তাদের হাতে চিকিৎসা সেবা কতটা নিরাপদ থাকবে?

doctor1-400x300সিটিএন ডেস্ক:

সরকার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলছে, মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। অন্যদিকে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে চিকিৎসকসহ কিছু মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ওদিকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষার পর ফলাফল প্রকাশ হয়েছে ইতিমধ্যে।
একদিকে সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভর্তির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ পরীক্ষার ফল বাতিল করে নতুন পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের উপর নির্দয়ভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে পুলিশ। এমনকি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করা শিক্ষার্থীদের থানায় ধরে নিয়েও নির্যাতন চালানো হচ্ছে। – এভাবেই সম্পূর্ণ পরিস্থিতির বর্ণনা করে অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘মেধাহীন এক সমাজের দিকে এগোচ্ছি আমরা। এক পর্যায়ে যার পক্ষে যেটা সম্ভব নয়, তার হাতে সেই দায়িত্ব যাওয়ার ফলে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে আমাদের সমাজ।’
তাঁর মতে, ‘‘১০-১২ বছর আগে ছিল নকল। এখন নকল নেই, আছে প্রশ্ন ফাঁস। শুধু মেডিকেল নয়, সব ধরনের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। এটা একটা বড় লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে। এমনকি চিকিৎসকরাও জড়িয়ে পড়ছেন এই ব্যবসায়। এখন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা যখন চিকিৎসক হবে তখন তাদের হাতে চিকিৎসা সেবা কতটা নিরাপদ থাকবে, তা এক বিরাট প্রশ। আমাদের মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় হচ্ছে। জাতিকে এক সময় এর মাশুল দিতে হবে।’
ঢাকায় বিক্ষোভ করছে মেডিকেলে ভর্তি ইচ্ছুক একদল শিক্ষার্থী। তাদের অভিযোগ ঐ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। বুধবার তাদের কয়েকজনকে পুলিশ পিটিয়েছে। সেই ছবি ঘুরছে ফেসবুক ও টুইটারর মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।
বাংলাদেশে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা থেকে শুরু করে সরকারি চাকরি পাওয়া পর্যন্ত প্রায় সব পর্যায়েই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে আসছে। এর পরিণতি নিয়ে চিন্তিত অনেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম গত বছর প্রথম আলোতে এ বিষয়ে একটি মতামতধর্মী লেখা লিখেছিলেন। তিনি বলেন, ‘ফাঁস হওয়ার ব্যাপারটা যে আমাদের শিক্ষা-দর্শনের গলাতেই ফাঁস পরিয়ে এর দফারফা করছে, তা আমরা খেয়াল করছি না।’
বিএনপি সরকারের আমলে মন্ত্রীর উদ্যোগের কারণে নকল বন্ধ করা গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাইলে বর্তমান সরকারও প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে পারেন। তাঁর এই মতামত টুইটারে শেয়ার করেন ইদ্রিস হোসেইন।
এদিকে, এই সমস্যার সমাধান অসম্ভব কিছু নয় বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। কথকতা শীর্ষক ব্লগে প্রকাশিত তাঁর একটি ব্লগপোস্টে তিনি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে লেখেন। তিনি বলেন, ‘‘এসব সমস্যা সমাধানের অযোগ্য কোনো কিছু না; সারা পৃথিবীতে পরীক্ষার গোপনীয়তা রক্ষার জন্যে বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা চালু আছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা তার সঙ্গে পরিচিত নয় তাও নয়। এ-লেভেল, ও-লেভেল, স্যাট, টোয়েফেল, জিআরই পরীক্ষা দিচ্ছেন।
সেগুলো থেকেই বোঝা যায় যে এটা বাংলাদেশেও সম্ভব। কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো সমাধান চাইছি কিনা।’ অধ্যাপক আলী রীয়াজ তাঁর ব্লগে প্রশ্নটির উত্তরও খোঁজার চেষ্টা করেছেন। কয়েকদিন আগে প্রকাশিত এই ব্লগটি বৃহস্পতিবার আবার নিজের ফেসবুকে শেয়ার করেন তিনি৷ সঙ্গে জুড়ে দেন শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের হামলার কয়েকটি ছবি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতিমধ্যে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগকে গুজব ও ভিত্তিহীন হিসেবে দাবি করেছে।
এর আগেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সরকারি কর্মকর্তা ও মন্ত্রীরা। তাঁদের এই আচরণ সম্পর্কে আনিসুল হক গত বছর লিখেছিলেন, ‘‘আমাদের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারে মন্ত্রী, কর্মকর্তারা একদম মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মতো আচরণ করছেন। তাঁরা ডিনায়াল সিনড্রোমে ভুগছেন। তাঁরা খুব সুন্দর বিশ্বাসযোগ্যভাবে বলছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। এটা কতিপয় দুষ্টুলোকের মিথ্যা অপপ্রচার।’
প্রশ্নপত্র ফাঁসের পরিণাম নিয়ে চিন্তিত মোহাম্মদ মুনির হোসেইন। ইংরেজি দৈনিক অবজারভারে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘এর ফলে জাতি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে দুর্বল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পাবে।’-সূত্র: ডিডাব্লিউ।


শেয়ার করুন