স্মারকলিপি গ্রহণকালে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন

দক্ষিণ রুমালিরছরা-সমিতিবাজার-বাইপাস সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ দ্রুত সমাপ্ত করার নির্দেশ

Memo to DC (1)বার্তা পরিবেশক :

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেছেন, পৌর এলাকার অবহেলিত দক্ষিণ রুমালিরছরা, সমিতিবাজার, পল্লাইন্যাকাটাসহ সংলগ্ন এলাকার জনগণের স্বার্থে সম্ভব সবকিছু করা হবে। বিশেষ করে দুর্গম বন-জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ি এলাকার সন্ত্রাসীদের উচ্ছেদের মাধ্যমে আইন-শৃঙখলা নিয়ন্ত্রনে সরকারের সকল বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তিনি অচিরেই দক্ষিণ রুমালিরছরা-সমিতিবাজার-বাইপাস সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করার জন্য কক্সবাজার পৌর মেয়রকে নির্দেশ দেন। সড়ক নির্মাণ কাজে কোনো মহলের বাঁধা এলে তাঁকে অবহিত করার জন্যও পৌরকর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
৬ অক্টোবর ২০১৫ মঙ্গলবার সকালে শহরের সমিতি বাজার, দক্ষিণ রুমালিরছড়া, এবিসিঘোনা, পিটিস্কুল এলাকা, সোবহানিয়াপাড়া, পল্লানকাটা, আমতলী, টেকনাইপ্যাপাড়া, মোজাহেরমিয়ার ঘোনা, মিয়া হোছন ঘোনা, মাইট্যাতলী, সবুর সওদাগরের ঘোনার ভোক্তভুগি লোকজন মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।
দৈনিক আপনকণ্ঠ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন সিকদারের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসকের চেম্বারে এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমিতিবাজার জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটি সভাপতি হাজী হাসন আলী, পল্লানকাটা জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুরুল আজিম, রশিদ আহমদ ও সমাজের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপি গ্রহণ করে জেলা প্রশাসক মোবাইল যোগে কক্সবাজারের পৌরসভার মেয়ার সরওয়ার কামালকে এসব নির্দেশ দেন। এসময় তিনি সড়ক নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের তালিকা প্রণয়ন করে তাকে প্রদানের জন্য নির্দেশ দেন।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য মিসেস খোরশেদ আরা হক জেলা প্রশাসককে উক্ত সড়কটি নির্মাণে সকল প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানের জন্য অনুরোধ করেন।
এর আগে সমিতি বাজার, দক্ষিণ রুমালিরছড়া, এবিসিঘোনা, পিটিস্কুল এলাকা, সোবহানিয়াপাড়া, পল্লানকাটা, আমতলী, টেকনাইপ্যাপাড়া, মোজাহেরমিয়ার ঘোনা, মিয়া হোছন ঘোনা, মাইট্যাতলী, সবুর সওদাগরের ঘোনার ভোক্তভুগি শতাধিক লোকজন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে উক্ত সড়কের নির্মাণ কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবী জানিয়ে বক্তব্য পেশ করেন, দৈনিক আপনকণ্ঠ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পদিক রুহুল আমিন সিকদার, কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মনজুরুল হাসান, সমিতিবাজার জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাজী হাসন আলী ও দক্ষিণ পল্লানকাটা জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুরুল আজিম।
মাবনবন্ধনে বক্তাগণ বলেন, দক্ষিণ রুমালিরছরা-সমিতিবাজার-বাইপাস সংযোগ সড়কটি প্রায় ২৫ হাজার মানুষের যাতায়তের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার অংশের জন্য উপরোক্ত এলাকাসমূহের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এমনকি সড়কের উক্ত কাঁচা অংশের জন্য সমগ্র এলাকাবাসী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
