিকল্পিত কাজের চিত্র তুলে ধরেন।
তাদের দেয়ার চিত্র মতে, পুরো আশ্রয়ণ প্রকল্পকে ৫টি জোনে ভাগ করা হবে। এই ৫ জোনে থাকবে আবাসিক বাসস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক, মসজিদসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ইয়ার্ড।
নকশা মতে, পুনর্বাসিত সাড়ে ৪ হাজার পরিবারের জন্য থাকবে একটি করে আবাসিক বাসা। এসব বাসার জন্য সেখানে ২৫৩ একর জমিতে ২৪৫টি ভবন তৈরি করা হবে। এইসব ভবন ৫ তলার পরিকল্পনা থাকলেও নিরাপত্তার সংকীর্ণতার কারণে তা আপাতত ৪ তলা হবে। পরবর্তী হবে ৫ তলায় উত্তীর্ণ করা হবে। এসব ভবনের গ্রাউন্ডে থাকবে শিশুদের খেলার জায়গা। যেখানে একই সাথে জাল বুননের কাজও করা যাবে। একই সাথে বড়দের জন্য বিনোদনের স্পট। প্রতি বাসা ভিত্তিক থাকবে স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট, শৌচার, রান্নাঘর ও বিশ্রামাগার। সেখানে পড়ালেখার সুবিধাসহ সব সুবিধা থাকবে।
প্রকল্পের সাথে থাকবে কক্সবাজার শহরের নিবিড় যোগাযোগ ব্যবস্থা। কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট থেকে বাঁকখালী নদীর উপর তৈরি করা পরিকল্পিত বেইলি সেতু। এরপর সেখান থেকে প্রকল্পস্থান পর্যন্ত প্রসস্ত সড়ক। সেতুর জন্য বরাদ্দ ২০০ কোটি টাকা।
এই রাস্তা দিয়ে নির্বিঘেœ যেকোন মুহূর্তে কক্সবাজার শহরে আসা-যাওয়া করা যাবে। ২১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিমানবন্দরের ভূমি উন্নয়ন ও সৈকত তীরে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ হবে।
অন্যদিকে মৎস্য শিল্পের উপর নির্ভরশীল এসব মানুষের জীবিকা নির্বাহের জন্য মৎস্য শিল্পের উন্নয়নমূলক সব সুবিধা থাকবে। থাকবে প্রসস্ত শুটকি মহাল ও মৎস্য ঘাট। এতে করে জীবিকার শতভাগ নিশ্চয়তা পাচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার পরিবার।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য ৬৮২ একর খাসজমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আরও ১১৬ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

 


শেয়ার করুন