তিন মাসের আন্দোলন ফল শূন্য?

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন, বিনা বাধায় নিজের বাসভবনে ফিরে যাওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছুটা স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে সরকারের আচরণকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে বিএনপি।

তবে টানা তিন মাসের আন্দোলন, পরোয়ানা মাথায় নিয়ে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে অবস্থান শেষে বাসায় ফিরে যাওয়ার পর এমন প্রশ্নও আসছে, তিন মাসের এ আন্দোলনে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের অর্জন কী? আন্দোলনের অর্জন নিয়ে বিএনপির মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। কারও মতে আংশিক সফলতা থাকলে কেউ মনে করেন, আন্দোলনের অর্জন শূন্য।

তিন মাসের আন্দোলনে সরকারকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলতে পারলেও নিজেদের প্রধান দাবি, নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচন বা এ লক্ষ্যে সংলাপের কোনো আশ্বাস সরকারের কাছ থেকে আদায় করতে পারেনি বিএনপি। বরং এ সময়ে তিন সিটি নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ এবং খালেদা জিয়ার বাসায় ফিরে যাওয়া নতুন বার্তা দিয়েছে। খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে অবস্থানকে আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছিল। ইতিপূর্বে বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছিল, আন্দোলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে থাকতে চান। আর এ কারণে তিনি একুশে ফেব্রুয়ারি বা ২৬শে মার্চ শ্রদ্ধা জানাতেও যাননি।
গত ৩ জানুয়ারি থেকে টানা ৯২ দিন গুলশানে নিজের কার্যালয়ে অবস্থানের পর আজ রোববার নিজের বাসভবনে ফিরে গেছেন খালেদা জিয়া। একতরফা জাতীয় নির্বাচনের এক বছরের মাথায় গত ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। পুলিশের বাধায় সে কর্মসূচিতে যেতে না পেরে ৬ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধের ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের ডাকে টানা অবরোধের তিন মাস পূর্ণ হয়েছে আজ। দেশে টানা এত দিন ধরে এ ধরনের কর্মসূচি পালনের আর কোনো নজির নেই। এখনো অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হয়েছে। অবশ্য গত প্রায় এক মাস দেশে অবরোধের কার্যকারিতা নেই বললেই চলে।
অবরোধ-চলবেই-খালেদা-জিয়া

তিন মাসের আন্দোলনের মূল্যায়ন জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এটি খুব জটিল। বিএনপির সামনে কোনো পথ খোলা ছিল না বলেই আন্দোলনে গেছে। আন্দোলন এখনো চলছে। আন্দোলন পুরোপুরি সফল না হলেও এখন পর্যন্ত কোনো অর্জন যে হয়নি তা নয়। বিএনপি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জানান দিতে পেরেছে যে, দেশে একটি সংকট চলছে। আন্দোলনে নাশকতার বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে শুরু থেকেই বলা হয়েছে, জ্বালাও-পোড়াও-এর সঙ্গে বিএনপি জড়িত নয়। কোনো অপশক্তি এর সঙ্গে জড়িত।
অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির আন্দোলনের ফল এখন পর্যন্ত শূন্য। তিনি মনে করেন, বিএনপির সঙ্গে ব্যাপক জনসমর্থন থাকলেও দল গণ-আন্দোলন তৈরি করতে পারছে না। আর এটাও দলের অনেক নেতা বুঝতে চাচ্ছেন না যে, জনসমর্থন আর গণ-আন্দোলন এক না। যার ফলে আন্দোলনের কৌশল সঠিক হচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন। বর্ষীয়ান ওই নেতা বলেন, ঢাকায় আন্দোলন না হলে সারা দেশে কী হলো না হলো তার তেমন কোনো প্রভাব পড়ে না। এ তিন মাসের আন্দোলন রাজনীতির একটি বড় ‘শিক্ষা’ হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার কার্যালয় থেকে বাসায় ফিরে যাওয়া, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ-এসবের ফলে মানুষ মনে করছে বিএনপির আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে। এক ধরনের স্বস্তিও পাচ্ছে মানুষ।
বর্তমানে খালেদা জিয়ার আদালতে হাজির হওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করা-এ বিষয়গুলোকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বিএনপি। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি ছিল, তাতে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে। জানি না এ স্বস্তি কতদিন থাকবে। তবে আজ যা হয়েছে তা ইতিবাচক।
বিএনপির সূত্র জানায়, তারা সরকারের আচরণ পর্যবেক্ষণ করছে। দলটি ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছে। হার-জিত যাই হোক বিএনপি এ নির্বাচনে লাভবান হবে। টানা আন্দোলনে দলের নেতা-কর্মীরা ক্লান্ত। নেতা-কর্মীদের বেশির ভাগই আছেন আত্মগোপনে। আন্দোলন কার্যকারিতা হারিয়েছে। এ অবস্থায় হুট করে আন্দোলন থেকে পিছু হটাও হবে বড় রাজনৈতিক পরাজয়। এ অবস্থায় বিএনপি মনে করছে, সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতা-কর্মীরা আবার সংগঠিত হতে পারবেন। এর মাধ্যমে পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলেও চলে আসতে পারে। আপাতত আন্দোলন থেকে বের হওয়ার একটি পথ হিসেবে সিটি নির্বাচনকে দেখছেন নেতাদের কেউ কেউ। তাঁদের কেউ কেউ মনে করেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিএনপির আন্দোলনে ভিন্নমাত্রা যোগ করবে।


শেয়ার করুন