দিনশেষে আক্ষেপ মুশফিকের আউট

ইংল্যান্ডকে তিনশোর আগে থামিয়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশের সামনে সুযোগ এসেছে প্রথম ইনিংসে বড় সংগ্রহ গড়ার। পিচে যেভাবে স্পিন টার্ন করছে তাতে চতুর্থ ইনিংসে বড় লক্ষ্য তাড়া করার ঝুঁকি এড়াতে স্কোরবোর্ডে বড় সংগ্রহ জমা করার বিকল্পও নেই স্বাগতিকদের।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে ৫ উইকেটে ২২১ রান করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। তবে দিন শেষে বাংলাদেশের জন্য আক্ষেপ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের আউটটি।

দিনের খেলা শেষ হতে যখন মাত্র ২ দশমিক ৩ ওভার বাকি ঠিক তখনই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।

শনিবার সাকিব আল হাসান এবং শফিউল ইসলাম নতুন করে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করতে মাঠে নামবেন। সাকিব ৩১ এবং শফিউল ০ রানে অপরাজিত আছেন।

এর আগে শুক্রবার সকালে ইংল্যান্ড ২৯৩ রানে গুটিয়ে গেলে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ।

ইমরুল কায়েস এবং তামিম ইকবালের ওপেনিং জুটিতে আসে ২৯ রান। ইমরুল কায়েস মঈন আলীর বলে ২১ রানে আউট হন। এরপর প্রায় ১৪ মাস পর জাতীয় দলের জার্সিতে খেলতে নামা মুমিনুল হক সৌরভ কোনো রান না করেই ওই ওভারেই আউট হন।

এতে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তবে ওপেনার তামিম ইকবাল ও বাংলাদেশের ‘দ্য ওয়াল’ খ্যাত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা। দুইজন মিলে গড়েন ৯০ রানের জুটি। দলকে খেলায় ফেরান তারা।

তবে ৩৮ রান করা রিয়াদকে সাজঘরে ফেরান রশিদ। রিয়াদ ফিরলেও ধৈর্য নিয়ে খেলে দলের জন্য প্রয়োজনীয় রান তোলার পাশাপাশি অর্ধশতকও তুলে নেন তামিম ইকবাল। অধিনায়ক মুশফিকের সঙ্গে গড়েন ৪৪ রানের মূল্যবান জুটি।

তামিমের ব্যাটিং স্টাইল দেখে মনে হচ্ছিল তার ইনিংসটা আরো বড় হবে। কিন্তু ৭৮ রানে ফিরে যান তামিম। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলছিলেন মুশফিক। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৫৮ রানের জুটি গড়েন তিনি। তবে ব্যক্তিগত ৪৮ রানে গিয়ে সতর্কভাবে খেলতে থাকা মুশফিক উইকেটের পেছনে স্টোকসের বলে ক্যাচ দেন। দিনের খেলা শেষ হতে মাত্র আড়াই ওভার বাকি ছিল। ১৫টি বল পার করতে পারলেই শনিবার সকালে আবারো নতুন করে ব্যাট করতে পারতেন মুশফিক।

এরআগে সকালে প্রথম দিনের ৭ উইকেটে ২৫৮ রান নিয়ে খেলতে নেমে দ্বিতীয় দিনের শুরুর ওভারেই উইকেট হারিয়েছে ইংল্যান্ড। ৩৬ রানে অপরাজিত থাকা ক্রিস ওকস আর কোনো রান না করেই তাইজুলের বলে মুমিনুলের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন।

আরেক অপরাজিত আদিল রশিদ অবশ্য স্টুয়ার্ট ব্রডকে নিয়ে সংগ্রহটা তিনশোর দিকেই টেনে নিচ্ছিলেন। ৫ রানে দিন শুরু করা রশিদকে ২৬ রানে থামিয়েছেন সেই তাইজুলই। অবশ্য দর্শনীয় ক্যাচটির জন্য সাব্বির রহমানও এই উইকেটের সিংহভাগ কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন!

পরে স্টুয়ার্ট ব্রডকে (১৩) মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে ইংলিশ ইনিংসের ইতি টানেন প্রথম দিনেই পাঁচ উইকেট তুলে নেওয়া মিরাজ। সব মিলিয়ে ম্যাচে ৬ উইকেট হলো তার। যেটি বাংলাদেশের হয়ে অভিষেকে দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার। ৮০ রানে ৬ উইকেট নেওয়া মিরাজের ওপরে থাকলেন কেবল সোহাগ গাজী। ২০১২ সালের নভেম্বরে মিরপুরের শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র ৭৪ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন গাজী।

মিরাজের বলে নেওয়া ব্রডের ক্যাচটি আবার মুশফিকুর রহিমকেও বসিয়েছে অনন্য এক উচ্চতায়। খালেদ মাসুদ পাইলটকে টপকে বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ডিসমিসাল এখন টাইগারদের সাদা পোশাকের অধিনায়কের।

এতদিন ৮৭ ডিসমিসাল নিয়ে শীর্ষে ছিলেন মাসুদ। চট্টগ্রাম টেস্টে নামার আগে মুশফিকের ছিল ৮৬ ডিসমিসাল। বৃহস্পতিবার মঈন আলির ক্যাচ নিয়ে মাসুদের পাশে নাম লেখানোর পর শুক্রবার তিনি এককভাবে শীর্ষে উঠলেন।

মুশফিকের ৭৬ ইনিংসে ৮৮ ডিসমিসালের মধ্যে আছে ৭৭টি ক্যাচ ও ১১টি স্ট্যাম্পিং। আর মাসুদের ৬১ ইনিংসে ৭৮টি ক্যাচের সঙ্গে আছে ৯টি স্ট্যাম্পিং। ২০০৭ সালে বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফরের দ্বিতীয় টেস্টে মাসুদের বিকল্প হিসেবেই গ্লাভস উঠেছিল মুশফিকের হাতে।

এর আগে প্রথম দিনে মঈন আলি ও জনি বেয়ারস্টোর ফিফটিতে ২৫৮ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড। মঈন ৬৮, বেয়ারস্টো ৫২ ও জো রুটের ৪০ রানে এই সংগ্রহ গড়েছিল সফরকারীরা। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস শেষে মিরাজের দখলে ৬ উইকেট যাওয়া ছাড়া বাকিগুলো ২টি করে ঝুলিতে পুরেছেন সাকিব ও তাইজুল।

চট্টগ্রামের এই টেস্টে তিন জনকে অভিষিক্ত করে একাদশ সাজিয়েছে বাংলাদেশ। অলরাউন্ডার মিরাজ ছাড়াও ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান ও পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বিকে টেস্ট ক্যাপ দিয়েছে স্বাগতিকরা।


শেয়ার করুন