বক্তাগণ বলেন, সড়কের দক্ষিণ অংশ তথা বাইপাস থেকে সমিতি বাজার পর্যন্ত প্রায় এককিলোমিটার অংশ ঝিলওয়াঞ্জা ইউনিয়নের আওতাধীন ছিলো (বর্তমানে পৌর এলাকাভুক্ত)। দক্ষিণ রুমালিরছরা (পিটিস্কুল পয়েন্ট) থেকে সমিতি বাজার পর্যন্ত প্রায় দেড়কিলোমিটার কক্সবাজার পৌরসভাধীন অংশটি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ পূর্বেই পাকা করে। কিন্তু বাইপাস থেকে সমিতি বাজার পর্যন্ত অংশটি ঝিলওয়াঞ্জা ইউনিয়নের আওতাধীন হওয়ায় তা কাঁচা ও কিছু অংশ দুর্গম। যেখানে পুলিশ বা র‌্যাবসহ আইনশৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিতবাহিনি এখনো প্রবেশ করতে পারে না। যার ফলে শহরের নতুন জেলখানার পেছনের টিলা, পাহাড় ও জঙ্গলাবৃত এলাকাটি সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এমনকি সন্ত্রাসীরা উত্তরণ গৃহায়ণ সমিতির উত্তর পাশের নিরাপদ স্থানকে খুন-খারাবিসহ আসামাজিক কর্মকাণ্ডের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে বেছে নিয়েছে। সন্ত্রাসী ও ভাড়াটে খুনিরা অন্যত্র খুন করে উত্তরণ গৃহায়ণ ও সংলগ্নস্থানে ফেলে যায়। কক্সবাজার সদর থানা পুলিশ বিগত এক বছরে উক্ত স্থান থেকে একাধিক লাশ উদ্ধার করেছে। বিগত এক সপ্তাহ পূর্বেও কক্সবাজার পুলিশ উত্তরণ পাহাড় থেকে লাশ উদ্ধার করেছে। পুলিশ উক্ত কাঁচা সড়কে যাতায়ত করতে না পারায় ও সড়কটি দুর্গম হওয়ায় ছিনতাইকারীরা প্রকাশ্য দিবালোকে সড়কে চলাচলকারী লোকজনের কাছ থেকে মোবাইল, নগদটাকাসহ মূল্যবান মালামাল ছিনিয়ে নিচ্ছে।
বক্তাগণ আরো বলেন, স্থানীয় জনগণ হেটে চলাচলের সুবিধার্থে সড়কের সমিতি বাজার থেকে বাইপাস পর্যন্ত দুর্গম অংশটি স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কারের মাধ্যমে যাতায়তের ব্যবস্থা করেন। এসময় ঝিলওয়াঞ্জা ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ জনগণের স্বেচ্ছাশ্রমের সাথে একাত্ব হয়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর আওতায় সড়কটি জনসাধারণের চলাচলের ব্যবস্থার অংশ হিসেবে গম বরাদ্ধ করে। আর সে সময় ঝিলওয়াঞ্জা ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও বর্তমানের কক্সবাজার শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি জনাব মুজিবুর রহমান কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর কাজের উদ্বোধন করেন। স্থানীয় জনসাধারণ ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর আওতায় উক্ত সড়কটি জনসাধারণের চলাচলের উপযোগী করা হলে স্থানীয় কিছু সমাজ বিরোধী লোকজন তাদের অসৎ কাজ বন্ধ হয়ে যাবে একথা ভেবে আতঙ্কিত হয়ে এলাকার কিছু প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় সড়কটির নির্মাণ কাজে বার বার বাঁধা সৃষ্টি করছে।
বক্তাগণ আরো বলেন, ২০০৫ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সড়কটিকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পাকা করার জন্য তালিকাভুক্ত করে। পরবর্তীতে কক্সবাজার পৌরসভা সড়কটি পাকা করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করে এবং দরপত্র আহবান করে ও কার্যাদেশ প্রদান করে। কিন্তু কুচক্রিমহলের বাঁধার কারনে সড়কটির নির্মাণ বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ সড়কটি পাকা করণের প্রাথমিক পর্যায়ে এইচবিবি দিয়ে নির্মাণ করতে ২০১৪-২০১৫ অর্থ সালে দরপত্র আহবান করে ও নিযুক্ত ঠিকাদারকে কার্যাদেশ প্রদান করে। ঠিকাদার কার্যাদেশ পাওয়ার পর গত জুন মাসের শুরুতেই সড়কে এইচবিবি দিয়ে উন্নত করার কাজ শুরু করেন। সড়কে ইট বিছাবার জন্য সাইডে ইটও নেওয়া হয়। কিন্তু বিগত ২৩ জুন থেকে ৩০ জুন, ১৮ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই এবং সর্বশেষ ১লা সেপ্টেম্বর তিন দফায় ভয়াবহ বৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্ন অংশে রেইনকাটের সৃষ্টি হয়, সড়কের উপর ভেঙ্গে পড়ে সংলগ্ন পাহাড়। ফলে নিযুক্ত ঠিকাদার বিগত ৩ সেপ্টেম্বর বৃষ্টি থেমে গেলে পাহাড় ভেঙ্গে ঝরে পড়ে মাটি সরাতে গেলে উত্তরণ গৃহায়ণ সমিতি কর্তৃপক্ষসহ কিছু কুচক্রি মহল বাঁধা প্রদান করে। এতে সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।


শেয়ার করুন