দেড় লাখ কর্মী নেবে কাতার

labour sromik

কাজের খোঁজে বিদেশ যেতে আগ্রহী বাংলাদেশি কর্মীদের পছন্দের তালিকায় প্রথম দিকে থাকে কাতার। মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে অনুষ্ঠিতব্য ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে তৈরি হবে আন্তর্জাতিক মানের ৯টি ব্যয়বহুল স্টেডিয়াম, ছয়টি শহরকে গড়ে তোলা হবে নতুন রূপে! এসব কাজে দেশটিতে দরকার হবে কয়েক লাখ শ্রমিক। বিগত বছরে কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে নেপাল, ভারত, ফিলিপাইনকে প্রাধান্য দিত কাতার সরকার। তবে এখন থেকে কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। ২০২২ সালের বিশ্বকাপের প্রস্তুতি উপলক্ষে বিদেশি শ্রমিক নেওয়ার ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার পাবে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে ৫০ হাজার কর্মীর চাহিদাপত্র অনুমোদন দিয়েছে কাতার সরকার। আগামী ১০ মাসে এ সংখ্যা দাঁড়াবে দেড় লাখ। সৌদির পর এবার কাতার প্রায় সাত বছর বন্ধ থাকার পর খুলে গেছে সৌদি আরবের শ্রমবাজার। এবার বড় ধরনের সুযোগ তৈরি হলো মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ কাতারে। ২২ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দার ও বিএমইটির মহাপরিচালক বেগম শামসুন নাহারসহ ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল কাতার সফর করে। সফরকালে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল কাতারের শ্রমমন্ত্রী ড. আবদুল্লাহ সালেহ মুবারক আল খুলাইফির সঙ্গে বাংলাদেশে জনশক্তি রপ্তানির বিষয়ে বৈঠক করেন। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দেশটির জনশক্তি আমদানি খাতের সঙ্গে জড়িত সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক হয়। ২ মার্চ প্রবাসীকল্যাণ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে কাতার সম্মত হয়েছে। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই দেশটিতে লোক পাঠানো শুরু হবে। কেন কাতার? ১১ হাজার ৪৩৭ বর্গকিলোমিটারের উন্নত এ দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ২১ লাখ। দেশটিতে বসবাসরতদের বড় একটি অংশ বিদেশি শ্রমিক। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ বাংলাদেশি কর্মী গেছে কাতারে। ১১ বছর ধরে কাতারে আছেন মোহাম্মদ ফারুক। কন্ট্রাক্টে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্যানিটারির কাজ করেন, অবসরে গাড়ি চালান। তিনি জানান, কাতারের কাজের পরিবেশ বেশ ভালো, নিয়োগকর্তারা কর্মীদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করেন। দক্ষ কর্মীরা চাকরির শুরুতেই বেশ ভালো বেতন পান। কাতারে নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত মোহাম্মদ আলমগীর জানান, ভালোই আয় করছেন তিনি। ভালোভাবে নিজের থাকা-খাওয়ার পর দেশে পরিবারের জন্য টাকা পাঠাতে কোনো সমস্যা হয় না। কারা যেতে পারবেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, বিদেশে চাকরির উদ্দেশ্যে যেতে ইচ্ছুক যেসব কর্মী সরকারি ডাটাবেইসে নাম নিবন্ধন করেছে তাঁরা যাওয়ার সুযোগ পাবেন। নিবন্ধন ছাড়া কেউ দেশের বাইরে কাজে যেতে পারবে না। যাঁরা এখনো ডাটাবেইসে নাম নিবন্ধন করেননি, তাঁরাও নতুন করে নিবন্ধনের মাধ্যমে কাতার যাওয়ার সুযোগ পাবেন। যাঁরা আগে নিবন্ধন করেছেন, তাঁদের আবার নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই। কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো মধ্যস্থতাকারী থাকবে না। কাতারের রিক্রুটিং এজেন্সি দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠাবে এবং মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশি এজেন্সিগুলোকে চাহিদাপত্র দেওয়া হবে। এতে ভিসা ট্রেডিংয়ের সুযোগ থাকবে না। ডাটাবেইস থেকে লটারির মাধ্যমে চাহিদাপত্রের তিন গুণ কর্মীর তালিকা রিক্রুটিং এজেন্সিকে দেওয়া হবে। সেখান থেকে তারা কর্মী বাছাই করে কাতারে পাঠাবে। নিবন্ধন করবেন যেভাবে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ডাটাবেইসে বিদেশে চাকরিপ্রার্থীদের নাম নিবন্ধন করতে হয়। বিএমইটির মহাপরিচালক বেগম শামসুন নাহার জানান, ৫ মার্চ থেকে সারা দেশে নারী কর্মীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় আপাতত পুরুষ কর্মীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। ২৮ মার্চ মহিলা কর্মীদের নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর আবার আগের নিয়মে পুরুষ কর্মীরা নিবন্ধন করতে পারবেন। নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে এবং দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, নাগরিকত্ব সনদপত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, কারিগরি প্রশিক্ষণ, ভাষা শিক্ষা ও অন্যান্য সনদের (যদি