দেখে এলাম নেপালের ট্যুরিজম, কাঠমন্ডুর পথে পথে শুধুই বিদেশি!

012 আনছার হোসেন ,
নেপালের কাঠমন্ডু থেকে ফিরে ৥

ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে নেমেই মনটা খারাপ হয়ে গেল!
যখন কাঠমন্ডু ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়ে গেল, তখনই দেশের জন্য মনটা হু হু করে উঠেছিল। পাঁচটা দিন নেপালে কাঠিয়ে আবারও চেনামুখ, চেনা শহরে ফিরবো। মনটা ভালো হওয়ারই কথা। আমরা যখন বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে কাঠমন্ডু ত্রিভূবণ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছলাম। যখন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৭০২ ফ্লাইটে উঠে বসলাম। যখন আকাশে উড়লাম। সবকিছুতেই ছিল দেশে ফেরা আনন্দ। তাহলে ঢাকায় নেমেই মনটা খারাপ হয়ে গেল, এই প্রশ্ন মনে আসতেই পারে!
আমরা বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ল্যান্ড করলাম। নেমেই আমাদের টিম লিডার ইঞ্জিনিয়ার জাবের ভাই ও অন্যরা নামাজের জন্য ছুটলেন। বাথরুম ও ওযু সেরে নামাজ পড়ে ইমিগ্রেশন শেষ করতে করতেই বিকাল সোয়া ৫টা বেজে গেল। কিন্তু একি! লাগেজ বেল্টে গিয়ে দেখি যাত্রীরা সবাই অপেক্ষায় আছেন। বেল্ট তখনও দাঁড়িয়ে আছে।
আমরা অপেক্ষা করতে থাকলাম, আর প্রায় সবাই বিমান বন্দরের অনিয়ম নিয়ে যে যার মতো বিষোদগার করতেই থাকলেন। আমাদের সাথে আসা এক ভদ্রলোক গজগজ করতে করতে বললেন, ‘এমন লেট কেবল এই এয়ারপোর্টেই হয়, পৃথিবীর অন্য কোন এয়ারপোর্টে লাগেজ দেরিতে পাওয়ার নজির পাওয়া যাবে না। এরা কি আমাদের কাছ থেকে ট্যাক্স নেয় না! তাহলে সেবা দিতে এতো কার্পণ্য কেন!’
আসলেই অনেক দেরিতে লাগেজ বেল্ট ঘুরতে শুরু করেছে। এমনটা তো হওয়ার কথা নয়! ওই সময় অন্য কোন ফ্লাইটও ছিল না। লাগেজ পেতে পেতেই আমাদের সন্ধ্যা গড়িয়ে প্রায় সাড়ে ৬টা বেজে গেল। মন খারাপ না হয়ে উপায় আছে!
এবার আসা যাক, কাঠমন্ডু বিমান বন্দরের কথায়। আমরা যখন ১১ জানুয়ারি কাঠমন্ডু ত্রিভূবণ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌছালাম তখন আমাদের অন-এরাইভাল ভিসা নেয়ার প্রক্রিয়া ছিল। ইমিগ্রেশন ছিল। কিন্তু এই কাজ করতে আমাদের লেগেছিল মাত্রই ১৫ থেকে ২০ মিনিট। আর এই কাজ সেরে আমরা যখন লাগেজ বেল্টে গেলাম তখন দেখলাম, আমরাই সবার শেষে এসেছি। অন্যরা ইতিমধ্যেই লাগেজ সংগ্রহ করে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন।
এখন কী প্রশ্ন উঠবে না, ওরা পারলে আমরা পারবো না কেন! 011
অন্য অনেকগুলো ইভেন্ট যদি বাদই দিই, শুধু যদি পৃথিবী দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের কথাই ভাবি, এটি হতে পারতো পৃথিবীর শ্রেষ্টতম ট্যুরিস্ট স্পট। অথচ এই বালিয়াড়ি সৈকতে কী কোন বিদেশি পর্যটক দেখি! যাওবা আসেন একেবারেই হাতেগোনা! বিদেশিরা কক্সবাজারে কেন আসবেন! কী আছে কক্সবাজারে তাদের জন্য!
