ধর্ষণ, ধর্ষণ, ধর্ষণ!

rape_40308সিটিএন ডেস্ক:

আমার মনে হয় ধর্ষকেরা একজাতীয় মানসিক রোগী, একটি জাতির অধিকাংশ লোকও হতে পারে সেই রোগে আক্রান্ত। যেসব দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটে, সেসব জাতির মানুষেরা মানসিকভাবে বেশি অসুস্থ। মূর্খতা, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, অন্ধত্ব, নারীর অনুভূতি সম্পর্কে অজ্ঞতা ইত্যাদি উপাদান ধর্ষণ উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে। তা ছাড়া যে দেশের নারী যত অসহায়, সে দেশে ধর্ষণের প্রকোপ ততো বেশি।
পুরুষতান্ত্রিকতার চরম রূপ বিরাজমান থাকায় এখানকার সংস্কৃতি প্রচণ্ড রকমভাবে ধর্ষিতার বিপক্ষে থাকে। তাই সে নিজে ধর্ষিত হয়েও লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে জানতে দেয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষিতা এবং তার পরিবার বিষয়টি চেপে যায়।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, ধর্ষণ হচ্ছে নিষ্ক্রিয় নারীর ওপর শুধু বল প্রয়োগই নয় ভীতসন্ত্রস্ত নারীর ওপর নির্মম পাশবিকতা। আন্দ্রিয়া ডরকিন বলেছেন, ‘ধর্ষণ কোনো দুর্ঘটনা নয়, কোনো ভুল নয়। পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে যৌনতার সংজ্ঞা হলো ধর্ষণ। যত দিন পর্যন্ত এই সংজ্ঞা বহাল থাকবে, তত দিন পর্যন্ত যৌন আক্রমণকারী হিসেবে পুরুষ এবং তার শিকার হিসেবে চিহ্নিত হবে নারী। এই সংস্কৃতিকে যারা স্বাভাবিক মনে করে, তারা ঠান্ডা মাথায় প্রতিদিন ধর্ষণ চালিয়ে যায়।’ ডরকিনের এই সংজ্ঞা থেকে আমরা আরও পরিষ্কার যে, ধর্ষণ সম্পূর্ণরূপে পুরুষতান্ত্রিকতার কুফল। ব্রাউন মিলার দেখিয়েছেন, ধর্ষণকারী কোনো ব্যক্তি নয়, প্রকৃত ধর্ষক হচ্ছে পুরুষতন্ত্র¿। ধর্ষণ নারীকে সর্বদা ভীত-সন্ত্রস্ত রাখে, নারীর স্বাধীনতা খর্ব করে এবং নারীর অভিভাবক হিসেবে পুরুষকে প্রতিষ্ঠা করে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, ধর্ষণ এমন একটি অপরাধ যেখানে ভিকটিমকেই সামাজিকভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ধর্ষণের বিভীষিকায় অনেক মেয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ধর্ষিতার ওপর পড়ে সুদূরপ্রসারী প্রভাব। পুরুষের প্রতি তার সকল বিশ্বাস ও আস্থা নষ্ট হয়ে যায় এবং পুরুষকে সে আর সহ্য করতে পারে না। কিন্তু ভাবতে কষ্ট হয়, দুঃখ হয়, আশ্চর্য লাগে যে, সমাজ ওই ধর্ষিতার প্রতি সদাচরণ করে না বরং তাকে ঘৃণা করে। তার প্রতি করুণা করে না বরং ছিঃ ছিঃ করে। এই হলো পুরুষতন্ত্র। পুরুষতন্ত্রকে কবর দিতে প্রয়োজন জোরে একটা ধাক্কা দেওয়া। শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় এসে গেছে, রাস্তায় নামতে হবে। তাই আমি বলব আসুন, আমরা মানুষ হই, ধর্ষণের বিভীষিকার বিপক্ষে শক্ত হয়ে দাঁড়াই এবং পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পুরুষতন্ত্রের কবর রচনা করে আমাদের শিশুদের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। সে লক্ষ্যে আমাদের প্রথম দফাটি হবে রাজনীতিতে সংস্কার, রাজনীতিকে করতে হবে দুর্গন্ধমুক্ত।
লেখক : প্রভাষক ও কলামিস্ট


শেয়ার করুন