দপ্তর হারালেন সৈয়দ আশরাফ

sayad-ashraf-সৈয়দ-আশরাফ-e1411975575479বাংলামেইল:

অবশেষে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে। তিনি এখন দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

আর সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। একই সঙ্গে তিনি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব পালন করবেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ সরকারের রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬ এর রুল ৩ (৪)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালায়ের মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলমাকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনটিতে এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।

যদিও গত মঙ্গলবার দপ্তর থেকে সরিয়ে দেয়ার খবরকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পরে তিনি বলেছিলেন, ‘পুরোটাই গুজব। গুজবে কান না দেয়াই ভালো।’

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের গত শাসনামলে রেল মন্ত্রণালয়ের আলোচিত ‘কালো বিড়াল’ কেলেঙ্কারির জেরে দপ্তর হারিয়েছিলেন বর্ষিয়ান সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তাকে অব্যাহতি দেয়ার পর রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় ওবায়দুল কাদের এবং পরবর্তীতে মুজিবুল হককে। ফলে ওই মেয়াদের বাকি সময় দপ্তরবিহীন মন্ত্রী ছিলেন সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত।

এছাড়া আওয়ামী লীগের বর্তমান আমলে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। তাকে দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিগত পাঁচ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। অথচ ওই নির্বাচন না দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের একটি অংশ এই নির্বাচন দেয়ার পক্ষে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিল। সঙ্গে ছিলেন তৎকালীন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম সহিদ খান। তখন থেকেই দলের ওই অংশটি সৈয়দ আশরাফের বিপক্ষে চলে যায়।

আবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে নগ্নভাবে ভোট কেটে দলীয় প্রার্থীকে জয়লাভ করোনোর বিপক্ষে ছিলেন সৈয়দ আশরাফ। এখানেও তিনি দলের অপছন্দের তালিকায় পড়েন। এরপর থেকে অনেকটা অন্তরালেই চলে যান।

এছাড়া মন্ত্রিসভার রদবদল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৈয়দ আশরাফের মতবিরোধ দেখা দেয়। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সৈয়দ আশরাফ অনুরোধও করেন তাকে স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে।

সর্বশেষ এর প্রতিফলন ঘটে গত মঙ্গলবার একনেকের বৈঠকে। ওই বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগের ৬ হাজার ৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু সেখানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম উপস্থিত না থাকায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয় জটিলতা। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর ক্ষুব্ধ হন।

এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনি (সৈয়দ আশরাফ) যেহেতু মিটিং-টিটিংয়ে আসেন না, সেহেতু ওনাকে সরিয়ে দিলে ভালো হয়।’ এরপর তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে এ জন্য পদক্ষেপ নিতে বলেন।


শেয়ার করুন