থাকে) সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে। রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সারা দেশের প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জনশক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগে নিবন্ধন করা যাবে। নির্দিষ্ট ফি দিয়ে সেখান থেকে নিবন্ধন করতে হবে। ডাটাবেইসে নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর প্রার্থীর ছবিসহ একটি আইডি কার্ড দেবে। এই কার্ডে একটি সিরিয়াল নম্বর থাকবে, এর মাধ্যমে প্রার্থীর তথ্য শনাক্ত করা যাবে। পাঠানো হবে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে নির্মাণ ও সেবা খাতের বিভিন্ন পেশায় কাতারে শ্রমিক পাঠানো হবে। তবে কর্মীদের কাছ থেকে যেন অতিরিক্ত অর্থ আদায় না করা হয় এবং কোনো কর্মী প্রতারণার শিকার না হয়, সে বিষয়ে নজরদারি করবে সরকার। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো কর্মী বিদেশে পাঠাতে পারবে না। ভুয়া রিক্রুটিং এজেন্সির শরণাপন্ন হয়ে প্রতারণার শিকার হন অনেকেই। একটু সতর্ক হলে এসব প্রতারণা এড়ানো যায়। যোগাযোগ করতে হবে সরকার অনুমোদিত বৈধ এজেন্সির সঙ্গে। সরকার অনুমোদিত বৈধ এজেন্সির তালিকা পাওয়া যাবে বিএমইটির ওয়েবলিংকে- www.bmet.gov.bd/BMET/raHomeAction খরচাপাতি রিক্রুটিং এজেন্সির সার্ভিস চার্জ বাবদ গুনতে হবে দুই থেকে চার হাজার টাকা। পাসপোর্ট তৈরিতে প্রয়োজনীয় খরচ ছাড়া অন্য সব খরচাপাতি বহন করবে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান। প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী জানান, আগে একজন কর্মীর কাতারে যেতে তিন থেকে চার লাখ টাকা খরচ হতো, এখন তা হবে না। কর্মীদের কাতার যাওয়া, ভিসা ও অন্যান্য খরচ বহন করবে দেশটির জনশক্তি আমদানিকারকরা। পাসপোর্ট করবেন যেভাবে সাধারণ পাসপোর্ট করতে এক মাস সময় লাগে, জমা দিতে হয় তিন হাজার টাকা। বিশেষ প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে সাত দিনের মধ্যে পাসপোর্ট করা যায়, খরচ পড়বে ছয় হাজার টাকা। আবেদনের সময় পাসপোর্ট প্রাপ্তির ধরন সাধারণ বা জরুরি উল্লেখ করে দিতে হবে। পাসপোর্টে অসাবধানতাবশত ছোট ভুল পরবর্তী সময়ে বড় সমস্যায় ফেলে। আবেদন ফরমে নাম, জন্ম তারিখ, উচ্চতা সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। পাসপোর্ট আবেদনের সময় পেশা নির্বাচন সঠিক হচ্ছে কি না তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই শঙ্কা কাজ করে, পরবর্তী সময়ে কোন পেশায় বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পাবে তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে থাকে। বিএমইটির মহাপরিচালক বেগম শামসুন নাহার বলেন, কোনো নির্দিষ্ট কাজে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মীরা তার দক্ষতা অনুযায়ী পেশা নির্বাচন করবে। যদি কোনো প্রশিক্ষণ বা দক্ষতা না থাকে তবে পেশা হিসেবে সাধারণ কর্মী নির্বাচন করতে হবে। সরকারের পাসপোর্টসংক্রান্ত ওয়েবসাইট www.passport.gov.bd ঠিকানায় অনলাইনে পাসপোর্টের আবেদন করা যাবে। আবেদনের বিস্তারিত নিয়ম ও শর্তাবলি ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। তবে পাসপোর্ট অফিসে সরাসরি আবেদন করাই ভালো। বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে (www.dip.gov.bd) বিভাগীয় ও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ঠিকানা ও মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের আবেদন ফরম পাওয়া যাবে। দক্ষ কর্মীদের চাহিদা বেশি প্রশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মীদের চাহিদা ও বেতন অদক্ষদের তুলনায় বেশি। ডাটাবেইসে নিবন্ধিতদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। কাতারে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে দক্ষরাই প্রাধান্য পাবে। বিএমইটির প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে কেউ নিজেকে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। সারা দেশে ৩৮টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে কর্মীদের নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের তালিকা, ঠিকানা ও ফোন নম্বর পাওয়া যাবে www.bmet.gov.bd/BMET/trainingHomeAction লিংকে। জানতে হবে ভাষা কাতারে বসবাসের সময় এবং কর্মক্ষেত্রে কথোপকথনের জন্য দেশটির প্রধান ভাষা আরবি জানতে হবে। কথোপকথনের জন্য ভাষার প্রাথমিক ধারণা না থাকলে অসুবিধায় পড়তে হবে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের অনেক ভাষা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আরবি ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্স চালু আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, একুশেসহ বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে আরবি শেখানো হয়। বই পড়েও শেখা যাবে আরবি ভাষা। – কালেরকন্ঠ


শেয়ার করুন