তিন রাজাকারের ফাঁসি, বাকিদের আমৃত্যু কারাদণ্ড

জামালপুরের আট ‘রাজাকারের’ মধ্যে তিন জনকে মৃত্যদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন-জামালপুর জেলা জামায়াতের সাবেক আমির অ্যাডভোকেট শামসুল আলম ওরফে বদর ভাই ও সাবেক জামায়াত নেতা এস এম ইউসুফ আলী, অধ্যাপক শরীফ আহমেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মো. হারুন ও মোহাম্মদ আবুল হাসেম। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা সবাই পলাতক।

ইসলামী ব্যাংকের সাবেক পরিচালকসহ বাকি পাঁচ জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই রায় ঘোষণা করেন।বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী।আমৃত্যুকারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- ইসলামী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক শরীফ আহাম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন, হারুন, মো. আবুল হাশেম, অ্যাডভোকেট মো. শামসুল হক ওরফে ‘বদর ভাই’ এবং এস এম ইউসুফ আলী।

রায়ে বলা হয়েছে, আসামিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা পাঁচ অভিযোগের মধ্যে তিনটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

এর মধ্যে প্রমাণিত ২ নম্বর অভিযোগে আসামি মো. আশরাফ হোসেন, মো. আব্দুল মান্নান, মো. আব্দুল বারীকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট ও মরদেহ গুমের পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এসব অভিযোগের মধ্যে ছিল তিনটিই প্রমাণিত হওয়ায় এসব সাজা দেন ট্রাইব্যুনাল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজ বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ২৮৯ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ পড়া শুরু করেন এবং বেলা সাড়ে ১১টার পর রায় পাঠ শেষ হয়। রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির করা হয় অ্যাডভোকেট মো. শামসুল হক ওরফে ‘বদর ভাই’ এবং এস এম ইউসুফ আলীকে।বাকিরা পলাতক।

গতকাল রবিবার রায় ঘোষণার জন্য আদালত এদিন ঠিক করে দেন বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন।

তিনি জানান, বিচার কার্যক্রম শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন আদালত। মামলাটি কার্যতালিকায় এলে বিচারক রায় ঘোষণার জন্য সোমবার দিন ঠিক করে দেন।

এর আগে প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ১৯ জুন আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখে।

আট আসামি হলেন- ইসলামী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক শরীফ আহাম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মো. আশরাফ হোসেন, মো. আব্দুল মান্নান, মো. আব্দুল বারী, হারুন, মো. আবুল হাশেম, অ্যাডভোকেট মো. শামসুল হক ওরফে ‘বদর ভাই’ এবং এস এম ইউসুফ আলী।এদের মধ্যে শামসুল হক ও ইউসুফ আলী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ দুইজনকে রবিবার কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতায় হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট ও গুমের মতো পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে এই আট আসামির বিরুদ্ধে। গত বছর ২৬ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই আটজনের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল।

আট আসামির বিরুদ্ধে পাঁচ অভিযোগ

প্রথম অভিযোগ: এতে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আসামি ইউসুফ আলী ও শামসুল হক তৎকালীন জামালপুর মহকুমায় ১০ হাজার লোককে হত্যা এবং ৭৫ হাজার ঘর-বাড়ি ধ্বংস করেন।

দ্বিতীয় অভিযোগ: এতে বলা হয়েছে আসামি আশরাফ হোসেন, শরীফ আহমেদ, আব্দুল মান্নান, মো. হারুন ও আব্দুল বারি ১৯৭১ সালের ৭ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই এবং ২২ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত জামালপুরের সরিষাবাড়ী থানার মইষ ভাদুরীয়া ও ধূপদহ গ্রামের শহীদ আব্দুল হামিদ মোক্তারের বাড়ি, মো. সাইদুর রহমান ভূঁইয়ার বাড়ি, আমির আলী খানের বাড়ি, পিটিআই হোস্টেলের টর্চার ক্যাম্প, জামালপুর শ্মশানঘাটে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন।

তৃতীয় অভিযোগ: এতে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ১০ জুলাই রাত ৩টার দিকে আসামি শরীফ আহমেদ, আশরাফ হোসেন, আব্দুল মান্নান, আব্দুল বারি, আবুল হাসেম, শামসুল হক ও ইউসুফ আলী জামালপুরের সিঅ্যান্ডবি রোডের দয়াময়ী লেনের মল্লিক ভিলা থেকে শহীদ নুরুল আমীনকে অপহরণের পর ওই দিনই তাকে হত্যা করেন।

চতুর্থ অভিযোগ: এতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর আসামি আশরাফ হোসেন, শরীফ আহমেদ, আব্দুল মান্নান ও আব্দুল বারি জামালপুরের আশেক মাহমুদ ডিগ্রি কলেজের নির্যাতন কেন্দ্রে আইয়ৃব আলী ফকিরকে আটকে রেখে নির্যাতন করে হত্যা করেন।

পঞ্চম অভিযোগ: এতে বলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে জামালপুরের পিটিআই নির্যাতন কেন্দ্রে শহীদ আব্দুল হামিদ মোক্তার, সাইদুর রহমান ওরফে সাদু চেয়ারম্যান, শহীদ আব্দুল হামিদ খান ও স ম রেজাউল করিমকে আটক রেখে নির্যাতন করে হত্যা করেন আসামি শরীফ আহমেদ, আশরাফ হোসেন, আব্দুল মান্নান, আব্দুল বারি, আবুল হাসেম, শামসুল হক ও ইউসুফ আলী।


শেয়ার করুন