দেখা হলো না ‘কিং প্যালেস’, তবুও বাংলাদেশি মেয়ে কাকলীর পুরস্কার পাওয়ার আনন্দ!

Cox'sBazar-Picture-আনছার হোসেন,
নেপালের কাঠমন্ডু থেকে :

কাঠমন্ডু শহরে সফরের চতুর্থ দিনটা ভালো হলো না।
আমরা ভাবছিলাম, নেপাল যখন আসলামই তখন হিমালয়ের খুব কাছাকাছি না গিয়ে দেশে ফিরে যাওয়াটা হিমালয়ের অবমাননাই হবে! কিন্তু আমাদের টিম লিডার জাবের ভাই জানালেন, নেপালে হিমালয়ের কাছাকাছি যাওয়া, কিংবা র‌্যাকিং করার জন্য যতগুলো বেস ক্যাম্প আছে তার যে কোনটির সাথে আগেই যোগাযোগ করতে হবে। তারপর তালিকাভূক্তি, তারও পরে এক সপ্তাহ ধরে হিমালয়ের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য শেরপাদের দেয়া ট্রেনিংয়ে থাকতে হবে।
কিন্তু আমাদের ততদিন থাকার প্রস্তুতি নাই!
জাবের ভাইকে জানালাম, জলবায়ূ পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের সমাপ্তি সেশনে যোগ দেবো। সকালের সেশনটা কাঠমন্ডু শহরে কিছু দেখা যায় কিনা দেখি! জাবের ভাই, রনি ভাই, আলম ভাই আর আমাদের অতিপ্রিয় হয়ে উঠা ‘চাচা’ মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান কনফারেন্সে চলে গেলেন। আমরা তিনজন (আমি, রহমান ভাই আর সেলিম) বেলা ১১টার দিকে বেরুলাম ‘কিং প্যালেস’ দেখার জন্য। ‘কিং প্যালেস’ হলো প্রয়াত নেপালি রাজার প্রাসাদ। নিজের ছেলের হাতে স্বপরিবারে মৃত্যুবরণের পর নেপালের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজা বীরেন্দ্র বীর বিক্রম শাহ দেবের এই প্রাসাদটিকে নেপালের গণতান্ত্রিক সরকার জাদুঘরে পরিণত করেছে। যদিও নেপালবাসি মনে করেন, অত্যন্ত জনপ্রিয় ওই রাজা নিজের ছেলে হাতে নয়, ওই হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলেন রাজা জ্ঞানেন্দ্র ও তার ভাই।
Cox'sBazar-Picture-15.0রাজা বীরেন্দ্রের ওই প্রাসাদই এখন জাদুঘর হিসেবে সাধারণ দর্শণার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। বিদেশিরা তিনশত নেপালি রুপি ফি দিয়ে এই প্রাসাদ ঘুরে দেখতে পারেন। তবে নেপালিদের জন্য এই ফি মাত্র ৫০ রুপি আর শিক্ষার্থীদের জন্য ২০ রুপি।
আমাদের হোটেল স্কাইলার্ক থেকে ‘কিং প্যালেস’ বেশি দূরে নয় বলে আমরা তিনজন হাঁটা শুরু করলাম। অনেকটা পথ ঘুরে হাঁটতে হাঁটতে ‘কিং প্যালেসে’ পৌছলাম ঠিকই, কিন্তু আমরা নিরাশই হলাম। আজ ‘কিং প্যালেস’ বন্ধ রয়েছে। প্রতি মঙ্গলবার ও বুধবার বন্ধ রাখা হয়। আর বৃহস্পতিবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজার কারণে বিশেষ ছুটি থাকায় সেদিনও ‘কিং প্যালেস’ দেখা যাবে না।
আমরা নিরাশ হয়ে আবারও হাঁটতে হাঁটতে থামেল ফিরলাম। হোটেলে অবশ্য ফিরলাম না। বিদেশ যখন আসলাম তখন কিছু কেনাকাটা কী না করলেই নয়! ছোট দুই বাচ্চা, ভাইপো-ভাইজি আর মা-বাবার জন্য হালকা কেনাকাটা করেই বেলা আড়াইটার দিকে ছুটলাম কনফারেন্সে।
