মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুর্নীতি মামলা

দুর্নীতি মামলায় কক্সবাজারের সাবেক ডিসি কারাগারে

%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%b9%e0%a7%81%e0%a6%b2-%e0%a6%86%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%a8ইসলাম মাহমুদ :

মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুর্নীতি মামলার আসামি কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

উচ্চ আদালতের নির্দেশ মতে সোমবার দুপুর ১২টায় কক্সবাজারের চিফ জুড়িসিয়াল আদালতে হাজির জামিন আবেদন করেন রুহুল আমিন। চিফ জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌফিক আজিজ তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এর আগে ২১ মে রবিবার উচ্চ আদালতের দেয়া জামিনের মেয়াদ শেষ হয়। গত ২০১৪সালের ৭ডিসেম্বর সাবেক ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা এম এম মাহমুদুর রহমান কক্সবাজার সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং- ১৯। ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল মামলার চার্জসীট দাখিল করেন দুদকের চট্টগ্রাম উপপরিচালক সৈয়দ আহমেদ।

এ মামলায় ইতোপূর্বে গ্রেফতার হয়েছিলেন- সাবেক উচ্চমান সহকারী আবুল কাশেম মজুমদার, এডভোকেট নুর মোহাম্মদ সিকদার, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ জাফর আলম, সার্ভেয়ার মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। এদের মধ্যে জামিনে আছেন আবুল কাশেম মজুমদার ও নুর মোহাম্মদ সিকদার।

 দুদক পক্ষে আইনজীবি ছিলেন- দুদকের পিপি এডভোকেট মোঃ আব্দুর রহিম ও এডভোকেট মোঃ সিরাজ উল্লাহ। আসামী পক্ষে ছিলেন- এডভোকেট নুর সুলতানা সহ কয়েকজন আইনজীবী।

এডভোকেট আবদুর রহিম জানান, মামলার তদন্তে প্রকাশ পায় যে, আসামীরা পরস্পর যোগসজসে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অপরকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারনা ও জালিয়াতির মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহনকৃত ও সরকারী খাস ১নং খতিয়ানের জমি সহ ফিল্ড বুকে চিংড়ী ঘেরের কোন বিবরণ না থাকা সত্বেও আত্মসাতের অসৎ উদ্দেশ্যে আসামীরা জেনে শুনে পারস্পরিক যোগসাজসে প্রতারনা ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া ও অরেজিষ্ট্রীকৃত চুক্তনামা ও মাষ্টাররোলের ফটোকপি দাখিল করে অপরাধ মূলক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে ১৩৩৫ একর জমির চিংড়ী ফসলের ক্ষতিপূরণের প্রক্কলন তৈরী ও অনুমোদনের মাধ্যমে প্রত্যাশি সংস্থা, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানী বাংলাদেশ লিঃ এর নিকট হতে অন্যান্য ক্ষতিপূরণের সাথে চিংড়ী ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৬কোটি ২৪লাখ ৩৩হাজার ৩শ ২০ টাকা চেক সংশ্লিষ্ট অধিগ্রহনের হিসাবে জমা করেন। পরবর্তীতে ২০টি এল.এ চেক মূলে প্রায় ২০ কোটি টাকা উত্তোলন পূর্বক আত্মসাৎ করেন।

তিনি আরও জানান, সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ রুহুল আমিন গং এর দুর্নীতি তাতে শেষ নয়। ৫টি চেক প্রস্তুত ও প্রদান পূর্বক অবশিষ্ট প্রায় সাড়ে ২৬ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রচেষ্টার মাধ্যমে গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

দুদকের তদন্তে তাদের দুর্নীতি সঠিক বলে প্রমানিত হওয়ায় তাদের চার্জসীটভূক্ত করা হয়। চার্জসীট ভূক্ত ৩৬ আসামীর মধ্যে সাবেক ডিসি রুহুল আমিন ২৬নং আসামী। তিনি বর্তমানে অর্থমন্ত্রনালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপসচিবের দায়িত্বে আছেন।

