ধরা খেলেন আরেক ‘বাবা’!

অনলাইন ডেস্ক :

গ্রেপ্তারের পর ভারতের কথিত ধর্মগুরু আচার্য শান্তিসাগর মহারাজ। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
ভারতের কথিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিং দুই অনুসারীকে ধর্ষণের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর এবার একই অভিযোগ উঠল আরেক ‘স্বঘোষিত বাবার’ বিরুদ্ধে। গুজরাটের নানপুরার কথিত ওই ধর্মগুরুর নাম আচার্য শান্তিসাগর মহারাজ (৪৫)।

টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল শনিবার রাতে সুরাট থেকে শান্তিসাগরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৯ বছর বয়সী এক তরুণী অনুসারী শান্তিসাগরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন। ওই তরুণীর বাড়ি মধ্যপ্রদেশে।

পুলিশ জানায়, ওই তরুণী বর্তমানে ভাদোদারায় থাকেন। চলতি বছরের মার্চ থেকে ওই তরুণী ও তাঁর মা-বাবা মহাবীর দিগম্বর জৈন মন্দিরে গিয়ে শান্তিসাগরের অনুসারী হন।

ওই তরুণীর অভিযোগ, ১ অক্টোবর তিনি তাঁর ভাই ও মা-বাবার সঙ্গে শান্তিসাগরের আশ্রমে যান। শান্তিসাগর তাঁদের সবাইকে মন্ত্রপাঠে ব্যস্ত রাখেন। এক ফাঁকে তিনি তরুণীকে নিয়ে অন্য একটি কক্ষে যান। সেখানে আচার পালনের নামে তাঁকে ধর্ষণ করেন।

পুলিশ জানায়, ওই তরুণী প্রথমে থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগ জানাতে ভয় পেয়েছিলেন। ঘটনার প্রায় ১১ দিন পর পরিবারের সহায়তায় অভিযোগ দায়ের করেন। তরুণীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। সেখানকার প্রতিবেদনে তরুণীকে ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে।

সুরাটের পুলিশ কমিশনার সতীশ শর্মা বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর শান্তিসাগরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল বিকেলে আথওয়া লাইনস পুলিশ স্টেশনে নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে রাতে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় শান্তিসাগরের হাজারো অনুসারী থানার সামনে ভিড় জমিয়েছিলেন।

সুরাটের (জোন ৪) ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ভিধি চৌধুরী বলেন, ‘ওই তরুণীকে ধর্ষণের প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। আচার্য শান্তিসাগরের বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে।’

তবে শান্তিসাগরের অনুসারীরা এই অভিযোগকে মিথ্যা ও আচার্যের সম্মানহানির জন্য অভিযোগ করা হয়েছে বলে দাবি করছে।

‘সকল দিগম্বর জৈন সমাজে’র নেতা ও আইনজীবী আর জি শাহ বলেন, ‘অভিযোগে বলা হয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে। কিন্তু রাত সাড়ে আটটার পরে মুনি কখনোই দর্শনার্থী ও অনুসারীদের সঙ্গে দেখা করেন না। এ ছাড়া ঘটনার পর এত দিন চুপ থাকা প্রমাণ করে যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই মুনির সম্মানহানি করতে এই অভিযোগ করা হয়েছে।’

দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের অভিযোগে করা দুটি মামলায় গত ২৫ আগস্ট দোষী সাব্যস্ত করা হয় হরিয়ানার কথিত ধর্মগুরু রাম রহিমকে। তাঁকে দুটি মামলায় ১০ বছর করে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন সিবিআই আদালত।

তবে দেশটিতে এমন কর্মকাণ্ড শুধু রাম রহিম ও আচার্য শান্তিসাগর মহারাজই ঘটাননি, তাঁদের আগেও অনেক ‘ধর্মগুরু’ এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। অনেকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। কথিত এসব ধর্মগুরুর মধ্যে আছেন কৌশলেন্দ্র প্রপানাচার্য ফলাহারি মহারাজ, ওডিশার সন্তোষ রাউল ওরফে সারথি বাবা, মধ্যপ্রদেশের লাল বুলচান্দনি ওরফে লাল সাঁই, বেঙ্গালুরুর স্বামী নিত্যানন্দ, কেরালার তিরুঅনন্তপুরমের স্বামী গঙ্গেশানন্দ, রাজস্থানের আশারাম বাপু, তাঁর ছেলে নারায়ণ সাঁই, হরিয়ানার সন্ত রামপাল, তামিলনাড়ুর স্বামী প্রেমানন্দ, উত্তর প্রদেশের প্রেমানন্দ মহারাজ, উত্তর প্রদেশের চিত্রকূটের স্বামী ভীমানন্দজি মহারাজ প্রমুখ।


শেয়ার করুন