দুই ভিসিসহ পাঁচজনকে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি

সিটিএন ডেস্ক :file

যুদ্ধাপরাধ নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির কারণে’ বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.অনুপম সেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীসহ পাঁচজনকে হত্যার হুমকি দিয়ে একটি উড়ো চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) ডাকযোগে চিঠিটি নগরীর প্রবর্তক মোড়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কার্যালয়ে এসে পৌঁছেছে।

হত্যার হুমকি পাওয়া বাকি তিনজন হলেন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, গণজাগরণ মঞ্চ, চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা.চন্দন দাশ এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত বাঙালি।

জানতে চাইলে ড.অনুপম সেন বাংলানিউজকে বলেন, কে বা কারা একটি চিঠি পাঠিয়েছে। সেখানে আমি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ পাঁচজনের কথা উল্লেখ আছে। আমি বিষয়টি প্রশাসনকে জানাব।

‘দেশে জঙ্গিবাদি একটি শক্তি যখন বিভিন্ন ধরনের নাশকতায় লিপ্ত তখন এই ধরনের হুমকি দিয়ে আতংক সৃষ্টি করা প্রতিক্রিয়াশীল ওই শক্তির পরিকল্পিত কর্মকাণ্ড বলে আমি ধারণা করছি। তবে এসব হুমকিধমকি দিয়ে আমাকে স্তব্ধ করবেন বলে যারা ভাবছেন তারা ভুল ভাবছেন।’ বলেন ড.অনুপম সেন।

চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘আগামী কোরবানী ঈদ আপনাদের জন্য শেষ ঈদ। একাত্তর সালে মিমাংসিত যুদ্ধাপরাধ নিয়ে আপনাদের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির কারণে ঐ দিনই গরুর সাথে আপনাদেরও কোরবানী করা হবে। দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করায় তোমাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত রয়েছে। জীবনের যাবতীয় ইচ্ছা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পূরণ করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া গেলো। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আমাদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে।’

চিঠিতে পাঁচজনকে সম্বোধন করা হয় এভাবে, ‘চট্টগ্রামে ভারতের প্রধান দালাল ড.অনুপম সেন’, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান দালাল ড.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী’, ‘চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের প্রধান আওয়ামী দালাল রিয়াজ হায়দার চৌধুরী’, ‘আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চট্টগ্রামের প্রধান দালাল শওকত বাঙালী’ এবং ‘গজামঞ্চের প্রধান দালাল ডা.চন্দন দাশ’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার মো.ইকবাল বাহার বাংলানিউজকে বলেন, চিঠিটি কারা দিয়েছে, কোত্থেকে এসেছে সেগুলো আমরা তদন্ত করে দেখছি। তবে যে কোন নাগরিকের জীবন শংকার মধ্যে পড়লে তাকে নিরাপত্তা দেয়া পুলিশ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। দুজন উপাচার্যসহ পাঁচজনের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা সতর্ক আছি। এ বিষয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

হুমকির বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এসব উড়োচিঠি আতংক সৃষ্টির জন্য দেয়া হতে পারে। তবে আমি একজন পরিপূর্ণ ধার্মিক মানুষ। আমি আল্লাহ রাসূলে বিশ্বাস করি। আল্লাহ আমার মৃত্যু যেভাবে লিখে রেখেছেন সেভাবেই হবে। আমি কারও হুমকিধমকিতে শংকিত নই।

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের হুমকি আমি অতীতেও পেয়েছি। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি ‍বারবার আমার উপর আঘাতের চেষ্টা করেছে। এসব হুমকিতে আমি ভয় পাইনা। রাজাকার-আলবদর, জামায়াতসহ মৌলবাদি শক্তির বিরুদ্ধে আমি ছাত্রজীবন থেকে সংগ্রাম করছি। আমি লড়াই-সংগ্রামের পথ থেকে একচুলও বিচ্যুত হব না। অতীতের মতো আমি রাজপথে থেকে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যাব।

ডা.চন্দন দাশ বাংলানিউজকে বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের অনেক নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক, মুক্তমনা লেখক মৌলবাদিদের হাতে নির্মমভাবে প্রাণ দিয়েছে। তাই বলে কি গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন থেমে গেছে ? যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনের দাবি থেকে কি বাংলার মানুষ সরে গেছে ? রাজাকার-মৌলবাদিরা যতই আঘাতের চেষ্টা করবে, ততই তাদের বিচারের আন্দোলন জোরদার হবে। বাংলার মানুষ হুমকিতে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়না। ভয় পেলে একাত্তরে বাঙালি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করত না।

শওকত বাঙালি বাংলানিউজকে বলেন, আমি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আদর্শের কর্মী। আমার কাছে হুমকি নতুন কোন বিষয় নয়। অতীতেও আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে জামায়াত-শিবির। আমার জন্য কাফনের কাপড়ও পাঠানো হয়েছিল। আমরা শহীদ জননীর আদর্শের সন্তানেরা এসব হুমকিকে পরোয়া করিনা। যতদিন পর্যন্ত এইদেশে একজন যুদ্ধাপরাধীও বেঁচে থাকবে ততদিন পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।


শেয়ার করুন