“দুবাই” মানব সৃষ্টির অলৌকিক শহর

ssssswwআরিফ সিকদার বাপ্পী, দুবাই সংযুক্ত আরব আমিরাত:

একটি শহরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে কত সময় লাগে? হয়তো একেকটি শহরের রেকর্ড একেক রকম। কিন্তু দুবাই? এ শহরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে মাত্র ২০ বছর সময় লেগেছে। হ্যাঁ, ২০ বছরের মধ্যে দুবাই একটি ছোট্ট শহর থেকে আন্তর্জাতিক মানের শহরে পরিণত হয়েছে। এ শহর সবসময়ই নতুন রেকর্ড এবং অলৌকিক কিছু সৃষ্টি করে চলেছে এবং বিশ্বকে অবাক করছে। বিশ্বের সবচেয়ে বিলাশী সাত তারকার হোটেল ‘বুর্জ আল-আরব’ সে শহরে আছে। বিশ্বের বৃহত্তম মানব সৃষ্ট দ্বীপ, নাম ‘পাল্ম দ্বীপ’ সে শহরে আছে, বিশ্বের বৃহত্তম গৃহস্থিত স্কি কোর্স সে শহরে আছে, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার ‘বুর্জ খলিফা টাওয়ার’ সে শহরে আছে। বিখ্যাত আর কি নেই এ শহরে? এ শহর আর কত বিলাশী হবে? বিশ্বের কোন শহরের এতবড় বুকের পাটা আছে যে, দুবাইয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে?

দুবাইয়ের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই বিদেশি অভিবাসী। স্থানীয় লোকের সংখ্যা শুধু মাত্র ২০ শতাংশ। যেখানে সেখানে মানে সাধারণ কোনো জায়গায় তাদেরকে দেখা যায় না। কারণ সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাগরিকত্ব অর্জনকারী দুবাইয়ের মানুষেরা সাধারণত খুচরা বিক্রয়, রেস্তোরাঁ ও পর্যটন সেবা, এধরনের সেবামূলক চাকরি তারা করে না। তারা সরকার, ব্যাংক বা আন্তর্দেশীয় ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে। তাদের পারিবারিক জীবন আরও রহস্যময়। তারা সাধারণত সমুদ্রতীরবর্তী আবাসে থাকে বা বসবাস করে। যদিও তারা শহরের কেন্দ্রস্থলে দামি দামি অ্যাপার্টমেন্ট কিনে, কিন্তু তারা নিজেরা এমন বাড়িঘরে থাকে না। তারা তা ভাড়া দেবার জন্য এবং পুঁজি বিনিয়োগ করার জন্য কিনে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তারা প্রমোদতরী চালিয়ে সমুদ্রে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে এবং আরামে সময় কাটায়। অথবা দামি গাড়ি চালিয়ে সাই সাই করে মরুভূমির ভিতরে চলে যায়।

২০১৩ সালের নভেম্বরে দুবাই অর্জন করে সে দেশে ২০২০ সালের বিশ্ব মেলা আয়োজনের অধিকার। এ অধিকার পাওয়ার জন্য অনেক বছর ধরে চেষ্টা করতে হয় এবং এর জন্য অনেক টাকাও খরচ করতে হয়। নিজের দেশের সামর্থ্য বিশ্বকে দেখানোর জন্য দুবাই সরকার অনেক আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, শহরে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর মানে বিশ্বের কেন্দ্রীয় বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য তারা ৮.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করবে।

আর বর্তমানে এ শহর ২০২০ সালের বিশ্ব মেলা আয়োজনের জন্য বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রস্তুত। যদি অন্য কোনো দেশ বলে যে, এসব কাজ করতে অনেক অনেক টাকা লাগবে, তখন হয়তো এ কথা শুনে দুবাই সরকার এবং জনগণ হাসবে, আর বলবে টাকা? আমাদের কাছে কোনো সমস্যাই নেই।
আরেকটি প্রমাণ আছে, তা হল আতশবাজি অনুষ্ঠান। আতশবাজি অনুষ্ঠান হল বিশ্বের অনেক দেশের নববর্ষকে স্বাগত জানানোর একটি পদ্ধতি। ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি দুবাই-তার সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং বুর্জ খলিফা টাওয়ার , পাল্ম দ্বীপ, বুর্জ আল-আরব হোটেলে যৌথভাবে বিশ্বের বৃহত্তম একটি আতশবাজি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ওই অনুষ্ঠানে এক মিনিটের মধ্যে একসাথে ১ লাখ আতশবাজি পোড়ানো হয়েছে। সে অনুষ্ঠানের জন্য মোট ৫ লাখ আতশবাজি পুড়িয়েছে।

আতশবাজি পোড়ানোর ক্ষেত্রে এর আগে কুয়েত এক মিনিটে ৭৭ হাজারটি আতশবাজি পুড়িয়েছিল, তা ছিল সর্বশেষ রেকর্ড । কিন্তু চলতি বছরের ১ জানুয়ারি দুবাই এ রেডর্ক ভেঙে দিয়েছে।
এটাই হল দুবাই। এ শহর নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করতে এবং সারা বিশ্বকে অবাক করতে এক মূহূর্তের জন্যও থেমে নেই। হ্যাঁ, এমন শহর নিশ্চয়ই অনেকের স্বপ্ন পূরণের জন্যও ভালো মঞ্চ এনে দিয়েছে।

লেখক:- আরিফ সিকদার বাপ্পী

সহকারী প্রকৌশলী, দুবাই সিটি পৌরসভা (Dubai Municipality)


শেয়ার করুন