তিন ধারায় বিভক্ত বিসিবি

indexসিটিএন ডেস্ক :

ঘটনাবহুল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) মসনদে আসীন হয়েছিল নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বাধীন ক্রীড়া সংগঠকরা। আর তাতে বিসিবির প্রথম নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন পাপন। বাংলাদেশের ক্রিকেট পরিচালনায় পাপন অ্যান্ড কোং শনিবার দুই বছর পূর্ণ করেছে।

এই দুই বছরে মাঠের ক্রিকেটে ব্যর্থতার ধাক্কা সামলে উঠলেও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে পেশাদারত্বের অভাব মোচন করতে পারেনি বিসিবি। এমনও বলা হচ্ছে, বিসিবির পরিচালকরা এখন তিন ধারায় বিভক্ত।

দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম বছরটা বেশ চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে কাটে বিসিবির। মাঠ ও মাঠের বাইরের নানা ইস্যু মিলে অনেক হ্যাপা সামলাতে হয়েছে তাদের।

মাঠের ক্রিকেটে ২০১৪ সাল জুড়ে ছিল ব্যর্থতার মিছিল। তবে বছরের শেষ দিকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজে শতভাগ সাফল্য দিয়ে খরা কাটতে থাকে টাইগারদের। এরই মধ্যে বিপিএলের ফিক্সিং-কাণ্ড সমাধানে সতর্ক পদক্ষেপ ফেলতে হয়েছে বিসিবিকে।

এই সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসানকে দুবার শাস্তি দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বোর্ডকে। এ সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে দেশজুড়ে বেশ আলোচনা দেখা গেছে। তবে জাতীয় দলের শৃঙ্খলার স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়ার কথা বলেছে বিসিবি।

আইসিসির গঠনতন্ত্র সংশোধনে তিন মোড়লের (ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া) আধিপত্য বিষয়ে শুরুতে অস্পষ্ট অবস্থান নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল বোর্ডকে। যদিও এ ইস্যুতে শেষ পর্যন্ত নিজেদের কৌশলী অবস্থানের কারণে বিসিবি কিছুটা সফলতার মুখই দেখে।

তবে ওয়ানডেতে মুশফিককে সরিয়ে মাশরাফিকে অধিনায়ক করা বিসিবির বর্তমান কমিটির সবচেয়ে বড় ইতিবাচক সিদ্ধান্ত ছিল বলে মনে করে ক্রিকেটবোদ্ধা ও ক্রিকেটামোদীরা। বিশ্বকাপে মাশরাফির নেতৃত্বে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। সেই আত্মবিশ্বাসের পালে চড়ে ঘরের মাঠে চলতি বছর পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারায় টাইগাররা। ওয়ানডে র্যা ঙ্কিংয়ে উন্নতির পাশাপাশি ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ।

মাঠকেন্দ্রিক সাফল্য অবশ্য ভুলিয়ে দিতে পারছে না বিসিবির প্রশাসনিক দিকের ঘাটতিকে। বিসিবির এক সাবেক পরিচালক তো এই বোর্ডকে অন্তঃসারশূন্য বলেই অবিহিত করেছেন। তার মতে, মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ নিয়ন্ত্রণ করছেন বিসিবি। এ ছাড়া বোর্ডের বেশির ভাগ পরিচালক নিষ্ক্রিয় বলে দাবি করেন তিনি। তার মতে, বিসিবি এখন তিন ধারায় বিভক্ত।

সাবেক এই পরিচালক বলেন, “এখন বিসিবি চলছে কতিপয় ব্যক্তির ইচ্ছায়। ফলে পরিচালকরাও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। একটি পক্ষ বিসিবির সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। আরেক পক্ষ কাজ করতে চাইলেও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার কেউ কেউ পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। সভাপতির ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবিধা নিয়ে অনেকেই প্রভাব খাটাচ্ছেন, যা পরিচালকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে। একটি পরিচালকের পদ তো শূন্যই রয়ে গেল। দুই বছরেও তা পূরণ করতে পারেনি বিসিবি।”

বিসিবি নির্বাচনের এক বছর পর হয়েছিল এর সহসভাপতি নির্বাচন। পরিচালকদের অনেকের অভিযোগ, বিসিবির অনেক অভিজ্ঞ পরিচালক এখন কার্যত কাজশূন্য। বোর্ড সভা করার ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না গঠনতন্ত্র। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি মাসে একবার বোর্ড সভা হওয়ার কথা। কিন্তু ২৪ মাসে বিসিবির পরিচালকদের সভা হয়েছে ১২টি। শেষ দুটি সভার মাঝে আবার ছয় মাস বিরতি রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত জানুয়ারিতে এনায়েত হোসেন সিরাজকে চেয়ারম্যান করে গঠন করা হয় ওয়ার্কিং কমিটি। কিন্তু গত ৯ মাসে এই কমিটির কোনো সভা হয়নি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গঠনের কোনো উদ্যোগই দেখা যায়নি এই দুই বছরে। ক্রিকেটার, কোচ, আম্পায়ার্সদের জন্য ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট গঠনের পরিকল্পনা পড়ে আছে হিমাগারে।

বিসিবির প্রথম নির্বাচিত সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন নির্বাচনের পরই বলেছিলেন, তিনি বিসিবিতে পেশাদারি, স্বচ্ছতা আনবেন। কিন্তু নিজেদের চার বছর মেয়াদের অর্ধেক সময় পার হলেও পাপনের নেতৃত্বাধীন বোর্ডে পেশাদারি ও স্বচ্ছতার অভাবটাই এখন বেশি দেখা যাচ্ছে। সভাপতি পাপনের সিদ্ধান্তনির্ভর হয়ে পড়েছে বিসিবি। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো থাকলেও দল গঠনসহ সব বিষয়েই তাকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। যেকোনো বিষয়েই বোর্ডের মুখপাত্র হয়ে কথা বলছেন তিনি, যা অনেক সময় দৃষ্টিকটু ঠেকে।

বিসিবি শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনেকের মতে, চাটুকারদের বলয়ের কারণেই হয়তো সেসব দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না বিসিবি-প্রধান পাপনের।


শেয়ার করুন