এ মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন- মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়নের মিয়াজীপাড়ার আবুল বশরের ছেলে মোহাম্মদ আসিন, একই এলাকার বাদশা মিয়ার ছেলে রিদুয়ান, মৃত আবুল হোছাইন এর ছেলে আশরাফ আলী, কালারমারছড়ার মারাক্কার ঘোনার আনু মিয়ার ছেলে মোঃ সেলিম উদ্দিন, মাতারবাড়ী মাইজ পাড়ার মরহুম ছালেহ আহমদ সামাদ এর ছেলে মোঃ হারুন, আবু ছিদ্দিক এর ছেলে দানু মিয়া, নুরুল ইসলাম এর ছেলে মোঃ রফিকুল ইসলাম, মিয়াজী পাড়ার মৃত জাকির আহমদ এর ছেলে মীর কাশেম, মৃত ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে মোঃ সেলিম, মাইজ পাড়ার মোঃ রফিকের ছেলে আমিনুল ইসলাম, মিয়াজী পাড়ার মৃত হাজী ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে এরফান, বলির পাড়ার মৃত এলাদান এর ছেলে জকি আলম, মিয়াজী পাড়ার মৃত শফিউল আলম এর ছেলে মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, মৃত শফিউল আলম এর ছেলে মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, চকরিয়া উপজেলার বদরখালী মৃত হাসান আলীর ছেলে আবুল বশর, মাতারবাড়ীর তিতামাঝি পাড়ার মৃত ছালেহ আহমদ এর ছেলে নুর মোহাম্মদ, মাইজ পাড়ার মৃত নুরুল ইসলাম এর ছেলে মহিবুল ইসলাম, মিয়াজী পাড়ার মৃত হাজী আলী আহমদ এর ছেলে মোঃ জমির উদ্দিন ও জি.এম ছমি উদ্দিন, ধলঘাটা ইউনিয়নের মুহুরী ঘোনার মৃত আফলাতুন সিকদারের ছেলে সাবেক চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ বাচ্ছু, মাতারবাড়ী মাইজ পাড়া হাজী আশরাফ জামানের ছেলে রুহুল আমিন, হাজী আশরাফুজ্জামানের ছেলে মোঃ নুরুল আবছার, মৃত রহমত আলীর ছেলে ছালেহ আহমদ সামদ, মিয়াজী পাড়ার মৌলভী মফাজ্জল আহমদ এর ছেলে এস্তেফাজুল হক, হোয়ানকের মৃত মোঃ হোছাইন এর ছেলে মোঃ নুরুল ইসলাম, মাতারবাড়ীর বলির পাড়া মৃত শমশুল আলম এর ছেলে বশির আহমদ, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: জাফর আলম, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোং বাংলাদেশ লি: এর পিডি ইঞ্জিনিয়ার মো: ইলিয়াছ, সাবেক ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা মোঃ রাজিবুল আলম, মহেশখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান, জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সাবেক উচ্চমান সহকারি আবুল কাশেম মজুমদার, এল.এ শাখার সাবেক কাননগো আনোয়ারুল ইসলাম, সাবেক কাননগো মোঃ আবদুল কাদের ভূঞা, সাবেক সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলাম, সাবেক সার্ভেয়ার টিএম বাদশা মিয়া ও এডভোকেট নুর মোহাম্মদ সিকদার।

সুত্র মতে, মহেশখালী মাতারবাড়ি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের পর কক্সবাজার থেকে বদলী হওয়া জেলা প্রশাসক মোঃ রুহুল আমীন প্রশাসনের অন্যান্যদের বিরুদ্ধ ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্তির জন্য ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠে। ফলে মাতারবাড়ির বাসিন্দা এ.কে.এম কায়সারুল ইসলাম বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন।

প্রসঙ্গত মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়ী ইউনিয়নে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগি সংস্থা-জাইকা এ প্রকল্পে ২৮ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে সাত হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা।

বাকি তিন হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা প্রকল্পের বাস্তবায়নকারি সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কম্পানী লিমিটেড যোগান দেবে। আগামী ২০২৩ সাল নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।


শেয়ার করুন