থমকে গেছে ৮’হাজার রোহিঙ্গা বসতির উচ্ছেদ কার্যক্রম

ukiyaশফিক আজাদ,উখিয়া:
উখিয়া-টেকনাফে অবৈধ ভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সরকারী বনভূমি দখল করে বছরের পর বছর অবস্থান করতে থাকায় দেশের জন্য এটি একটি বিষফোঁড়া হয়ে দাঁিড়য়েছে। তাই অবশেষে এসব রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরী করে উখিয়া-টেকনাফের ৮০৭৬ পরিবার সহ জেলার ১০হাজার ৬৪৬ পরিবারকে উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছিল কক্সবাজার বনবিভাগ। কিন্তু তালিকা প্রণয়নের ১০ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও অদৃশ্য কারনে থমকে আছে এ উচ্ছেদ কার্যক্রম। এতে স্থানীয় বসবাসকারী লোকজনের মাঝে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। যেহেতু সাড়ে তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে জিইয়ে রয়েছে রোহিঙ্গা সমস্যা।
জানা গেছে, সর্ব প্রথম ১৯৪২ সালে জাপান-ব্রিটিশ যুদ্ধের সময় জাপানী সৈন্যদের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজারে চলে আসে। ১৯৬৫ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে তৎকালীন পাকিস্তান আমলে মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় জাতিগত দাঙ্গার কারণে মুসলমানদের রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন সীমান্ত অতিক্রম করে এ দেশে চলে আসা শুরু করে। এর পর দেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী সময়ে ১৯৭৮ সালে এবং ১৯৯১ সালে সীমান্ত পেরিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ব্যাপকহারে রোহিঙ্গার আগমন ঘটে, যা এখনও বিক্ষিপ্তভাবে অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে শত শত একর খাস ও বনভূমি দখল করে রোহিঙ্গা অবৈধভাবে বসবাস করে যাচ্ছে। আর এই সুযোগে রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ মাদক বিশেষ করে ইয়াবা, মানবপাচার, মহাসড়কে চুরি-ডাকাতিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হবে পড়েছে। এলাকার অনেকে বিশেষ করে চোরাচালানের সাথে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছাত্রছায়ায় ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দলীয় স্বার্থ হাসিলের কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। তবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা দক্ষিণ বন বিভাগের অধিনে উখিয়া-টেকনাফের দু’রেঞ্জের অধীনে ৮০৭৬টি রোহিঙ্গা পরিবার সহ কক্সবাজার রেঞ্জ, শিলখালী রেঞ্জ, ধোয়াপালং রেঞ্জ, পানেরছড়া রেঞ্জের ১০ হাজার ৬৪৬ টি অবৈধ রোহিঙ্গা পরিবারকে উচ্ছেদ করতে উদ্যোগ গ্রহন করেন জেলার দক্ষিণ বন বিভাগ। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অবৈধভাবে জবরদখলকারী/বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য গত ৩ মার্চ একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে জেলা প্রশাসকের কাছে। কিন্তু এরপর থেকে কেন কার্যক্রম থমকে আছে তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রশ্নের ঘুরপাক খাচ্ছে।
বিশেষ উখিয়া রেঞ্জের থাইংখালী বনবিট, উখিয়া সদর বনবিট,ওয়ালা বনবিট,দুছড়ি বনবিট, মুছারখোলা ও তেলখোলা বনবিটসহ ইনানী রেঞ্জের ইনানী বনবিটের আওতাধীন যে সমস্ত বনভূমি রয়েছে এসব বনবিটের বিট কর্মকর্তারা বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের কারনে তা বর্তমানে সম্পূর্ণ বেহাত হয়ে গেছে। বর্তমানে এসব বিটের বনভূমি বিট কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি শতক ৫হাজার টাকা করে।
এ বিষয়ে দক্ষিণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আলী কবির বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরাট একটি অংশ আমাদের পাহাড়ী ও বনাঞ্চল দখল করে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এদেরকে উচ্ছেদ করা আমাদের একটি চলমান প্রক্রিয়া আর এরই অংশ হিসেবে আমরা আবারো রোহিঙ্গা উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জেলা প্রাসনের সহযোগীতা পেলেই খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন রেঞ্জে অবৈধভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গা পরিবারকে উচ্ছেদের কাজ শুরু করবো। এভাবে পর্যায়ক্রমে বন বিভাগের জায়গাতে জবরদখলকারী সকল রোহিঙ্গাদের আমরা উচ্ছেদ করবো। তবে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট না পাওয়ার কারনে উচ্ছেদ কার্যক্রমটি পিছিয়েছে।


শেয়ার করুন