সেলিম চৌধুরী বাদ 

তারেকই হলেন কালারমারছড়ার নৌকার মাঝি

3618_944431705639999_1889331973774114935_n (1)শাহেদ ইমরান মিজান :
ঘোষিত প্রার্থীকে বাতিল করে অবশেষে বহুল আলোচিত কালারমারছড়া ইউনিয়নে তারেক শরীফকেই নৌকার মাঝির দায়িত্ব অর্পণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাত ৯টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগের পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থী মনোনয়ন সংক্রান্ত কমিটি এই ঘোষণা দেন। এই সংক্রান্ত পরিপত্রও জারি করেছে।
জানা গেছে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের মহেশখালী, টেকনাফ ও কুতুবদিয়ার ১৯ ইউনিয়নের প্রার্থী ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। ঘোষণা মতে মহেশখালী উপজেলার কামারমারছড়া ইউনিয়নে সাবেক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক সেলিম চৌধুরী আওয়ামী লীগে প্রার্থী মনোনিত হন। এ ঘোষণার পর উত্তাল হয়ে পড়ে কালারমারছড়ার সাধারণ ভোটাররা। একই সাথে চরম ক্ষুব্ধ হন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এর প্রতিবাদে কলাগাছ নিয়ে বিক্ষুব্ধ মিছিল-সমাবেশ হয় ইউনিয়ন জুড়ে। এমনকি সেই থেকে থেমে থেমে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল ক্ষুব্ধরা।
বিশ্বস্ত সূত্র মতে, শহীদ পরিবারের সন্তান তারেক শরীফকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না দিয়ে উল্টো তার বাবার খুনের মামলা আসামীকে মনোনয়ন দেয়ায় সৃষ্ট উত্তপ্ত পরিস্থিতি আর তারেক শরীফের আবেদন আমলে নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একটি গোয়েন্দা টিম কালারমারছড়ায় তাৎক্ষণিক জরিপ চালায়। ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি এই জরিপ চালানো হয় বলে সূত্রটি দাবি করেছেন। ওই জরিপে তারেকের পক্ষে নিরঙ্কুশ ইতিবাচক তথ্য পায় জরিপ দল। একই সাথে সেলিম চৌধুরীর নিশ্চিত পরাজয়ের বিষয়টিও উঠে আসে জরিপে। এই বিষয় গুলো আমলে নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন সংক্রান্ত কমিটি সিদ্ধান্ত বদল করে সেলিম চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করেন এবং তারেক শরীফকেই দলের প্রার্থী ঘোষণা করেন।
দলীয় সূত্র মতে, মুক্তিযুদ্ধে কক্সবাজারের প্রথম শহীদ মোহাম্মদ হোসেনের দৌহিত্র ও উত্তর মহেশখালীর জনমানুষের প্রাণের নেতা ওসমান গণি চেয়ারম্যানের পুত্র তারেক শরীফের পক্ষে তৃণ আওয়ামী লীগের সুপারিশ রয়েছে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ১৮ জন সুপারিশকারীর মধ্যে ১৭ জনই তারেককে সুপারিশ করেছেন।
অভিযোগ মতে, ইউনিয়নের সুপারিশকে উপেক্ষা করে উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ সেলিম চৌধুরীকে সুপারিশ করেন। এই সুপারিশের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সেলিম চৌধুরীকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেন। প্রথম আলোর একটি বিশেষ প্রতিবেদনে এই বিষয়টি উঠে আসে।
তারেক শরীফ গতকাল রাতে এই প্রতিবেদককে জানান, সেলিম চৌধুরীর মনোনয়নকে চ্যালেঞ্জ করে মাঠ জরিপ করে পুনরায় প্রার্থী মনোনয়নের আবেদন জানান তারেক শরীফ। এই আবেদন আমলে নিয়ে মাঠ জরিপ করে সেলিম চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল করে তাকেই কালারমারছড়ার ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।
স্থানীয় সূত্র মতে, সেলিম চৌধুরী আওয়ামী লীগের সাবেক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক হলেও বর্তমানে দলের কোন দায়িত্বে নেই। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কার্যক্রমেও নেই তিনি। অন্যদিকে রয়েছে ওসমান গণি চেয়ারম্যান হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ। এসব মিলে একেবারে কোনঠাসা হয়ে পড়েন সেলিম চৌধুরী। এমনকি কোন কালেই জনগণের কাছাকাছি ছিলেন তিনি। তাই তৃণমূল আওয়ামী লীগ তাকে সুপারিশ করেননি। কিন্তু নানা বিরোধপূর্ণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে সেলিম চৌধুরীর পক্ষাবলম্বন করেন উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ।
জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে রাতে মুঠোফোন বন্ধ থাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তারেক শরীফ বলেন, ‘আমরা কক্সবাজারের প্রথম শহীদের পরিবারের সদস্য। কিন্তু নানা কারণে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ আমাদের মূল্যায়ন করছে না। তারই অংশ হিসেবে তারা আমাকে সুপারিশ করেনি। তার প্রতিকার আমরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে চেয়েছি। জাতির জনকের কন্যা আমাদের যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ। সেই সাথে এই নিয়ে কারও উপর কোন ক্ষোভ আমাদের নেই।’


শেয়ার করুন