ভালো ভাবেই কনফারেন্সের সমাপ্তি অধিবেশনে যোগ দিলাম। বেশ কিছু ঘোষণার মধ্যদিয়ে এবারের তিনদিনের কনফারেন্স শেষ হলো। ২৭টি দেশের ২৫০ জন পরিবেশবাদী শিক্ষাবিদ, এনজিও, শিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি এই কনফারেন্সে যোগ দিয়েছেন। এই কনফারেন্সে ৭৫ জন প্রতিনিধি তাদের নির্ধারিত প্রবন্ধ (স্ল্ইাড) উপস্থাপন করেছেন। ৩টি পরিকল্পনা সংক্রান্ত সেশনও হয়েছে এই কনফারেন্সে।
সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো এবারের কনফারেন্সে পোস্টার প্রদর্শনী প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি মেয়ে কাকলী তানভিন ‘বেস্ট ফাইভে’র একজন হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন। বেসরকারি সংস্থা ‘কেয়ার বাংলাদেশ’ এর কুমিল্লা অফিসে কর্মরত রয়েছেন। তার সাথে দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, ভারত ও নেপালের একজন করে পোস্টার প্রেজেন্টার পুরস্কৃত হয়েছেন।
এখানে একটা বিষয় না বললেই নয়, ৭৫টি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হলেও তার মধ্যে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের উপস্থাপনা আলাদা ভাবে সকলের নজর কেড়েছে। অন্যদের উপস্থাপনা কৃষি, বন্যা, আবহাওয়ার নিরাপত্তা, পাহাড়সহ নানা জলবায়ূ পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে থাকলেও একমাত্র নদী বাঁচাও আন্দোলনই নদী নিয়ে উপস্থাপনা দিয়েছেন। নদীও যে জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে পারে সেই ধারণায় নতুন ভাবে উপস্থাপন করেছে নদী বাঁচাও আন্দোলন!
কনফারেন্স থেকে বেরুতে বেরুতেই সন্ধ্যা হয়ে গেল। ‘সলটি’ হোটেল থেকে বেরিয়েই আমাদের টিম লিডার ইঞ্জিনিয়ার জাবের ভাই (তিনি আবার তাবলীগের অনুসারি, বেশ কয়েকটি দেশও ঘুরেছেন তাবলীগের হয়ে) মাগরিবের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদ খুঁজতে শুরু করলেন।
Cox'sBazar-Picture-15.01.2015নেপাল হলো পৃথিবীর একমাত্র হিন্দু দেশ। আর সেই দেশেরই রাজধানী কাঠমন্ডু। সেই শহরে ৩ শতাংশ মুসলিম নাগরিকের ইবাদতখানা মসজিদ খুঁজে পাওয়া সহজ কথা নয়। সলটি হোটেলের কাছাকাছি কালিমাটি এলাকায় একটি বড় মসজিদ থাকলেও হাঁটতে হাঁটতে সেই এলাকা আমরা ফেলে এলাম। কিন্তু জাবের ভাই নাছোড়বান্দা! তিনি মসজিদ খুঁজতে খুঁজতে হাঁটতেই থাকলেন। সেই হাঁটাতেই সলটি হোটেল থেকে থামেল এলাকায় আমাদের হোটেল স্কাইলার্কে পৌছে গেলাম।
এই হাঁটার মাঝপথেই ক্ষেপে গেল সেলিম। সে নতুন জুতা পরে পায়ে ফুসকা ফেলে দিয়েছে। সে ভালো ভাবে হাঁটতে পারছে না। কিন্তু কী আর করা। কাফেলা যখন হেঁটেই যাচ্ছে, তখন কী আর সেলিম না হেঁটে পারে!
এবার শুরু দেশের ফেরার পালা। শুরু হলো প্রস্তুতি, সাথে ‘হালাল’ খাবার খেতে সেই আল-মদিনা হালাল ফুডে (রেষ্টুরেন্ট)! নেপালে শেষ রাতের খাবার  খেতে যাওয়া। তাই আয়োজনটা একটু অন্যদিনের চেয়ে একটু বেশিই!

আনছার হোসেন, নির্বাহী সম্পাদক ও বার্তা প্রধান, দৈনিক সৈকত এবং সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন, কক্সবাজার জেলা কমিটি।


শেয়ার করুন