এবার আসি নেপালের কথায়। বিদেশি ট্যুরিষ্টদের জন্য কী নেই নেপালে! আছে নিরাপত্তা। আছে ‘চাওয়া মাত্র পাওয়া’র সুবিধা। আছে শত শত মানি এক্সচেইঞ্জ সেন্টার। আছে ট্যুরিষ্টবান্ধব হোটেল-মোটেল। আছে পথের দ্বারে দ্বারে বার, ক্লাব ও ডান্স পার্টি! আর পুলিশ সেই স্পটগুলোতে দাঁড়িয়ে সুন্দর পাহারা দিচ্ছেন। কোন ট্যুরিষ্টকে একবারও জিজ্ঞেস করছেন না, ‘ওদিকে যাচ্ছেন কেন!’ ‘এদিকে যাবেন না!’ ‘কেন আসলেন!’ ‘কোথায় যাবেন!’ শত শত ইউরোপিয়ান, আমেরিকান ট্যুরিষ্ট কাঠমন্ডুর রাস্তায় হাঁটছেন। তাদের বাধা দেয়ার কেউ নেই। নেপালি সাধারণ অধিবাসিরাও মনে করেন, ট্যুরিষ্টরা তাদের ‘লক্ষী’! যে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি, ‘বনধে’র মতো কর্মসূচিতেও ট্যুরিষ্টদের গাড়ি থাকছে উম্মুক্ত।
আমি অবাক হয়ে দেখলাম, বিরোধী দলের ‘বনধ’ চলছে। শত শত পিকেটার রাস্তায়। রাস্তায় কোন গাড়ি নেই। কোন দোকান খোলা নেই। তবে ‘ট্যুরিষ্ট অনলি’ লেখা গাড়ি চলছে নির্বিঘেœই! গাড়ি পিকেটারদের সামনে আসলেই ‘ট্যুরিষ্ট’ দেখলেই এগিয়ে যাও! আমাদের মতো তেড়ে আসছেন না কেউ!
তাহলে আমাদের ট্যুরিজম এগুবো কিভাবে! কাঠমন্ডু শহরে হাজার হাজার বিদেশি ট্যুরিষ্ট, আর বাংলাদেশে বিদেশি ট্যুরিষ্টের দেখা মিলে কালেভদ্রে!
এটা নিয়ে কী কেউ ভাবে!
ঢাকায় এসে ভাবছিলাম, কক্সবাজার কিভাবে ফিরবো। রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত! বাস নিয়ে কক্সবাজার যাওয়ার সাহস করতে পারছি না। যে কোন মুহুর্তে হামলা, কিংবা গাড়িতে আগুন! শেষ পর্যন্ত আকাশ পথেই কক্সবাজার ফিরতে হলো।
এভাবে চললে তো ট্যুরিষ্ট আশা করা যায় না। যেখানে আমরা নিজের ঘরে ফিরতেই নিরাপত্তা পাচ্ছি না।
আমরা নেপাল গিয়েছিলাম বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৭০১ ফ্লাইটে ৩৪ হাজার ফুট উপর দিয়ে, আর ঢাকায় ফিরেছিলাম ৩১ হাজার ফুট উপর দিয়ে একই এয়ারলাইন্সের বিজি-৭০২ ফ্লাইটে। আমরা যখন কক্সবাজার ফিরছিলাম ইউনাইটেড এয়ারের ফ্লাইটে, তখন সেটি উড়ছিল মাত্রই ১৩ হাজার ফুট উপর দিয়ে!
আকাশজুড়ে ছিল কেবলই মেঘের ভেলা। সেই মেঘের সাথে যুদ্ধ করেই যেন আমরা ফিরছিলাম! আর বুক কাঁপছিল দুুরু দুরু! বিমানবালা যাত্রার প্রাক্কালেই মহান আল্লাহর সহযোগিতা চেয়ে বলেছিলেন, ‘এই ফ্লাইটে গতি ও অবস্থান কেবল মাত্র আল্লাহরই হাতে। তিনিই এটিকে মানুষের আয়ত্বে এনে দিয়েছেন!’
আমরা যখন কক্সবাজার বিমান বন্দরে নামলাম, তখন সেই স্রষ্টারই কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ হয়ে গেলাম।
হে আল্লাহ, তুমিই আমাকে সেই সুদূর নেপালে নিয়ে গিয়েছিলে, আবার তুমিই আমাকে মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানদের কাছে ফিরিয়ে এনেছো! শুকরিয়া, আলহামদুলিল্লাহ।

আনছার হোসেন, নির্বাহী সম্পাদক ও বার্তা প্রধান এবং সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন, কক্সবাজার জেলা কমিটি।
ই-মেইল ঃ ধহংধৎ.পড়ী@মসধরষ.পড়স


শেয়ার করুন