দাজ্জাল! (ভিডিও)

vlcsnap-2015-08-18-02h31m23s59ডেস্ক রিপোর্ট:

নবী করিম (স) দাজ্জালকে স্বপ্নে দেখে তার শারীরিক গঠনের বর্ণনা প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, “দাজ্জাল হবে স্থুলকায় লাল বর্ণের, কোঁকড়ানো চুল, এক চোখ কানা, চোখটি যেন ফোলা আঙ্গুরের মত”। (সহীহ বুখারী, হাদীস সংখ্যা- ৭১২৮) দাজ্জাল নির্বংশ হবে। তার কোন সন্তান থাকবে না। (সহীহ মুসলিম- কিতাবুল ফিতান) দাজ্জালকে চেনার সবচেয়ে বড় আলামত হল তার কপালে কাফির (كافر) লেখা থাকবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস সংখ্যা- ৭১৩১) অপর বর্ণনায় আছে তার কপালে (ك ف ر) এই তিনটি বর্ণ লেখা থাকবে। প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তিই তা পড়তে পারবে। (সহীহ মুসলিম- কিতাবুল ফিতান)

দাজ্জালের বর্তমান অবস্থান
ফাতেমা বিনতে কায়েস (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি মসজিদে গমন করে নবী (স) এর সাথে নামায আদায় করলাম। আমি মহিলাদের কাতারে ছিলাম। তিনি নামায শেষে হাসতে হাসতে মিম্বারে উঠে বসলেন। প্রথমেই তিনি বললেন, ‘প্রত্যেকেই যেন আপন আপন জায়গায় বসে থাকে’। অতঃপর তিনি বললেন, ‘তোমরা কি জান আমি কেন তোমাদেরকে একত্রিত করেছি?’ তাঁরা বললেন, ‘আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন’। অতঃপর তিনি বললেন, ‘আমি তোমাদেরকে এ সংবাদ দেয়ার জন্য একত্রিত করেছি যে তামীমদারী ছিল একজন খ্রিস্টান লোক। সে আমার কাছে আগমন করে ইসলাম গ্রহণ করেছে। অতঃপর সে মিথ্যুক দাজ্জাল সম্পর্কে এমন ঘটনা বলেছে যা আমি তোমাদের কাছে বর্ণনা করতাম। লাখ্ম ও জুযাম গোত্রের ত্রিশ জন লোকের সাথে সে সাগর পথে ভ্রমণে গিয়েছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার শিকার হয়ে এক মাস পর্যন্ত তারা সাগরেই ছিল। অবশেষে তারা সাগরের মাঝখানে একটি দ্বীপে অবতরণ করলো। দ্বীপের ভিতরে প্রবেশ করে তারা মোটা মোটা এবং প্রচুর চুল বিশিষ্ট একটি অদ্ভুত প্রাণীর সন্ধান পেল। চুল দ্বারা সমস্থ শরীর আবৃত থাকার কারণে প্রাণীটির অগ্রপশ্চাৎ নির্ধারণ করতে সক্ষম হল না। তারা বলল, ‘অকল্যাণ হোক তোমার! কে তুমি?’ সে বলল, ‘আমি সংবাদ সংগ্রহকারী গোয়েন্দা’। তারা বলল, ‘কিসের সংবাদ সংগ্রহকারী?’ অতঃপর প্রাণীটি দ্বীপের মধ্যে একটি ঘরের দিকে ইঙ্গিত করে বলল, ‘হে লোক সকল! তোমরা এই ঘরের ভিতরে অবস্থানরত লোকটির কাছে যাও। সে তোমাদের কাছ থেকে সংবাদ সংগ্রহ করার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে’। তামিমদারী বলেন, ‘প্রাণীটি যখন একজন লোকের কথা বলল, তখন আমাদের ভয় হল যে হতে পারে সে একটি শয়তান। তথাপিও আমরা ভীত হয়ে দ্রুত অগ্রসর হয়ে ঘরটির ভিতরে প্রবেশ করলাম। সেখানে প্রবেশ করে আমরা বৃহদাকার একটি মানুষ দেখতে পেলাম। এত বড় আকৃতির মানুষ আমরা ইতিপূর্বে আর কখনও দেখিনি। তার হাত দু’টিকে ঘাড়ের সাথে একত্রিত করে হাঁটু এবং গোড়ালীর মধ্যবর্তী স্থানে লোহার শিকল দ্বারা বেঁধে রাখা হয়েছে’। আমরা বললাম, ‘মরণ হোক তোমার! কে তুমি?’ সে বলল, ‘তোমরা আমার কাছে আসতে সক্ষম হয়েছ। তাই আগে তোমাদের পরিচয় দাও’। আমরা বললাম, ‘আমরা একদল আরব মানুষ নৌকায় আরোহন করলাম। সাগরের প্রচ- ঢেউ আমাদেরকে নিয়ে একমাস পর্যন্ত খেলা করল। অবশেষে তোমার দ্বীপে উঠতে বাধ্য হলাম। দ্বীপে প্রবেশ করেই প্রচুর পশম বিশিষ্ট এমন একটি জন্তুর সাক্ষাৎ পেলাম, প্রচুর পশমের কারণে যার অগ্রপশ্চাৎ চেনা যাচ্ছিলনা’। আমরা বললাম, ‘অকল্যাণ হোক তোমার! কে তুমি?’ সে বলল, ‘আমি সংবাদ সংগ্রহকারী গোয়েন্দা’। আমরা বললাম, ‘কিসের সংবাদ সংগ্রহকারী?’ অতঃপর প্রাণীটি দ্বীপের মধ্যে এই ঘরের দিকে ইঙ্গিত করে বলল, ‘হে লোক সকল! তোমরা এই ঘরের ভিতরে অবস্থানরত লোকটির কাছে যাও। সে তোমাদের নিকট থেকে সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে’। তাই আমরা তার ভয়ে তোমার কাছে দ্রুত আগমন করলাম। হতে পার তুমি একজন শয়তান – এ ভয় থেকেও আমরা নিরাপদ নই’। সে বলল, ‘আমাকে তোমরা ‘বাইসান’ সম্পর্কে সংবাদ দাও’। আমরা তাকে বললাম, ‘বাইসানের কী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছ?’ সে বলল, ‘আমি তথাকার খেজুরের বাগান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছি। সেখানের গাছগুলো এখনও ফল দেয়?’ আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ’। সে বলল, ‘সে দিন বেশি দূরে নয় যে দিন গাছগুলোতে কোন ফল ধরবেনা’। অতঃপর সে বলল, ‘আমাকে বুহাইরাতুৎ তাবারীয়া সম্পর্কে সংবাদ দাও’। আমরা বললাম, ‘বুহাইরাতুৎ তাবারীয়ার কী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছ?’ সে বলল, ‘আমি জানতে চাই, সেখানে কি এখনও পানি আছে?’ আমরা বললাম, ‘তথায় প্রচুর পানি আছে’। সে বলল, ‘অচিরেই তথাকার পানি শেষ হয়ে যাবে’। সে পুনরায় বলল, ‘আমাকে যুগার নামক ঝর্ণা সম্পর্কে সংবাদ দাও’। আমরা তাকে বললাম, ‘সেখানকার কী সম্পর্কে তুমি জানতে চাও?’ সে বলল, ‘আমি জানতে চাই, সেখানে কি এখনও পানি আছে? লোকেরা কি এখনও সে পানি দিয়ে চাষাবাদ করছে?’ আমরা বললাম, ‘তথায় প্রচুর পানি রয়েছে। লোকেরা সে পানি দিয়ে চাষাবাদ করছে’। সে আবার বলল, ‘আমাকে উম্মীদের নবী সম্পর্কে জানাও’। আমরা বললাম, ‘সে মক্কায় আগমন করে বর্তমানে মদীনায় হিজরত করেছে’। সে বলল, ‘আরবরা কি তার সাথে যুদ্ধ করেছে?’ বললাম, ‘হ্যাঁ’। সে বলল, ‘ফলাফল কি হয়েছে?’ আমরা তাকে সংবাদ দিলাম যে, পার্শ্ববর্তী আরবদের উপর তিনি জয়লাভ করেছেন। ফলে তারা তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছে’। সে বলল, ‘তাই নাকি?’ আমরা বললাম, ‘তাই’। সে বলল, ‘তার আনুগত্য করাই তাদের জন্য ভাল। এখন আমার কথা শুন। আমি হলাম দাজ্জাল। অচিরেই আমাকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি বের হয়ে চল্লিশ দিনের ভিতরে পৃথিবীর সমস্ত দেশ ভ্রমণ করব। তবে মক্কা-মদীনায় প্রবেশ করা আমার জন্য নিষিদ্ধ থাকবে। যখনই আমি মক্কা বা মদীনায় প্রবেশ করতে চাইব, তখনই ফেরেশতাগণ কোষমুক্ত তলোয়ার হাতে নিয়ে আমাকে তাড়া করবে। মক্কা-মদীনার প্রতিটি প্রবেশ পথে ফেরেশতাগণ পাহাড়া দিবে’। হাদীসের বর্ণনাকারী ফাতেমা বিনতে কায়েস বলেন, ‘নবী (স) হাতের লাঠি দিয়ে মিম্বারে আঘাত করতে করতে বললেন, ‘এটাই মদীনা, এটাই মদীনা, এটাই মদীনা’। অর্থাৎ এখানে দাজ্জাল আসতে পারবে না। অতঃপর নবী (স) মানুষকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘তামীমদারীর হাদীসটি আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে। তার বর্ণনা আমার বর্ণনার অনুরূপ হয়েছে। বিশেষ করে মক্কা ও মদীনা সম্পর্কে। শুনে রাখ! সে আছে সাম দেশের সাগরে (ভূমধ্যসাগরে) অথবা আরব সাগরে। তা নয় সে আছে পূর্ব দিকে। সে আছে পূর্ব দিকে। সে আছে পূর্ব দিকে’। এই বলে তিনি পূর্ব দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন’। ফাতেমা বিনতে কায়েস বলেন, ‘আমি এই হাদীসটি নবী (স) এর নিকট থেকে মুখস্থ করে রেখেছি’। (সহীহ মুসলিম – কিতাবুল ফিতান)


শেয়ার করুন